শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হাজী কলিমুল্লাহ জামে মসজিদ হবে একটি আধুনিক মসজিদ

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

ইমতিয়াজ আহমেদ (যুগের চিন্তা ২৪) : টিভি স্ক্রীনে দোতলা, তিনতলা ও চারতলার মুসল্লিরাও ঈমাম সাহেবের বয়ান  দেখতে ও শুনতে পারবেন।  দোতলা পর্যন্ত থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। মসজিদে ঢুকলেই অটোমেটিক একজন মুসল্লির  মোবাইল জ্যাম হয়ে যাবে। থাকছে সিসি ক্যামেরা।  দোতালা পর্যন্ত টাইলস বসানো হয়েছে। সত্যিই আমুল বদলে যাচ্ছে হাজী কলিমুল্লাহ জামে মসজিদ। 

 

শহরের  দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার পুরনো মসজিদটি এখন অত্যাধুনিক মসজিদে রূপ নিয়েছে। যুগের চাহিদা ও মুসল্লিদের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করার পর চলছে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও আধুনিকায়নের কাজ। এলাকাবাসী ও সাধারণ মুসল্লিগণ দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর পর মসজিদের উন্নয়নে খুবই খুশি। তবে নানান অজুহাত তুলে মসজিদের উন্নয়ন কাজে বিঘœ ঘটাতে মাঠে নেমেছিল একটি চক্র। 

 

মুসল্লিদের আপত্তির মুখে এই চক্রটি উন্নয়ন কমিটি থেকে বাদ পড়েছে। তরুণ সমাজের পরিশ্রমে হাজী কলিমুল্লাহ জামে মসজিদ এখন শহরের অন্যতম একটি আধুনিক মসজিদ। চারতলার কাজ সম্পন্ন হলে এই মসজিদে একসাথে ১২৮০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানালেন উন্নয়ন কমিটির প্রধান উদ্দোক্তা রাফিউদ্দিন রিয়াদ,  মোজাফ্ফর মাহমুদ গিলান ও রায়হান আহমেদ ভুঁইয়া। 

 

সম্পূর্ন কাজ শেষ হলে এই মসজিদটি নারায়ণগঞ্জ শহরের আধুনিক মসজিদের রোল মডেল হয়ে থাকবে বলে ও তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মসজিদটির উন্নয়নে এ পর্যন্ত ৮৫ লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে। বাকী কাজ করতে প্রয়োজন আরো ৫০ লাখ টাকা। মসজিদের উন্নয়নে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করা হয়েছে উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে। 

 

মসজিদের আধুনিকায়ন দেখে এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছে, তরুণসমাজ আমাদের মুগ্ধ করে দিয়েছে। এতদিন শুধু দলাদলি ও হিংসা বিদ্বেষ এর কথা শোনা যেত। উন্নয়ন কমিটির পুরনো নেতারা শুধু হায় হুতাশ করতেন। তাদের কাছে শুধু না না শব্দটি বেশি শোনা যেত। কিন্তু পুরনো নেতাদের হাত থেকে আল্লাহপাক মসজিদটি রক্ষা করেছেন। এটা মহান আল্লাহ পাকের মেহের বানী। আজ মসজিদে ঢুকলে মনটা আনন্দে ভরে যায়। 

 

মসজিদে চকচকে দামী টাইলস, এসি লাগানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকছে। ভেতরে বিদেশী মসজিদের মত লাগে। নতুন ঈমাম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মসজিদে মুসল্লির সংখ্যাও বাড়ছে। চারদিক কত ঝকঝকে ও তকতকে। পুরনো নেতারা মসজিদের দিকে তাকিয়ে ‘থ’ হয়ে যান। রিয়াদ, গিলান ও রায়হানের নেতৃত্বে তরুণসমাজ এলাকাবাসীকে চমকে দিয়েছে। ওরা নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করে আল্লাহর ঘরের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মসজিদের ফান্ড যোগার করছে। 

 

এলাকার সাধারণ মুসল্লিরা জানান, আমরা মসজিদের উন্নয়ন কাজে সন্তুষ্ট। দ্রুত কাজ হচ্ছে। প্রতিটি কাজের দেখভাল করা হয়। আয় ব্যায়ের হিসাব দেয়া হয় প্রতি সপ্তাহে। সকল কাজে স্বচ্ছতা আছে। মসজিদের একটি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। এটি জয়েন্ট একাউন্ট। দ্রুত মসজিদের উন্নয়ন কাজ হওয়ায় পূর্বের ব্যর্থ কমিটির লোকজন হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে। 

 

এদের মধ্যে পঞ্চায়েত কমিটির দু’জন রাস্তার জন্য যায়গা ছাড়ার একটি দাবি তুলেছিল-যা এলাকাবাসী সমর্থন করেনি। এ ধরনের অযৌক্তিক কথা বলে প্রায় জুমআ বারে ব্যর্থ কমিটির লোকজন পড়েন মুসল্লিদের রোষানলে। তারা নানাভাবে মসজিদের বর্তমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও মসজিদের উন্নয়ন কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।  

 

জানাগেছে, ১৯৬৭ সালে স্থাপনের পর ১৯৭২ সালে ওয়াকফা হয় দেওভোগ পাক্কা রোডের হাজী কলিমুল্লাহ জামে মসজিদের। দীর্ঘ দিন ভারপ্রাপ্ত মোতোয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান মুরাদ। তিনি মারা যাওয়ার পর এ দায়িত্ব পালন করছেন অসুস্থ হাবিবুর রহমান। মসজিদের উন্নয়নের জন্য ৭১ সদস্যের একটি উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল ৬ বছর আগে। 

 

৬ বছরে ১৬ টি মিটিং করা ছাড়া এই উন্নয়ন কমিটি করতে পারেনি কিছুই। ১০ টি মিটিংয়ের পর উন্নয়ন কমিটি ভেঙ্গে যায়। মুসল্লিদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারী ভেঙ্গে ফেলা হয় মসজিদের পুরনো ভবনটি। ২৮ মার্চ নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও ভবন নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হলে এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করে। বর্তমান তরুণ সমাজ ৬ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে এক মাসের মধ্যে ২টি ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে তাক লাগিয়ে দেয় মুসল্লিদেরকে। বর্তমানে চারতলা ভবন হয়েছে। 


 

এই বিভাগের আরো খবর