
প্রিন্ট: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০০ এএম
কিশোরীর ফাঁদে ফেলে ছিনতাই করেন ছাত্রলীগ নেতা

নড়াইল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

ছবি- যুগের চিন্তা
১০ মাস আগে নিজের অনুগত এক কিশোরীকে দিয়ে এক প্রবাসীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ডেকে আনেন নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল আহমেদ শ্রাবণ। সঙ্গে ছিলেন চক্রের অন্য সদস্যরা। এরপর সুযোগ বুঝে সেই প্রবাসীকে জিম্মি করে সোনার চেন ও টাকা ছিনতাই করেন তারা। এসময় ভুক্তভোগী প্রবাসীকে ব্ল্যাকমেইলিং করতে ওই কিশোরীর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও করেন শ্রাবণ।
অভিযুক্ত শ্রাবণের বাড়ি নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুরে। তিনি নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। শ্রাবণ নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজার গ্রুপে রাজনীতি করতেন।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত বছরের ২১ জুলাই ভুক্তভোগী সৌদি আরব প্রবাসী মো.মশিউল কবীর হৃদয় (২৪) বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। সম্প্রতি এ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শোভন কুমার নাগ। অভিযোগপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা সজল আহম্মেদ শ্রাবণ (২৬), নড়াইল পৌরসভার বরাশুলার মো. হৃদয় হোসেন (২৩), দুর্গাপুরের বাসিন্দা মো. শান্ত হোসেন (২৭) ও ভওয়াখালীর উত্তরপাড়ার এক কিশোরী (১৬)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে শ্রাবণ, হৃদয় হোসেনসহ তদন্তে পাওয়া দলজিৎপুরের রাকিবুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি শান্ত হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি এক কিশোরী বয়সে শিশু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আলাদা দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। শিশু আইনে তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে।
অভিযোগপত্রে এজাহারে থাকা ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলাটি বর্তমানে নড়াইল সদর আমলি আদালতের বিচারক মেহেদী হাসানের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানি পর্যায়ে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী মশিউল কবীর হৃদয় বলেন, ‘সজল আহমেদ শ্রাবণের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা আমাকে জিম্মি করে মারধর করেন এবং ছিনতাই করেন। আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই, যাতে আর এমন কাজ করার সাহস না পায়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা সজল আহমেদ শ্রাবণ বলেন, ‘এ ঘটনাটি মিথ্যা। চার্জশিটে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। এটা সবাই জানে।’
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলা দায়েরের সময় এজাহারে আমার নাম ছিল না। পরে অভিযোগপত্রে আমাকে আসামি করা হয়েছে। মূল ঘটনা হলো, শ্রাবণসহ অন্য আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা। তখন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তারা ওই ভুক্তভোগী ছেলেকে ধরে এনে রেললাইন সংলগ্ন আমার বাসার সামনে আনে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার বাসার মধ্যে ঢুকিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। আমি তখন বাসায় ঢুকতে বাধা দিলে অন্য আসামিরা দেখে নেওয়ার হুমক দেয়। আমার কোনো দোষ নেই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার এসআই শোভন কুমার নাগ বলেন, ‘চার্জশিটে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চার্জশিটেই বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে।’