শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১২ জনের সিন্ডিকেটে জিম্মি সোনারগাঁ জাদুঘর, পর্যটকদের হয়রানি

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): মাত্র ১২ জনের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সোনারগাঁ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী রাজধানী সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। তাদের নানা অনিয়ম আর খবরদারিতে হরহামেশাই পর্যটকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 


আর এই সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সমস্যা সমাধানের তো কোন বালাই-ই নেই উল্টো সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছেন। ফাউন্ডেশনের গাড়ি পার্কিং, নাগরদোলা, নৌকা ভ্রমণ, মৌসুমী ফল ইজারা, কনফেকশনারী, সেল সেন্টার ইজারার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেটটি নামে-বেনামে দখলে রেখেছে। 


ইজারা নেওয়ার পর কার পার্কিং থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, কার পার্কিংয়ের স্থানে অবৈধ দোকানপাট স্থাপন, পার্কিংয়ের বাহিরে রাস্তার যানবাহন থেকে চাঁদা উত্তোলন, নৌকা ভ্রমণ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ চক্রটি। 


সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা যায়,  লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের প্রধান ফটকের উল্টো দিকে সরকারি জমি দখল করে টাইগার ক্লাব গড়ে তোলা হয়েছে। কার্যত এটি  পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এর সভাপতি নূরে আলমের নেতৃত্বেই বারো জনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলা  হয়েছে। গেলো ১১ বছর ধরে এই সিন্ডিকেটটি ফাউন্ডেশনে যাচ্ছে-তাই করে যাচ্ছে।


গাড়ি পার্কি এর ইজারা তাদের ছাড়া অন্য কেউ নেয়ার দুঃশাহস দেখাতে পারেনি আজ পর্যন্ত। ইজারায় দরপত্র কিনলেও রাজনৈতিক প্রভাব, ভয়ভীতি ও কাগজপত্র সঠিক নয় উল্লেখ করে নানা কৌশলে তা বাতিল করে দেয়া হয়। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এই গাড়ি পার্কিং রেখে পর্যটকদের কাছে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করা হয়। গাড়ি পার্কিয়ে সরকারি নির্ধারিত ফি বাস ৩০০টাকা অথচ তারা আদায় করে ৪০০টাকা, ছোট গাড়ি ২০০টাকার পরিবর্তে রাখা হয় ৩০০টাকা।  


সিন্ডিকেটটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে পার্কিং জোনের ভেতরে অনেক চটপটির দোকান, চায়ের দোকান, আইসক্রীমের দোকান ও কারুপণ্যের দোকান বসিয়ে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। এছাড়া ফাউন্ডেশনের প্রধান ফটকের সামনে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি করার কারণে গোটা এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পর্যটকদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শুধু এই সিন্ডিকেটটির অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে। 


এতো গেলো প্রধান ফটকের কথা। ফাউন্ডেশনের অভ্যন্তরে লেকে বেড়ানোর নৌকা প্রভাব খাটিয়ে ইজারার মাধ্যমে গত এক যুগ ধরে নিজেদের দখলে রেখেছে তারা। লেকে প্লাস্টিকের নৌকার অনুমোদন না থাকলেও এ সিন্ডিকেট প্রভাব খাটিয়ে কাঠের নৌকার পাশাপাশি ৮টি প্লাস্টিকের নৌকা ব্যবহার করছে। এবং তা থেকে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। 


নাগরদোলা, চড়কার নিয়ন্ত্রণও এই সিন্ডিকেটের হাতে। ফাউন্ডেশনের ভেতরকার মৌসুমী ফলমূল প্রভাব খাটিয়ে ও কৌশলে ইজারার নিয়ন্ত্রণেও এই সিন্ডিকেট। তাদের দৌরাত্বে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। 


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিতভাবে ১৩টি কনফেকশনারি দোকান বসানো হয়েছে। এসবের সাথে ফাউন্ডেশনেরও কিছু লোক জড়িত থাকায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 


ভুক্তভোগী পর্যটক মইন আল হোসেন জানান, গত রোববার দুপুরে তার ঘনিষ্ট অনেক লোকজন ৩টি যাত্রীবাহী বাসযোগে ফাউন্ডেশনে বেড়াতে আসেন। এসময় বাস ৩টি ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট পার্কিংয়ে রাখা হয়। পরে পার্কিংয়ের ভাড়া বাবদ প্রতিটি গাড়ি থেকে ৪০০টাকা করে আদায় করা হয়। 


এসময় মঈন আল হোসেন সরকার নির্ধারিত ৩০০টাকার স্থলে অতিরিক্ত ১০০টাকা ভাড়া বেশী নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সিন্ডিকেটের অন্যতম ইজারাদার কৃষ্ণ চন্দ্র সাহার লোকজন তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 


এ ব্যাপারে সিন্ডিকেটের প্রধান টাইগার ক্লাবের সভাপতি নুরে আলম ও কার পাকিংয়ের ইজারাদার কৃষ্ণ চন্দ্র সাহা  বলেন, আমরা গাড়ী পাকিংয়ের জন্য পার্কিং চার্জ বাবদ ও নৌকা ভ্রমণে অতিরিক্ত টাকা কারো কাছ থেকে জোড়পূর্বক আদায় করিনি। 


তাছাড়া কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পাকিং, নৌকা ও মৌসুমী ফল বিভিন্ন সময় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ইজারায় অংশগ্রহণ করে তা পেয়ে থাকি। আমরা কখনও কারো সাথে প্রভাব খাটায়নি বা কারো সাথে দূরব্যবহার করিনি। আমার সাথে ১২ জন না ১৪ জন সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 


উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, কেউ যদি দলের নাম ভাঙিয়ে কোন অনিয়ম দুর্নীতি করে তার দায়ভার দল কখনও নিবে না।


লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, গাড়ি পার্কিং নৌকা ভ্রমণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। কাঠের নৌকার পরিবর্তে অতিরিক্ত প্লাষ্ট্রিকের নৌকা ব্যবহারের ব্যাপারেও কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। 


এছাড়াও কার পাকিংয়ের স্থানে অবৈধ দোকানপাঠ স্থাপনের বিষয়েও কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রতিটি স্পটে ভাড়ার তালিকা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর