
প্রিন্ট: ২৩ জুন ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
মিরপুরে জোড়া খুন : নিহতের মেয়েকে ঘিরে রহস্যের জট!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১১:৩০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় এক রহস্যজনক আগন্তুকের উপস্থিতি ঘিরে সন্দেহ বাড়ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, শুক্রবার (তারিখ অনুযায়ী) সকালে শুধু এক যুবক ওই বাসায় প্রবেশ এবং বের হতে দেখা গেছে। ওই যুবক বাসায় ঢোকার সময় এক পোশাকে এবং বের হওয়ার সময় ভিন্ন পোশাকে ও মাথায় ক্যাপ পরে চেহারা ঢেকে বের হন। পুলিশের তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারী পূর্বপরিচিত কেউ এবং ঘনিষ্ঠ কারও সহযোগিতায় সে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্ল্যাটে জোরপূর্বক প্রবেশের কোনো আলামত নেই, লুটপাটেরও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে পুরো ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা, খুনি হয়তো মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মিস্টির কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি সংগ্রহ করে ভিতরে প্রবেশ করে। হত্যার পর তদন্তে সিআইডির ফরেনসিক দল আলামত সংগ্রহ করেছে। রিপোর্ট হাতে পেলে খুনের ধরন ও খুনির সংখ্যা নিয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে এখন পর্যন্ত তদন্ত একক কোনো ব্যক্তিকেই কেন্দ্র করে এগোচ্ছে। সন্দেহের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন মেয়ে মিস্টি। ডিবি ও পিবিআই তদন্তকারীরা তাকে ও বাসার কেয়ারটেকার রাজুকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিস্টির বয়ানে অসংগতি রয়েছে, যা তাকে সন্দেহভাজন করে তুলেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
মরিয়ম বেগমের স্বামী কাজী আলাউদ্দিন মিরপুর মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, কেয়ারটেকার রাজুকে ডিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মিরপুর জোনের ডিসি মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানিয়েছেন, পারিবারিক কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে এবং দ্রুত রহস্য উদঘাটনের আশা করছেন তারা।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার নার্গিস ভবনের দ্বিতীয় তলার বি-১ ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বেগম ও তার বোন সুফিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরিয়মের পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত এবং সুফিয়ার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মিষ্টি সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটে তালা দেখতে পান এবং ভেতরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে তালা খুলে মাকে ডাইনিং রুমে ও খালাকে বেডরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি পুলিশকে খবর দেন। নিহতদের স্বজন শাহ কামাল জানান, শরবতের গ্লাস টেবিলে ছিল এবং লেবু চিপানো ছিল, যা ইঙ্গিত দেয়, হয়তো পরিচিত কেউ বাসায় এসেছিল।
কেয়ারটেকার রাজু জানিয়েছেন, প্রতিটি ভাড়াটিয়ার কাছে গেটের চাবি থাকে, এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে ওইদিন প্রবেশ বা বের হতে দেখেননি। তবে ফুটেজে ধরা পড়া সেই যুবকই এখন তদন্তের মূল কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
নিহত মরিয়ম বেগম দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন এবং অবসরোত্তরও বাসাটি ছাড়েননি। তিনি বিআইডব্লিউটিএ-তে সহকারী সমন্বয়কারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বড় মেয়ে থাকেন আমেরিকায়। আর ছোট মেয়ে মিস্টির সঙ্গে তিনি একই ফ্ল্যাটে থাকতেন।
পুলিশ বলছে, দ্রুত অভিযুক্তকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক কোন জট বা ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।