শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বাধীনতা ৪৭ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী হতে হয়, আক্ষেপ

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯  

সোনারগাঁ (যুগের চিন্তা ২৪) : স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক মুক্তিযোদ্ধা। অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার এ হয়রানী করা হচ্ছে। 

 

মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কোন অন্যায় দেখলে সহ্য হয় না। অন্যয়ের প্রতিবাদ হিসেবে জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকায় পিরামিডে অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাকে এ হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। 

 

রাজমনি ফ্লিম সিটি নামের একটি পেডে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজ্জামেল হকের কাছে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি-না যাচাই বাছাইয়ের আবেদন করেন পিরামিডের মালিক আহসান উল্লাহ মনি। পরে গত ১১ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমাজ সেবা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক তিনি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা যায়। 

 

মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে আহসান উল্লাহ মনি পিরামিড নির্মাণ করেন। পিরামিড নির্মাণের পর পাশ^বর্তী একটি এক তলা ভবনের ২০-২৫টি ছোট ছোট ঘর তৈরি করে মালিকের অজান্তে ম্যানেজার উজ্জলসহ কর্মচারীরা টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে। সম্প্রতি ওই পিরামিড থেকে ৭জনকে আটক করে পুলিশ। 

 

পিরামিডের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে স্থানীয় চেয়ারম্যান হামীম শিকদার শিপলু উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন। এ বিষয়টি এলাকাবাসীর পক্ষে গণস্বাক্ষর নিয়ে  আমি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সোনারগাঁ থানার ওসির কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করি। 

 

ওই অভিযোগের পর আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আহসান উল্লাহ মনি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে হয়রানি করছে। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি-না এ বিষয়ে তদন্তের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। আমি ৭১ সালে বিমান বাহিনীতে কর্মরত থাকাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়েছি। প্রথম ও সর্বশেষ গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। 

 

তিনি আরো জানান, ৩নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার ও ইন্ডিয়ান আর্মি কমান্ডে মেজর শফিউল্লাহর অধীনে মাধবপুর সিঙ্গার বিল এলাকায় তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। ওই সময়ে তিনি বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ৪ ডিসেম্বর পুরোদমে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩ নং সেক্টরে মাধবপুর সিঙ্গারবিল এলাকায় তিনি অবস্থান করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে  এসএলআরটি বঙ্কারের পাশে একটি বাড়ির বেড়ায় হেলান দেওয়া ছিল। আমি বঙ্কারটি বড় করতে ছিলাম। পাক হানাদার বাহিনীর ছোড়া একটি গোলা আমাদের বঙ্কারের পাশে এসে পড়ে। পরে আমার রাইফেলের নলটি গোলার স্পিন্টারে কেটে যায়। এসময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। আমি অক্ষত থাকি। 

 

আমাদের বিমান পাক সেনাদের উপর আক্রমণ শুরু করলে বেশ কয়েকজন পাক সেনা মারা যান। ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে ভারতীয় সেনাদের অধীনে বিএএফ তেঁজগাঁও একাউন্ট অফিসে রির্পোট করিলে ৫০ টাকার বিনিময়ে দু’মাস ছুটি নিয়ে নেই। যুদ্ধ পরবর্তীকালে যথা সময়ে পুনরায় চাকুরিতে যোগদান করে চাকুরি করতে থাকি।

 

সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। তার কাগজপত্রে দেখা যায় তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে মেজর শফিউল্লাহর অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। 

 

আহসানউল্লাহ মনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়। আমি পিরামিড তৈরি করে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের বিনিময়ে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। সঠিক তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। 

 

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিবুল ইসলাম খাঁন বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত চলছে। সোনারগাঁ উপজেলা সবাজ সেবা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

এই বিভাগের আরো খবর