
প্রিন্ট: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

ছবি - সংগৃহীত
দেড় মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে ক্লাসে ফিরেছেন কলেজের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ২৮ মে থেকে ক্লাস বর্জন করে আসছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে গত ২১ জুন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন।
ওই কর্মসূচি চলার মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ২২ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে হলত্যাগ করতে বলা হয়। তবে সেদিনই শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা হল ছাড়বেন না; দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করবেন।
এরপর থেকে দেড় মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাফিস রাফিদ শনিবার বলেন, শনিবার থেকে তারা ক্লাসে ফিরেছেন। কোনো বর্ষের ক্লাস সকাল ৮টায়, কারও ক্লাস সকাল ৯টায় শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ থাকায় পড়ালেখার ক্ষতি হয়েছে।
“পড়াশোনার কিছুটা হয়েছে। কিন্তু এটাকে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ হিসেবেই নিচ্ছি। লেখাপড়ার ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা যায়, সেটা শিক্ষকরা করবেন। রুটিন রি-শিডিউল করে বা অন্য কোনোভাবে পড়ানোর বিষয়টা আরেকটা ফাস্টার করেন আরকি! তাছাড়া প্রফের আগে আমরা এক দেড় মাসের ছুটি পাই, হতে পারে আমাদের ওই লিভ স্যাক্রিফাইস করতে হবে। সেটা প্রফ শিডিউলের ওপর নির্ভর করছে।”
আরেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, “দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরছি, ভালো লাগছে। পড়ালেখা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি সবাই।
“এখন আগে যেখানে পরীক্ষার আগে ১০ দিন পড়তাম, এখন ৬-৭ দিন পড়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো উপায় নাই।”
গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক শুক্রবার খুলে দেওয়া হয় হোস্টেল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীরা সবাই ক্লাসে ফিরেছে। এতদিন বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখার কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। কীভাবে সেটা পুষিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”
আন্দোলন শুরুর দুদিন পর ২৩ জুন বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের ৭ সদস্যের দল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন অধ্যক্ষ কামরুল আলম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও তার পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের সঙ্গে তারা বৈঠক করেন।
সেখান থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বিস্তারিত আলাপ প্রয়োজন ছিল সেটা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তবে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা পাননি।
“বাজেট বাস্তবায়নের সময় এবং বিকল্প আবাসনসহ কিছু বিষয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। আমাদের বলেছেন, পরে জানানো হবে। আমরা সবকিছুর জন্য অপেক্ষা করছি। তবে আমরা এখনও ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন পাইনি কীভাবে কি হচ্ছে। এ কারণে এখনও ক্লাসে ফিরছি না। কিন্তু আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় আমরা চাই দ্রুত এটার সমাধান হোক। আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে চাই।”
পরদিন শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ক্লাসে ফিরছেন না। সেদিন থেকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম এবং হোস্টেলগুলো বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে
১. নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের জন্য দ্রুত বাজেট পাস করতে হবে।
২. ছাত্রাবাস নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নতুন একাডেমিক ভবনের জন্য আলাদা বাজেট পাস করতে হবে।
৪. আবাসন ও অ্যাকাডেমিক ভবনের বাজেট পৃথকভাবে অনুমোদন করতে হবে ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. সব প্রকল্প ও কার্যক্রমের অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ঠিক করতে হবে।