শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হতদরিদ্রের ঘর কোটিপতির নামে বরাদ্দ

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :  হতদরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দুর্যোগকালীন বাড়ি নির্মাণ সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটিপতির নামে বাড়ি বরাদ্দ দিলো রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়।


এতে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত দরিদ্র লোকজন। পরে রূপগঞ্জ ইউএনও মমতাজ বেগমের নজরে এলে ওই বরাদ্দটি তাৎক্ষণিক বাতিল করে দেন তিনি।  ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তারাবো পৌরসভার সুলতানবাগ এলাকায়।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৯ অর্থ বছরে রূপগঞ্জে ২ শতাধিক হতদরিদ্রের নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বরাদ্দের একটি পায় তারাবো পৌরসভার সুলতানবাগ এলাকার বাসিন্দা সুবহান সরকারের ছেলে মাসুম সরকার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তারাবো পৌরসভায় মাসুম সরকারের মালিকানায় রয়েছে ২টি দ্বিতল ভবন এবং অপর তিনটি পাকা বাড়ি। এসব বাড়িতে ভাড়াটিয়ার পরিবারের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তাদের কাছ থেকে মাসুম সরকারের মাসিক আয় প্রায় দুই লাখের বেশি।


অন্যদিকে তাদের জমি জমা রয়েছে অঢেল। এরপরেও একটি বাড়ি একটি খামার ও দুর্যোগকালীন বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই মাসুম সরকারের নামেই বরাদ্দ হয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি আধাপাকা সরকারি বাড়ি। বাড়ি নির্মাণ কাজ প্রায় অর্ধেক  করে ফেলেছেন এই প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদার।


বিষয়টি জানাজানি হলে সুলতান বাগ এলাকার স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে মাসুম সরকার ও এই বাড়ি বরাদ্দের তদবিরকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। তবে তাদের দাবি শত শত হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে কোটিপতির নামে এ বরাদ্দ যারা দিয়েছেন তারা অমানবিক ও লুটেরা বলে মন্তব্য করেন তারা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, মাসুম সরকার একজন বিত্তশালী লোক। তার নামে সরকারী বাড়ি কেমন তা জনগণ জানতে চায়। ওই শিক্ষক দাবি করেন, মাসুম সরকার বাড়ি ভাড়া দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে সরকারি এ বাড়িটিও স্থানীয় ওয়ার্ড যুব মহিলালীগ  নেত্রী  রুমা বেগমের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। ওই ভাড়া চুক্তিতেই সরকারি বরাদ্দ তদবির করে নিয়েছেন।


এদিকে স্থানীয়রা বিষয়টি রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিক জানান। পরে ইউএনও মমতাজ বেগম  নিজ উদ্যোগে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে এর সত্যতা খুঁজে পান। বরাদ্দ পাওয়ার সময়  প্রাথমিক তদন্তে মাসুম সরকার ও তার সহযোগিরা ভুল তথ্য দেয়ায় এমন বরাদ্দ পেয়ে যায় বলে নিশ্চিত হন ইউএনও।


 অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর, মহিলা নেত্রীর যোগসাজসে  প্রকৃত দরিদ্রকে বঞ্চিত করে কোটিপতিকে বাড়ি পাইয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন তারাবো পৌরসভা যুব মহিলালীগ নেত্রী পারুল আক্তার।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, সুলতানবাগ ৮ নং ওয়ার্ড যুব মহিলালীগ নেত্রী রুমা বেগম একজন হতদরিদ্র লোক। তাকে বাড়িটি পাইয়ে দিতে মাসুম সরকারের মাধ্যমে তার জমিতেই বাড়ি করার আবেদন করা হয়েছে ।

বাড়ি নির্মাণ হলে মাসুম সরকারের নামে হলেও সেখানে রুমা বেগম তার পরিবারের লোকজন নিয়ে বসবাস করবেন। এ ক্ষেত্রে মাসিক ভাড়া নয়। এককালীন কিছু খরচ দিতে হবে রুমাকে। মুলত রুমার জন্যই বাড়িটি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 
তারাবো পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বলেন, যুব মহিলা লীগের একজন হতদরিদ্র রুমা। তার নামে বাড়ি পেতে আবেদন করলে তার জমি না থাকায় আবেদন বাতিল হয়। পরে মাসুম সরকারের জমিতে তা করা হয়। এতে দোষের কি আছে প্রশ্ন করেন তিনি।


এ বিষয়ে হতদরিদ্রদের ঘর বরাদ্দ পাওয়া মাসুম সরকার বলেন, আমার নামে বরাদ্দ হলেও তা আমার জন্য নয়, আমি সরকারি বাড়ি নেইনি। স্থানীয়দের পরামর্শে তা করেছি। রুমা নামের একজনকে তা ব্যবহার করতে দেয়া হবে।


উপজেলায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের পরিচালক ইফতেয়ার উদ্দিন ইমন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে । আমি সেখানে তদন্ত করেছি মাত্র। তবে মাসুম সরকারের বিষয়ে এমন তথ্য জানা ছিলোনা।

এবিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম শোভন বলেন, তদন্তের সময় হয়তো  ভুল তথ্য দিয়েছে স্থানীয়রা। ভাঙাচোরা ঘর দেখানো হয়েছে। ফলে ভুল বুঝিয়ে এ প্রকল্পটি নিয়েছে কি-না তা যাচাই করা হবে।   


রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পারার পরপরই আমি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত  করে দেখি। বরাদ্দ পাওয়া মাসুম সরকারের নাম ব্যবহার করে তার প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে।

পরে যখন পুরো বিষয়টি জানলাম সে হতদরিদ্র না তাৎক্ষণিক ওই বরাদ্দটি বাতিল করে স্থানীয় প্রকৃত হতদরিদ্রের নামে ওই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

 

এই বিভাগের আরো খবর