শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সন্তানসহ শহীদমিনারে আত্মহত্যা করবো : নিহত সেলিমের স্ত্রী

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : টাকা ফেরত চাওয়াতে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা ঝুট ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান চৌধুরী ওরফে সেলিম চৌধুরীর (৫২) খুনিদের বিচার না হলে সন্তানসহ শহীদমিনারে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা। 

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে খুনীদের ফাঁসির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এ হুমকি দেন। 

রেহানা বলেন, আমি আর আমার সন্তানকে যদি আত্মহত্যা করতে হয় তবে এরজন্য দায়ী থাকবে প্রশাসন। আমার স্বামীর খুনিরা যেন কোনো ভাবে বের হতে না পারে । তাকে কিভাবে ১০ দিন মাটিতে রাখলো, আমার সন্তান কেন এতিম হলো। খুনিরা যদি বের হয়ে যায় আমি ওয়াদা করছি আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শহীদ মিনারে আত্মহত্যা করবো আর এর জন্য দায়ী থাকবে প্রশাসন । আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই ।

রেহানা বলেন, আমার স্বামী একজন সহজ সরল ব্যক্তি ছিলেন। কারও সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলেননি। এমনকি কারও সঙ্গে ঝগড়া করেননি। আমার স্বামী মোহাম্মদ আলীকে দুই লাখ টাকা ধার দিয়ে কি অপরাধ করেছিল? যার কারণে সেই টাকা আত্মসাত করতে মোহাম্মদ আলী তার সহযোগিদের নিয়ে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করলো। আমি চাই খুনি মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য খুনীরা যাতে কিছুতেই বের হতে না পাওে সেজন্য নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের প্রতি বিশেষ অনরোধ করছি।

নিহত সেলিম চৌধুরী ছেলে রায়হান রিতুল চৌধুরী মানববন্ধনে বলেন,  এই মুহুর্ত্বে কিছু বলার ভাষা নেই, আমি শুধু আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই
বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাসেল চৌধুরী বলেন,  আমার বড় ভাইকে নৃশংসভাবে সংঘবদ্ধভাবে হত্যা করেছে মোহাম্মদ আলী। পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে আগেই সন্দেহ করেছিলো। আমরা খুনীদের ফাঁসির দাবি জানাই।

বক্তাবলী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি আলামিন ইকবালের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে নিহত সেলিম চৌধুরীর মা মমতাজ বেগম সাংবাদিক জামাল উদ্দিন বারী, নারায়ণগঞ্জ কলেজের সাবেক ভিপি আলমগীর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ মাস্টার, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাসেল চৌধুরী, আলোকিত বক্তাবলীর সভাপতি নাজির হোসেন, ওয়েল  ফেয়ার ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান ফকির, অগ্রযাত্রার সভাপতি বাদল হোসেন ববি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর মাটি খুঁড়ে ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক ফয়সাল। ফয়সাল জবানবন্দিতে বলেন, ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে এবং তাঁর উপস্থিতিতে সেলিমকে হত্যা করে সে। এ মামলার অন্য দুই আসামি  মোহাম্মদ আলী ও সোলায়মানকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করেছে ফতুল্লা থানা পুলিশ। আগামী সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাদের কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।

নিহত সেলিম চৌধুরী বক্তাবলীর কানাইনগর এলাকার মৃত শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে। সেলিম চৌধুরী শিবু মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। গত ৩১ মার্চ সকালে বাসা হতে ব্যবসার কাজের উদ্দেশ্যে বাহির হন সেলিম। 

ব্যবসায়ের সুবাদে আরেক ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীকে ২ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন সেলিম। আর ওই টাকা  ফেরত নিতে গিয়েই  নির্মমহত্যাকান্ডের স্বীকার হয় ব্যবসায়ী সেলিম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ফয়সাল পুলিশকে হত্যাকান্ডের কথা নিশ্চিত করেছে। 

ফয়সাল জানায়, ব্যবসায়ের সুবাদে সেলিম চৌধুরী প্রায়ই মোহাম্মদ আলী আর্থিকভাবে সহায়তা করতো। গত ৩১ মার্চ  দুপুরে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সেলিমকে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে গোডাউনে ডাকে। সেলিমকে  মোহাম্মদ আলী তার কথা মত ২ লাখ ৬ হাজার টাকা দেয়।

টাকা দেয়ার সময় কর্মচারী সে, লেবার আলী ও আরো একজন সামনেই উপস্থিত ছিলো। সেলিম টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় আলী তার ঘাড়ে রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আঘাতের পরপরই সেলিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার মুখ, হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। পরে আহত অবস্থায় ৩১ মার্চ রাতেই মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে গোডাউনের একপাশে সেলিমকে বস্তাবন্দি করে মাটি চাপা দিয়ে পুঁতে রাখা হয়।
 

এই বিভাগের আরো খবর