শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সংকট মোকাবেলায় বিএনপি’কে আরো গভীরে যেতে হবে

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০১৮  

এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার

 

বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম। চলতি ২০১৮ ইং সনের শেষবদ্দি জাতীয় সংসদ নির্বাচন (সংবিধান মোতাবেক) হওয়ার সময় নির্ধারিত আছে। সকলের মনেই একটি প্রশ্ন জাতীয় নির্বাচন হবে তো? কারণ ২০১৪ ইং সনের ৫ই জানুয়ারি প্রার্থী ও ভোটার বিহীন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেশবাসীর রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে বিগত জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও ভারতের অভিবাবকত্বের কারণে নির্বাচন বিহীন সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাপটের সাথেই চলছে। যেমন যাকে জেলে রাখা দরকার তাকে জেলে দিয়েছে, যাকে ব্যাংক, বীমা, মিডিয়ার লাইসেন্স দেয়ার তাকে তা দিয়েছেন, ব্যাংক লুট করার সূযোগও এ সরকারের আমলে হয়েছে যা ইতোপূর্বে এমন ভাবে আর দেখা যায় নাই, নিরষ্কুস দলীয় করণের মাধ্যমে সরকারী ঘরনাদের ভাগ্যের চাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমানুষের দাবী একটি স্বচ্ছ, সুষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার একই দাবী। তিনি চেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। এ কথাটির জন্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ট ও চরম পরীক্ষা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বৈরাচারী বেড়াজালকে ভেদ করে তিনি কবে নেতাকর্মীদের নিকট ফিরবেন তাহাই এখন গণমানুষের চিন্তার খোরাক।

 

নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন আর বিএনপি’র দাবী নয়, এটা এখন সকল দলের দাবী, যারা এতো দিন বিএনপি’কে স্বাধীনতা বিরোধীদের আশ্রয় দাতা হিসাবে নাক ছিটকাতো তারাও এখন প্রকাশ্যে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবী করছে। কারণ এখন তারা মনে করেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। একথার পিছনে যুক্তি হলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা। সব কথা বাদ দিলেও সম্প্রতি ১৫/৫/২০১৮ ইং তারিখে ঘটে যাওয়া খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিষক্রিয়তার মাধ্যমে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগীতা হরিলুট করে “নৌকার” জয় ছিনিয়ে নেয়ার দৃশ্য, সকাল ১০-০০ ঘটিকার পূর্বেই নৌকার সীল মারার কাহিনী কিছু মিডিয়াতে প্রকাশ পেলেও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য মতে নির্বাচন সুষ্ট হয়েছে। নাটকীয়তার মাধ্যমে হলেও রাষ্ট্রপতি নিশ্চয় যোগ্যব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশন (প্রধান কমিশনারসহ) হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে বলে দাবী করবেন। কারণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বর্তমান প্রধান বিচারপতির (বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন) নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল “সার্চ কমিটি”। তাই সেই সার্চ কমিটি কর্তৃক অনেক তল্লাসী করে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারাই নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবী অমুলক হবে না। তবে মেরুদন্ডহীন “যোগ্যব্যক্তি” দেশ, জাতি ও সমাজের কোন কাজে না লাগলেও নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে খুবই সহায়ক। এ কারণেই অপদার্থ, ব্যক্তিত্বহীন, পুরুষত্বহীন ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের বড় বড় পদে আসীন হয়ে নিজ ও পরিবারের ভাগ্যন্নষনে ব্যস্ত থাকে। ফলে জাতিকে পোহাতে হয় আমাবশ্যার কালো রাত্রি। সাংবিধানিক পদসহ দায়িত্বশীল জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কর্মকর্তাদের যোগ্যতা হিসাবে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সৎ চিন্তা বাস্তবায়ন সম্পন্ন লোকের প্রয়োজন হয় না, বরং তেলের বাটী ব্যবহারের অনুশীলন থাকাটাই এখন বড় যোগ্যতা। তবে তেলের বাটীর অনুশীলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, যারা ব্যতিক্রম তাদের ঝড়ে পড়তে হয়েছে। শ্রোতের বিপরীতে টিকতে না পারার কারণে তৈলের বাটীর ব্যবহার দিন দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভোগান্তি হচ্ছে জনগণের।  

 

কথা বলছিলাম কাংখিত জাতীয় নির্বাচন সম্পকের্, যে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলে ছিলেন যে, তিনি ভবিষ্যতে আর বির্তকিত নির্বাচন দেখতে চান না। ২০১৪ ইং সনের ৫ই জুনের নির্বাচন বির্তকিত হওয়ার উপলব্দি থেকেই হয়তো তিনি এ কথা বলতে পারেন, নতুবা কথাটি লোক দেখানো কথাও হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি লোকদেখানো কিনা এটাও “সময়ই” প্রমাণ দিবে। তবে দৃশ্যত: মনে হচেছ যে, বক্তব্যটি প্রধানমন্ত্রীর লোক দেখানো। কারণ শুধু স্থানীয় নির্বাচন নহে, বরং স্কুল/কলেজের পরিচালনা পর্ষদ, পেশাজীবি সংগঠনগুলির নির্বাচনও সরকারী দলের প্রভাব মুক্ত নহে। সম্প্রতি ১৪/৫/২০১৮ ইং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়ে গেল। ক্ষমতাসীনরা পূর্বেও বার কাউন্সিলে ক্ষমতায় ছিল এবং এবারও তারাই নির্বাচিত হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা পরাস্ত হওয়ায় সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির প্রায় ৮,০০০ ভোটের মধ্যে মাত্র ৮৫৩ ভোট রেখে বাকী ভোট বিভিন্ন জেলা বারে স্থানান্তর করায় সুপ্রীম কোর্টের অধিকাংশ আইনজীবিই এবার বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট দিতে পারে নাই। সুপ্রীম কোর্ট বার ভোট কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনদের শোষনীয় পরাজয় হয়েছে একমাত্র এ্যাড: আ: বাছেদ মজুমদার ছাড়া। ক্ষমতাসীনদের সাথে মনস্তাতিক দন্দের কারণে সুপ্রীম কোর্টের বারের ২ বার নির্বাচিত সভাপতি ব্যারিষ্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ভোট দিতে পারেন নাই, কারণ তার অজান্তেই ভোটটি চট্টগ্রাম বারে ট্রান্সফার করে দেয়া হয়েছিল। এমননি ভাবে সুপ্রীম কোর্টের অনেক সিনিয়র আইনজীবি ভোট দিতে পারেন নাই, যদি সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সদস্যরা সুপ্রীম কোর্ট ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে পারতেন তবে বার কাউন্সিলের নির্বাচনের রিজাল্ড সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের মতই হতো যেখানে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হয়েছে।

 

সরকারের আগ্রাসনী কর্মকান্ডে মনে হয় যে, তারা (সরকার) বিএনপি বিহীন আর একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাজা ও জামিনের কাহিনী, অসংখ্য নেতাকর্মীদের নামে ডজন ডজন মামলা, পুলিশের মত আদালতকে নিয়ন্ত্রণ, সকল নির্বাচনে হরিলুট, প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগের বাধ্য করা সহ প্রশাসনে নি:লজ্জ সার্বিক দলীয় করণ প্রভৃতি স্বরন করিয়ে দেয় যে, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও কোলকাতা মনস্ক বুদ্দিজীবিদের লাগামহীন নীতিকথা প্রচারের মাধ্যমে ২০১৪ ইং সনের ৫ই জানুয়ারির পুনরাবৃত্তিই দেশে ঘটতে যাচ্ছে।

 

একতরফা নির্বাচন ছাড়াও লগি বৈঠার তান্ডব, ১/১১ সরকার থেকে আমরা (রাজনীতিবিদরা) কি শিক্ষা নিলাম তাহাও জাতির নিকট পরিষ্কার নহে। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে যে, তৃণমূল থেকে আসা রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে ব্যাংক লুটেরা ধনীক শ্রেণীর হাতেই এখন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ। ফলে ১/১১ এর মত যখন দলের দু:সময় আসে তখন আর তাদের খুজে পাওয়া যায় না। বরং উল্টো খেলা খেলে। দলীয় প্রধান জেলে, যার ভাবমুর্তির উপর দলের ভাবমুর্তি নির্ভরশীল তার জেল মুক্তি আইনী প্রক্রিয়া একটি বাতুলতা মাত্র। আইনী প্রক্রিয়ার চেয়ে গণআন্দোলন জোরদার না হলে আইনী দীর্ঘ শ্রুতিতা ও লোক দেখানো ন্যায় বিচার ২০১৮ ইং সালকে পাড় করে দেয়ার একটি পরিষ্কার চিত্র চোখের সামনে ভেসে আসে।

 

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জেল রাজনৈতিক। সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে বিচার বিভাগ বিচারিক সিন্ধান্ত দেয়ার পারিপার্ষিক অবস্থান কোথায়? রাজনৈতিক জেল রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান আদালত নহে, রাজপথ। রাজপথে থাকতে যেয়ে বিএনপি’কে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে বটে, কিন্তু রাজপথেই যাদের জীবন মরণ তাদের কি দল যথাযথ ভাবে সঠিক স্থানে অবস্থান দিয়েছে? এ বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে যাদের হাতে দলের দন্ডমুন্ড তাদের। জেলা ভিত্তিক কমিটি কোথাও আছে, কোথাও দন্দে কোন্দলে দিন কাটাচেছ, কোথাও নিশক্রিয়, তবে মেক্সিমাম জেলায় বিএনপি কমিটি গঠিত হয়েছে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে নহে বরং তদবীর ভিত্তিক। এ বিষয়গুলি সমাধান করাও কোন কঠিন বিষয় নহে, যদি ওপর ওয়ালাদের সদইচ্ছা থাকে। 

 

বিএনপি চেয়ারম্যানের মুক্তির আইনী লড়াইয়ে নিযুক্ত আইনজীবিরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং নিযুক্ত আইনজীবিরা দেশের সেরা আইনজীবি। পেশার পাল্লায় ওজন করলে জ্ঞান ও আইন পেশার পারদর্শীতে তারা আর্ন্তজাতিক মানের। ফলে মামলা পরিচালনায় কোন ক্রটি বিচ্যুৎ নাই এ কথা জোড় দিয়েই বলা যায়। দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী সকল আইনজীবিই বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিনের জন্য উৎগ্রীব এবং তারা এটাকে প্রেসটিজ ইস্যু মনে করছেন, এ মর্মে তাদের আবেক উৎকন্ঠায় অভাব নাই। তারপরও এতো বড় শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবি সমাজ সাংগঠনিক ভাবে কি কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছে? এর কারণ কি? (একটু গভীরে যাওয়া দরকার, অবশ্য গভীরে যাওয়ার ফুসরৎ (সময়) আমাদের কারো নাই, বড় বড় নেতাদের থাকবে কি করে?) এ্যাডভোকেট শামছুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আইনজীবি সমন্বয় পরিষদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সাংগঠনিক ভাবে দেশব্যাপী আইনজীবিদের যে ভাবে উজ্জীবিত করেছিল বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে এ রূপ অমানবিক আচরনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আইনজীবি শক্তি সাংগঠনিক ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা কি রাখতে পেরেছে? কেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবিদের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত হয় নাই? এ জন্য কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটুও দায়ী নন? এক সময় বিএনপি পন্থী সিনিয়র আইনজীবিদের প্রচেষ্ঠায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবিদের একটি প্লাটফর্ম গঠিত হয়েছিল যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি টি.এইচ. খাঁন সহ স্বনামধন্য দেশবরন্য আইনজীবি বৃন্দ। এখন সে জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম সাংগঠনিক শ্রী হারিয়ে ২ নেতার কবজায় বন্ধী হয়ে আছে প্রায় ১০ বৎসর যাবৎ। তারা ছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামে অন্য কারো কোন পদ পদবী নাই। ১৪/৫/২০১৮ ইং তারিখের বার কাউন্সিলের নির্বাচনের বিএনপি পন্থীদের ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করে এক নেতা যখন সাংবাদিক সম্মেলন (যদিও মায়া কান্না) করছিলেন ঠিক ঐ মুহুর্তে আরেক নেতা সরকারী দলীয় যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর ছবি ভাইরাল করছেন, ঐ সময় তিনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে, ক্ষমতাসীনদের হাতে তার নেত্রী কারাবন্দী। জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম কাজীর গোয়ালের মতো, গাভী কিতাবে আছে গোয়ালে নাই। তাদের সাংগঠনিক প্লাটফর্ম অস্তিত্বহীন, এটাই বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পরাজয়ের অন্যতম কারণ। 

 

এবারও যদি সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে সরকারের এক তরফা জাতীয় নির্বাচন ঠেকানো না যায় তবে জাতির জন্য হবে অশ্বিনী সংকেত। এখনতো সরকার বিরোধীরা গুম, খুন, পলাতক ও কারাবন্ধী রয়েছে। খোদা না করুন এমন দিন তো আসতে পারে যে দিন সরকার বিরোধীদের এ দেশে থাকা নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী (স্বাধীনতার ৪৭ বৎসর পর মতিয়া চৌধুরী সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ়তার সাথে যখন বলেন রাজাকারদের সন্তানদের তারা চাকুরী দিবেন না। তখন ভবিষ্যত নিয়ে যদি আমরা গভীরে যাই তবে একথাও পরিষ্কার যে সরকার অর্ধশতাব্দী পরেও জাতিকে দ্বিখন্ডিত ভাবেই তারা চিন্তা করছেন)। মতিয়া চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু প্রভৃতি মন্ত্রীরা এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজীব সম্পর্কেও অশালীন কথা বলেছেন। আজ প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন শুধু মাত্র বিএনপিকে কোনঠাসা করার জন্য। তারাও (বামপন্থী) বুক ফুলিয়ে স্পষ্টই বলেদিয়েছেন যে, তাদের ছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। অনুরূপ মন্তব্য এরশাদও করছেন যাকে এক সময় শেখ হাসিনা মহাচোর বলতেন। এখন টাই পরিষ্কার যে, মহাচোর ও পিতার কুৎসাকারীদের (১৯৭২-৭৫ ইং পর্যন্ত) সাথে প্রধানমন্ত্রীর হাত মিলাতে বাধা নাই শুধু বিএনপি’কে ধ্বংস করার জন্য।  

 

আমাদের এলাকায় একটি প্রবাদ চালু রয়েছে যে, “যা হয় না ৯ দিনে তা হবে না ৯০ দিনে”। ইতিমধ্যে ৯ বৎসরতো পার হয়েই গেল। ২০১৮ ইং সালের অর্ধেক পাড় হয়ে যাচ্ছে। কার্যকর ভূমিকা নেয়ার সময় রয়েছে মাত্র আর তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে কার্যকর ভূমিকা (অবশ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে) না নিলে এবারও ট্রেন মিস্ করতে হবে এবং এ জন্য শুধু বিএনপি’কে নয় পস্তাতে হবে সকলকেই। ভয় পাওয়ার কিছুই নাই, কারণ সরকারী দলে গৃহজ্বালা শুরু হয়েছে। প্রধান মন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সামনে সরকারী দলে নিজেদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে, প্রভাবশালী মন্ত্রীকে (মতিয়া চৌধুরী) নির্বাচনে এলাকায় অবাঞ্চিত করা হয়েছে প্রভৃতি মিলিয়ে তারাও চিন্তা মুক্ত এ কথা ধারনা করা সঠিক হবে না। তবে বিএনপিকে নিজের ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগাতে হবে, শুধু মাত্র পরের দোষ দেখলে হবে না।

 

জাতির সামনে এখন ক্রান্তিকাল। শুধুমাত্র “গণতন্ত্র”কে রক্ষার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। ধর্ম ভিত্তিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ সকলেই যদি “গণতন্ত্র” পুনরুদ্দারের জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজপথে নামতে পারে তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি কৈফিয়ৎ থাকে, নতুবা জবাব দিহিতার দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন রাস্তা নাই, বিষয়টি সর্বস্তরের জাতীয় নেতৃত্বের বিবেকের উপর ছেড়ে দেয়া হলো।

 

বিএনপি ইতোপূর্বে এমন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে নাই যা এখন করছে। দলের সকল স্তরের দায়িত্ব প্রাপ্তদের জবাব দিহিতায় আনা যায় নাই, অন্যদিকে কর্মের পুরষ্কার বা তিরষ্কারের প্রচলন না থাকার বিষয়টি অনেকাংশে দায়ী। এ কান্তিকাল থেকে উত্তোরনের একমাত্র অবলম্বন রাজপথ। ঐতিহাসিক “রাজপথই” নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে। এ রাজপথই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এনে দিবে। অন্যথায় কেহ যদি খালেদা জিয়া বিহীন (মাইনাস) নির্বাচনের কথা চিন্তা করেন, বা নতুন করে সংস্কারবাদী গ্রুপ সৃষ্টি হয় তা হবে গুড়ে বালি, কারণ বিষয়টি বিশ্বাস ঘাতকরা মেনে নিতে পারে, কিন্তু তৃণমূল মেনে নিবে না। এমতাবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার। শুধু জামিন নহে, সাজা মুক্ত খালেদা জিয়া চাই, নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নেতৃত্ব দিবেন খালেদা জিয়া এটাই তৃণমূলের কামনা বাসনা। পুনরায় এ জন্য রাজপথই একমাত্র অবলম্বন এবং এ জন্য স্বেচ্ছায় কারাবরণের জোড়ালো সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া এ ক্রান্তিকাল অতিক্রমের বিকল্প কোন রাস্তা নাই। বিষয়গুলি বিএনপি’কে আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। কর্মীদের মুক্ত চিন্তার সূযোগ দিতে হবে এবং তদবীর নহে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে দলকে আরো গতিশীল করতে হবে। মনে রাখতে হবে তদবীরে সরকার চলতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক দল গতিশীল হয় নাই। প্রকৃত জাতীয়তাবাদী শক্তির একটি তালিকা দলের নিকট আছে বলে মনে হয় না।  

 

লেখক

কলামিষ্ট ও আইনজীবি (এ্যাপিলেট ডিভিশন)  

মোবাঃ ০১৭১১-৫৬১৪৫৬

E-mail: [email protected]

এই বিভাগের আরো খবর