মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় চোরাই জ্বালানী তেলের রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  

সিদ্ধিরগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে চোরাই জ্বালানী তেলের রমরমা বাণিজ্য। সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং একটি আবাসিক এলাকা। এখানে প্রবাসীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন বসবাস করছে। অথচ গত তিন বছর ধরে প্রকাশ্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে চোরাই তেলের ব্যবসা চলে আসলেও কারো মাথা ব্যাথা নেই।

 

এতে এলাকাবাসী অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা করছেন। চোরাই তেলের ব্যবসা বন্ধ না হওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে দিন দিন এলাকাবাসী ফুসে উঠছেন। যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাঙ্খিত ঘটনা।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ৩ বছর ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং আটি ছাপাখানার মোড় এলাকায় আলাল নামে এক ব্যক্তি চোরাই ফার্নেস তেলের ব্যবসা খুলে বসেছেন। জনৈক দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে টিনের ঘেরা দিয়ে ও পর্দা টাঙ্গিয়ে চলছে চোরাই তেলের এ রমরমা ব্যবসা। 

 

সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত পদ্মা অয়েল কোম্পানী, মেঘনা পেট্টোলিয়াম ডিপো ও ফতুল্লার যমুনা ওয়েল কোম্পানী থেকে ট্যাঙ্কলরিতে করে তেল এনে হাউজে রাখা হয়। খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত হাউজগুলো নিরাপদ নয়। পরে এগুলোর সঙ্গে কম মূল্যের তেল মিশিয়ে তেলগুলো বেশী দামে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ধরণের কারখানা এ তেলের প্রধান ক্রেতা। 

 

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ডিপো থেকে জ্বালানী তেল ভর্তি ট্যাঙ্কলরি উক্ত চোরা তেলের আস্তানায় এনে অসাধু ট্যাঙ্কলরী চালকরা তেল চুরি করে আবার সমপরিমাণ পানি ট্যাঙ্কলরীতে ভর্তি করে কিংবা কম মূল্যের তেল ভরে নির্দিষ্ট স্থানে জ্বালানী তেল সরবরাহ করছে। এতে প্রচারিত হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসা ও বৈধ জ্বালানী তেল ক্রেতারা। 

 

চোরাই তেল ব্যবসায়ী আলাল এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য এ ব্যবসায় নজরুল ইসলাম ওরফে ছোট নজরুল নামে যুবলীগের এক নেতাকে পার্টনার শেয়ার হেসেবে নিয়েছেন। খবর নিয়ে জানা যায়, আলালের চোরাই তেলের ট্যাঙ্কলরির কারণে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ের আরসিসি ঢালাই সড়কটি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। 

 

এ ছাড়াও ট্যাঙ্কলরিগুলো নাসিকের রাস্তা দিয়ে চলাচলের কারণে রাস্তার দীর্ঘস্থায়ীত্বতা কমে আসছে। তাছাড়া আবাসিক এলাকার এ ট্যাঙ্কলরি যাতায়াতের কারণে অধিকাংশ সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে এ চোরাই তেলের আস্তানার কোন অনুমোদন নেই। নেই কোন পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রও। 

 

এলাকাবাসী জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো খোলা আকাশের নিচে আবাসিক এলাকায় চোরাই তেলের এমন ব্যবসার অনুমোদন কখনই দিবে বলে আমাদের ধারণা নেই। তবুও চলছে এ চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা।

 

এলাকাবাসী জানায়, চোরাই তেলের ব্যবসার পাশাপাশি এ আস্তানায় প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা। অনেক সময় রাতে মধ্যপ অবস্থায় হেলেদুলে যুবকদের এ আস্তান থেকে বের হতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

 

তারা জানায়, আবাসিক এলাকায় বিশালাকৃতি চোরাই তেলের ব্যবসার কারণে তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভূগছেন। যে কোন সময় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হওয়ার আতঙ্কে ভূগছেন তারা। কেননা অগ্নিকান্ড ঘটলে অগ্নিনির্বাপকের মতো কোন জিনিসপত্র তাদের কাছে নেই।

 

 এলাকার একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তিকে সুবিধা আদায়ের জন্য প্রতিমাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে এ আস্তানায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী আরো জানায়, এ এলাকার চোরাই তেলের আস্তানাগুলোতে ইতোপূর্বে র‌্যাব-১১ সদস্যরা অভিযান চালিয়েছিল। তবুও বন্ধ হয়নি চোরাই তেলের ব্যবসা। এলাকাবাসী আবারো এ চোরাই তেলের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করার জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে কথা হলে চোরাই তেল ব্যবসায়ী আলাল মিয়া বলেন, এ ব্যবসা আমি একা করছি না আমার তো আরো অনেকেই এ ব্যবসা করে আসছে। 

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুল ফারুক জানান, চোরাই তেলের আস্তানার চুরির ব্যাপারটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

এই বিভাগের আরো খবর