মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

নাইটগার্ডকে তুলে নিল ভিকি !

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার : মিনহাজুল ইসলাম ভিকি। কোন অঘটন ঘটানোর পরই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের একজন এমপি’র নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। ওই এমপি পুত্রের সম্বন্ধি তিনি। একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনায় আসে হাফপ্যান্ট ভিকি।


শনিবারও মাসদাইরস্থ শোভন গার্মেন্টসের একজন সিকিউরিটি গার্ডকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সে। নাইডগার্ডকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিক সিদ্দিকুর রহমান ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ ভিকির বাড়ি থেকে ভিকিকে আটক ও সিকিউরিটি গার্ড ইউনুসকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।


পরে ভিকির বাবা ফয়েজ উদ্দিন লাভলু ও গার্মেন্টস মালিক সিদ্দিকুর রহমান ফতুল্লা মডেল থানার ওসির রুমে বসে শনিবার বিকেলে বিষয়টি উভয়ের মধ্যে মিমাংসা করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কিভাবে মিমাংসা হল সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি কোন পক্ষ।


মাসদাইরের ফয়েজ উদ্দিন লাভলু তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সাথে। সেই সুবাদে অয়ন ওসমানের সম্বন্ধি হন ভিকি। ওসমান পরিবারে বোনকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই মাসদাইরের ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর ছেলে ভিকি হয়ে উঠে বেপরোয়া। এলাকায় নিজেই একটি বাহিনী তৈরী করে ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেছেন একাধিকবার।


অপরদিকে নিতাইগঞ্জে সুতা ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই সাথে গেল বছর একজন সিএনজি চালককে মারপিটের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছিল। ঐ মামলায় সে গ্রেফতার হয়েছিল ডিবি পুলিশের হাতে।


অপরদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে মাসদাইর এলাকায় কোমড়ে পিস্তুল নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়েছিলেন এমন ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি বেশ কিছু নিউজ পোর্টালে নিউজ ভাইরাল হয়। কিন্তু এরপরও দমে যায়নি সাংসদ শামীম ওসমানের পুত্রা মিনহাজুল ইসলাম ভিকি।


মাসদাইরের একটি সূত্র জানায়,ভিকি ও তার লোকজন শোভন গার্মেন্টস এর নাইট গার্ডকে অপহরণ করে শনিবার সকালের দিকে। বিষয়টি মালিক সিদ্দিকুর রহমানের কানে যায়। এরপর তিনি ভিকিকে নাইটগার্ড ইউনুসকে ফিরিয়ে দিতে বলে। কিন্তু ভিকি ইউনুসকে ফিরিয়ে দেবে না বলে তাকে সাফ জানিয়ে দেন।

এসময় ভিকি গার্মেন্টস মালিক সিদ্দিকের সাথে অশোভন আচরণ করেন। শনিবার দুপুরের দিকে সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় ভিকিকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিকির বাড়িতে গিয়ে নাইটগার্ড ইউনুসকে উদ্ধার করে।


এসময় ভিকিকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। থানা পুলিশ যখন তাকে থানায় নিয়ে আসছিল তখন ভিকি তার বাড়ির একজন কাজের মেয়েকেও সাথে করে থানায় নিয়ে আসে। বিকেলে থানায় উপস্থিত হয় ভিকির বাবা ফয়েজ উদ্দিন লাভলু ও সিদ্দিকুর রহমান।

ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আসলাম হোসেনকে অভিযোগের বাদী জানান অভিযুক্ত ভিকির সাথে তার আপোষ হয়ে গেছে। একটি সূত্র জানায়,থানায় যখন ভিকিকে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন সে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট(হাফপ্যান্ট) পরিহিত ছিল। থানা থেকে বের হওয়ার পর গেটের সামনে লাভলু তার ছেলেকে হাফপ্যন্ট পরে থাকার জন্যও ভৎর্সনা করেছেন।


ওসি আসলাম যখন ভিকিকে নাইটগার্ডকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন তখন সে জানায়, তার বাড়ির কাজের মেয়েকে শোভন গার্মেন্টস এর নাইটগার্ড উত্যাক্ত করে। কাজের মেয়েটি তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পর সে ইউনুসকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

 

নাইট গার্ডকে অপহরণের অভিযোগ তুলে গার্মেন্টস মালিক সিদ্দিকুর রহমান থানায় অভিযোগ দিলেও পরে তিনি তার করা অভিযোগ থেকে সরে আসেন।


তিনি ওসির রুমে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে সিদ্দিকের চুপসে যাওয়াকে মাসদাইরবাসী ভিন্ন চোখে দেখছে। তাদের দাবী, একমাত্র ওসমান পরিবারের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে লাভলুর ছেলে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে পাড় পেয়ে যায় ভিকি। নতুবা এলাকাবাসীই ভিকিকে প্রতিরোধ করতো।


সূত্র জানায়,গেল বছরের ৩১ আগষ্ট  চাষাঢ়ার মোড়ে একজন সিএনজি চালককে মারপিট ও গাড়ি ভাংচূড়ের ঘটনায় মিনহাজ উদ্দিন ভিকিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে টানবাজার থেকে সুতা ছিনতাইয়েরও অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।


এর আগে মাসাদাইরের কেতাব নগরে গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামাতে গিয়ে ঝুটের স্লিপে ভিকি নিজেকে ভিকি ওসমান বলে পরিচয় দিয়েছিল বলেও এলাকায় চাউর হয়েছিল। এই গুনধর ওসমান পরিবারের সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মকান্ডে। তাকে নিয়ে বিব্রত ওসমান পরিবার। সাংসদ শামীম ওসমান ভিকিকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলেও একের পর এক ভিকি নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।


অপরদিকে, একই বছর ২৯ মার্চ জামতলায় এক প্রবাসীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া ১৯ জুন পাটের বস্তা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় সদর থানায় ।


পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার হেফাজত থেকে পাটের বস্তা উদ্ধার করতে পারলেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এছাড়াও গাবতলীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পিচ্চি মিজানকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

ভিকিকে আটক ও ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আসলাম হোসেন বলেন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিকিকে আটক এবং ভিকটিম ইউনুসকে উদ্ধার করে  নিয়ে আসা হয়।


পরে অভিযোগের বাদী থানায় এসে জানান তাদের(বাদী বিবাদী) মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয়ে গেছে। তাই তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভিকির বাড়ির একজন কাজের মেয়েকে নাইটগার্ড ইউনুস উত্যাক্ত করতো।


তাই  ভিকি ঐ নাইটগার্ডকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। বাদী এবং বিবাদীর সাথে যেহেতু আপোষ হয়ে গেছে সেহেতু পুলিশের কিছু করার থাকে না।  

 

এই বিভাগের আরো খবর