শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সেলিম ওসমান ও পারভীন ওসমানের বক্তব্য টক অব দ্যা টাউন

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর-বন্দর) আসনের  প্রয়াত জনপ্রিয় সাংসদ নাসিম নাসিম ওসমানের সহধর্মিণী পারভীন ওসমানকে নিয়ে সেলিম ওসমানের বক্তব্যে পুরো নগরীর জনমুখে ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলেছে। মনোনয়নয়কে ঘিরে নিজের পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিরূপ মন্তব্যে নানা প্রশ্নের উদ্রেগ হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এমন সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বন্দরের শাহী মসজিদ এলাকায় ৯ নম্বর বন্দর কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ৪র্থ তলা ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান পারভীন ওসমানের সমালোচনা করে বলেন, ‘এতো লোভ কেন? এতো লোভ ভালো না। এখন নির্বাচন নিয়ে এতো মাতামাতি কেন?

জনগণই নির্ধারণ করবে কে আগামী সংসদ সদস্য হবে। আরে বাবারে বাবা, আমার বাড়ির বউ মাথার মধ্যে টিপ লাগাইয়া আমার ভাইয়ের গোরস্থানে জিয়ারত করতে চইলা যান। আরে আমার ভাইয়ে মরছে কিনা সেইটাও সন্দেহ লাগে ওনার কাপড়- চোপড়,  বেশ-বাশ দেখলে। তার পড়নের পোশাক দেখলে।’

সেলিম ওসমান আরো বলেন, ‘অনেকেই খালি চেয়ারে বসতে চান। সকলেরই চেয়ারে বসার ধান্দা।  চেয়ার আল্লাহর দান। বললেই চেয়ারে বসা যায় না। নেতা সাজার জন্য আমরা অনেক সময় বঞ্চিত হয়েছি। নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মেরেছি। নিজেরাই খাল কেটে কুমির এনেছি। এই কারণে আমাদের আদমজী, চিত্তরঞ্জন নাই। এই লোভ করলে কোন লাভ হবে না। দল থাকতেই পারে, ইলেকশন হতেই পারে।

ধরেন, বন্দর আর কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফুটবল খেলা। আগেই বলতে পারবেন কে জিতবে? মনে মনে একটা সাপোর্ট করেন ঠিকই কিন্তু কেউ বলতে পারবেন না কে জিতবে। খেলার পরই দেখা যাবে কে জিতবে।’

অপরদিকে, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত জনপ্রিয় সাংসদ নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী যুগের চিন্তা ২৪’কে জানিয়েছিলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে আমি কারো বিপক্ষে বিরুদ্ধাচরণ করতে চাই না। আমার কথাগুলো আমি বলবো, অন্যান্য প্রার্থীরা তাদের কথাগুলো বলবে। আমার প্রচারণার প্রথম বিষয় হলো আমি নির্বাচন করবো।

আমাকে আমার পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মাঠে নামবো, আমি কাজ করবো।’ সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা করবো। এরপর কর্মপরিকল্পনা সেট করবো। সেই অনুসারে বন্দর ও সদরে জাতীয় পার্টির প্রচারণা নিয়ে কাজ করার জন্য নামবো। প্রচারণায় আমি প্রতিদিনই বের হবো।’

প্রসঙ্গত, ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির  তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের এক যৌথ সভায় বিপুল নেতার্মীদের নিয়ে যোগ দেন  নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান । জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন স্টেজে উঠছেন, তখন পারভীন ওসমানকে সরাসরি দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন- ‘সময় খুব অল্প, এলাকায় কাজ করো। ওই অনুষ্ঠানে পারভীন ওসমানকে  স্টেজে ডেকে নিয়ে বসিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

এরপর ১২  সেপ্টেম্বর রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে তাঁর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সাথে  দেখা করেন পারভীন ওসমান। এ সময় এরশাদ পারভীন ওসমানের কাছ থেকে তাঁর পারিবারিক খোঁজ-খবর সহ রাজনৈতিক খোঁজ-খবর নেন।আলোচনায় শুরুতেই প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলোর স্মৃতিচারণ করেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির অবস্থান সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেন এরশাদ। আলোচনার এক পর্যায়ে পারভীন ওসমানকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করার দিক নির্দেশনা দেন।

পরবর্তীতে, ১৩ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক কাজ শুরু করার প্রথম দিনে পারভীন ওসমানকে আলীরটেক, গোগনগর ও বন্দর এলাকার যুব সমাজ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাসিম ওসামনের কবর জিয়ারতের মাধ্যম পারভীন ওসমান নির্বাচনী মাঠে নামার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন।

এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন একমাত্র পুত্র আজমেরী ওসমান এবং জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। ওই সময়ে পারভীন ওসমান সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে নির্বাচনে নামতে বলেছেন। একই সাথে আশ্বস্ত করেছেন, নাসিম ওসমানের এই আসন আমাকেই দেবেন।’

এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রসমাজের নেতৃবৃন্দ পারভীন ওসমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করায় ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায় জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ১৯৮৪ সাল, ১৯৮৮ সালের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসিম ওসমান। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমান তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে হঠাৎ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল।

এরপর উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে পারভীন ওসমানকে প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী করার কথা ভাবা হয়। শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তা শেষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছোট ভাই একেএম সেলিম ওসমান। সে নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আকরামকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন সেলিম ওসমান। 

এদিকে একই দিনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন এবং নির্বাচনে প্রার্র্থীতা করা নিয়ে সেলিম ওসমান ও পারভীন ওসমানের বক্তব্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরী হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেলিম ওসমানের বক্তব্য ছিলো আক্রমনাত্মক অপরদিকে পারভীন ওসমানের বক্তব্য ছিলো মার্জিত এবং নমনীয়।
 

এই বিভাগের আরো খবর