মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

আইন শিখাইয়া লাভ নাই, যা ভালো হয় তাই করবো : এসপি হারুন

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমাদের তো আইন শিখাইয়া লাভ নেই। আইনে যদি কাভার না করে তাহলে যা ভালো হয় তাই করবো। আমরা যদি খারাপ লোকদের ধরতে যাই যদি আমার কাছে সাংবাদিকের যদি হেল্প লাগে, হেল্প চাইবো। খারাপ লোকের বিরুদ্ধে তো আমি ছাড় দেবনা। 

 

শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর শায়েস্তা খান রোডে গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে ‘সাংবাদিকতার সহজপাঠ’ শীর্ষক দুইদিন ব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমার পক্ষে আপনাদের (সাংবাদিকদের) বলার দরকার নেই। আমার সত্য কথাটুকু শুধু বলেন। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের মধ্যে সৎসাহস রয়েছে। আমি অল্প সময়ে এর প্রমাণ পেয়েছি। নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেকটা বিষয়ে তারা প্রতিবাদ করতে পারে। 

 

সম্প্রতি পুলিশের দুটো অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে এসপি হারুন বলেন, একটা পত্রিকা বলছে- সিদ্ধিগরঞ্জের অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলনা বিধায় অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ। যদি অবৈধভাবে বিশ্বের নামি দামি ৮ টা ব্রান্ডের সেন্ট বানানো হয়, সেন্টের গায়ে লেখা থাকবে মেড ইন চায়না, জাপান এবং দিল্লি এবং সে সেন্টগুলো তৈরি করবে বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি দিয়ে। আমরা নিজের চোখে দেখেছি। আপনারা সব সাংবাদিকরা ছিলেন, দেখেছেন যে পানিটাতে কী গন্ধ! পানিটা পড়ছে, সেন্ট বানাচ্ছে। আপনারা নিজেরা দেখছেন সেখানে বলছে যে সিসি টিভি বন্ধ ছিলো। সিসি টিভিতো সেখানে দরকার নেই, বড় সিসি টিভিতো সকল সাংবাদিক; যারা সেখানে উপস্থিত ছিলো। সিসি টিভিতেতো বাহিরের লোকের চেহেরা দেখি, ভিতরে কী হচ্ছে এটা তো সকল সাংবাদিকরা দেখলেন। তারা কীভাবে সেন্টাটি বানাছে, কী পানি দিয়ে সেন্টটা বানাচ্ছে। সেন্টটি বানানোর কথা জাপানে, লন্ডনে আর সেন্টটি বানাচ্ছেন বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে। আর সেখানে লেখা আছে মেড ইন জাপান। এটাতো আপনারা সকল সাংবাদিক নিজেরা দেখেছেন। তাহলে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলনা, সিসি টিভি বন্ধ ছিল এ কথাটা আপনাদের পত্রিকায় লেখার আগে লেখার দরকার ছিলো সিসি টিভির চেয়ে বড় সিসি টিভি হলো সাংবাদিক। আমরা যদি এমন হতাম সাংবাদিক নিতাম না, আমরাই তো সকল সাংবাদিককে খবর দিয়েছি। সকল গোয়েন্দা সংস্থার লোক সেখানে উপস্থিত ছিল।
 

এসপি হারুন আরো বলেন, যেখানে সকল সাংবাদিক উপস্থিত ছিল, গোয়েন্দারা উপস্থিত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে, প্রতারণার দায়ে মামলা হয়েছে। আপনি একটা রুমের মধ্যে বসে চারটি ব্রান্ডের টেলিভিশন সনি, এলজি, স্যামসাং বানাবেন। বড় করে সত্তর ইঞ্চি, আশি ইঞ্চি টিভি বানাবেন মার্কেটে সেল করবেন। এটা তো সাংবাদিক ভাইয়েরা দেখেছেন, যদি শুধু পুলিশ বাহিনী দেখত তাহলে কথা ছিল শুধু তারা দেখেছে আর কেউ দেখে নাই। মামলা রুজু হয়েছে, মামলায় যদি আমরা তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করতে না পারি তাহলে মামলা খালাস। আমাদের কাছে অপরাধী মনে হয়েছে আমরা মামলা রুজু করেছি। এটি নিয়ে বেশি আর ব্যাখ্যা দিতে চাইনা।
 

রূপগঞ্জের ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ইয়াবা উদ্ধার প্রসঙ্গে টেনে এসপি হারুন বলেন, এক জায়গায় আমরা বাসায় ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে সেখানে আমরা ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা পেয়েছি। ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে ঠিক আছে, যদি আপনি মনে করেন থাকেন আপনি কয়েল বিক্রি করছেন, আপনি গরু বিক্রি করছেন তাহলে কয়টা গরু বিক্রি করছেন, কয়টা কয়েল বিক্রি করতে হবে কয়টা গরু বিক্রি করতে হবে। বিক্রি করলে ১ কোটি ২৫ লাখ হবে সে হিসাবটা আপনাকে দিতে হবে। হিসাবটা দেন আমাকে। একটা লোককে আমরা ধরবো; তার প্রমাণ করা দরকার যে সে অপরাধটা করে নাই। সে প্রমাণটা আমাকে দিলেই হয়। আমার তো আপনার সাথে শত্রুতা নেই । যদি ১ কেটি ২৫ লাখ টাকা আনা হয় এটা মানুষের কাছে বাড়ি বাড়ি কয়েল বিক্রি করছেন অথবা গরু বিক্রি করছেন তাহলে কতটা কয়েল বিক্রি করছেন কতটা গরু বিক্রি করছেন এটা বললেইতো হয়। সকাল থেকে আমরা বসে রইলাম এরপরও আপনি সেটা দেখাতে পারলেন না। এখন কেন জায়গায় জায়গায়  বলতেছে এটাতো প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্নবিদ্ধ হলে টাকাটা কী আমি দিয়েছি নাকি। এটা আপনি বলছেন যে ভাই এটা কয়েল বিক্রির টাকা,  এটা গরু বিক্রির টাকা। বললেইতো হয় ভাই ৫০ টি গরু বিক্রি করছিলাম। ৫০ টি গরুর দাম কত টাকা, কয়েলের দাম কত টাকা। আপনার তো ব্যাংক প্রতিদিন খোলা । যাক এই ব্যাখ্যাটা আমি দিতে চাইনা। বাস্তবিক ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা অপরাধ। আমরা মামলা রুজু করেছি। আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন আমরা যদি প্রুফ করতে পারি যে এটা সত্য তাহলে আমরা তাকে সেভ করার চেষ্টা করবো। আমি কথাটি সহজ সরলভাবে বলবো। একথাটা আমার বলার কথা নয়। তদন্ত চলছে, তদন্তে জানা যাবে এটা হলো মূল কথা। আমাদের কমনসেন্স থেকে আমার যদি মনে হয় এটা করা ঠিক হবেনা আপনাকে তাহলে আইনের ব্যাখা করার দরকার নাই।

 

নারায়ণগঞ্জের প্রতিটা মানুষের সাথে পুলিশের মিত্রতার সর্ম্পক উল্লেখ করে এসপি হারুন বলেন, আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যাই। কালকে আমরা দুর্গাপূজার  কাপড় বিতরণ করেছি। আজকে আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কাপড় বিতরণ করেছি। আমরা প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে আজকে রাত থেকে ঘুরবো। আমাদের সাধারণ মানুষের সাথে সর্ম্পক, কারও সাথে বৈরিতা নয়। এখন যদি মনে করেন কাউকে পুলিশ গিয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে, যদি আপনার কাছে মনে হয় এই লোকটা সঠিক কাজটি করে নাই আপনি আমাকে বলেন। আপনার পাঁচ জন লোকের মধ্যে যদি এক জন লোক খারাপ হতে পারে তাহলে আমার পরিবারেও তো দুই হাজার লোক আছে। একটা লোক খারাপ কাজ করতেই পারে। সে যদি ভালো লোককে ধরে নিয়ে যায় আপনি কষ্ট করে আমার কাছে যান বলেন ভাই ভালো লোকটাকে ধরে নিয়ে আসছে। তাহলে আমি যদি সেটা না করি তাহলে আমাকে বলবেন।
 

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মব্যস্ততার প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, আমার অফিসের সামনে এখন ১০০ মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । তাদের কারও জমিটা নিয়ে গেছে, কারও বাড়িটা নিয়ে গেছে,  কেউ টাকা পায় কিন্তু টাকা দেয়না, কোথাও আরেক জায়গায় গিয়ে বসতে হবে। এই যে একট যন্ত্রণা এটা অনুভব করি যে আমার গ্রামে আমার বাড়ির একটা মহিলা একটি থানায় বা জেলায় দাঁড়িয়ে থাকে অসহায়ের মতো এসপির জন্য অপেক্ষা করে। আমি যদি পুলিশ না হতাম আমার বাবাও যদি দাঁড়িয়ে থাকতেন তার কাছে কী মনে হতো! ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা অনুভব করি আমি যদি পুলিশের চাকরি না করতাম আমি যদি এসপি সাহেবের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতাম যে, আমার জায়গাটা নিয়ে গেছে সে সমাজের একজন বড় নেতা। তার কাছে কেউ গিয়ে কথা বলতে পারেনা তখন এসপি সাব যদি বলে দেয়, না ভাই এটা আমি পারবোনা। তখন এই লোকটার মনের অবস্থা কী হবে? এই লোকটা তিন দিন আগে থেকে প্ল্যান করে; আমি এসপি সাহেবের কাছে যাব, গেলে উনি বলে দিবেন, বলে দিলে আমার জায়গাটা উদ্ধার হবে। এইযে স্বপ্ন নিয়ে গেলেন, দেখা গেলো যে আমি পারবোনা । ওই লোকটার অবস্থা কী হবে? এটাকে ভিতরের সেন্সবোধ কাজ করতে হবে। তার একটা কাজ কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে একশটা কাজ। 

 

এসপি হারুন বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের দর্পণ অর্থাৎ আপনাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য আসে, পুলিশের কাছে এত তথ্য আসেনা । আপনার কাছে এ তথ্য আসলে আপনি নিউজ করতে পারেন আবার পুলিশকেও বলতে পারেন। আজকে নতুন সাংবাদিকদের বড় অভাব। আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদেরই গড়তে হবে। আপনি আমার দল করেন, আমার সাথে থাকেন আপনার ভালোটাই আমরা লেখব, খারাপটা লেখবনা তাহলে ওই লোকটার ক্ষতি আপনারা করছেন। আপনাদের যারা ভালো লিখতে পারেন, যে লিখতে পারেনা তাদের শিখান। কিন্তু লেখার মধ্যে যে বানান ভুল এজন্যই তো আপনিই কলুষিত হচ্ছেন।

 

তিনি বলেন, সমাজের কিছু লোক থাকবেই। একটা পরিবারের পাঁচটা ছেলে থাকলে একটা ছেলেতো এদিক সেদিক যেতে পারে। সাংবাদিকদের মধ্যেও হয়তো এমন থাকতেই পারে। সত্যটাকে আপনার বাদ দেওয়া যাবেনা। আপনারা কিন্তু আপনাদের লেখনির মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করেন। টাকা হলেই পত্রিকা বের করা যায়না। পত্রিকা বের করতে হলে মন-মানসিকতা দরকার। আপনার একটা নিয়্যত থাকা দরকার যে, আমি একটি পবিত্র দায়িত্ব হাতে নিয়েছি। এপবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার উপরে অনেক ঝড় আসবে। 

 

স্থানীয় দৈনিক সকাল বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক প্লাবন রাজুর সভাপতিত্বে সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান তোতার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, জাতীয় শ্রমিক লীগের শ্রমিক কল্যাণ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ। আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের (এনইউজে) সভাপতি আবদুস সালাম ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি শরীফ উদ্দিন সবুজ। কর্মশালায় ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।     
 

এই বিভাগের আরো খবর