শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রেলওয়ের উচ্ছেদে আশ্রয়স্থল হারানোর ঝুঁকিতে সংখ্যালঘু হরিজনরা

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ব্রিটিশদের শাসনামলে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও চা বাগানে কাজের জন্য তেলেগু ভাষাভাসী অসংখ্য নারী পুরুষ এদেশে এসেছিলো। কিন্তু তাঁদের কর্মদক্ষতা ও সহজ সরল মন মানসিকতার কারণে দ্রুতই এদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তারা। 


এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করতে শুরু করে এসব নারী ও পুরুষ। মূলত হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় হিসেবেই এরা বেশি পরিচিত। তবে দুঃখের বিষয় শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পরা থেকে শুরু করে এখন হরিজনরা নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও পাচ্ছেন না।


যেমন, নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন কলনিতে ১৯৬১ সাল থেকে বসবাস করছিলো হিন্দু হরিজন সমপ্রদায়ের প্রায় ৩২টি পরিবারের লোকজন। জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ডাবললেন প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হতে পারে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের এই কলোনিটি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে হরিজনদের অর্ধশত বছরের পুরনো এই আশ্রয়স্থল।

 

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে কলোনির হরিজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পেশাগত কারণে সমাজের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে এদের একটা বৈষম্যের সৃষ্টি হওয়ার কারণে; এরা যে কোন জায়গাতে বসবাস করতে পারেনা। তাই এখানকার সংখ্যালঘু হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি প্রথমে পুনর্বাসন করেই যেন এখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়।

 

রঞ্জন ভাওয়াল নামে এক হরিজন সম্প্রদায়ের লোক বলেন, আমার বয়স ৫০ বছরের বেশি, জন্ম এখানেই হয়েছে এবং বাবা ও মায়েরাও শুনেছি এখানেই থাকতো তাই এই কলোনি ছাড়া আমাদের আর কোন ঠিকানাও নেই। যদি এখান থেকে আমাদের ঘর বাড়ি ভেঙে দেয়া হয় তাহলে আমাদের রাস্তাতেই থাকতে হবে।

 

শান্তি রঞ্জন দাস নামে একজন বলেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষই সুইপার, ময়লা পরিষ্কারসহ নানান ধরনের কাজ করে তাই এখানকার মানুষ যত্রতত্র ভাড়া বাসায় থাকতে পারেনা। কিন্তু এখন যদি এদের এখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়, তাহলে এরা যাবে কই? তাই যদি এদের বিষয়ে সরকারি লোকজন একটু চিন্তা করে তাহলে ভালো হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক বলেন, শুনছি ১ নং রেলগেট এলাকায় রেলওয়ের উচ্ছেদে আমাদের থাকার ঘর ভেঙে ফেলা হবে। যদি এখান থেকে আমাদের সরিয়ে নেয়া হয় তাহলে আমরা কই যাবো? আমি মনে করি আমাদের মতো সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের একটি দায়িত্ব রয়েছে। কোন রকম পুনর্বাসন না করেই আমাদের উচ্ছেদ করাটা অন্যায় হবে।

 

সারা বাংলাদেশে অবহেলিত, বিচ্ছিন্ন, উপেক্ষিত কিংবা দলনের শিকার প্রায় ১২ লাখ হরিজনদের সবচেয়ে বড় অংশ ছিলো ঢাকায়। ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় সেখানকার হরিজনরা মাথা গোঁজার জন্য বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনও পেয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে কলোনির হরিজনরাও আশায় রয়েছে যে, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে এই সৌভাগ্য একদিন তাঁদেরও হবে।

এই বিভাগের আরো খবর