মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

ঈদগাহ কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ

মসজিদে ছাত্রলীগ নেতা মান্নান অবরুদ্ধ!

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ফতুল্লার মুসলিমনগরে ঈদগাহে জামাতে নামাজ আদায় করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তুমুল আকার ধারণ করেছে। বেশ কয়েকদিন যাবৎ ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএম মান্নান ও পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে মুসলিমনগর কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। 


শুক্রবার রাতে মুসলিমনগর পূর্বপাড়া জামে মসজিদে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে মান্নানের উদ্ব্যত্তপূর্ন আচরণে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এসময় মান্নান মসজিদ থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। 


এর আগে মুসলিমনগর বায়তুল আমান সরকারী শিশু পরিবারের মাঠে ঈদ জামাতের প্রস্তুতী নেয় ৮ পঞ্চায়েতের লোকজন। এর মধ্যে মান্নান ও তার সহযোগী বেশ কয়েকজন এবারের ঈদ জামাত বানচালের জন্য সদর উপজেলার ইউএনও’র কাছে মৌখিক অভিযোগ দেয়। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সাময়িকভাবে সরকারী শিশু পরিবারের সুপারেন্টেন্ড ঈদগাহের কাজ বন্ধ করে দেয়। 


পরে ইউএনও’র কাছে পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন গিয়ে আবেদন করে। এরই প্রেক্ষিতে ঈদ জামাত ঐ মাঠে করার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে এলাকাবাসী। 


তবে ঈদগাহে কোন রকম ঝামেলা এড়াতে শুক্রবার রাতে আলোচনায় বসলে সেখানে মান্নান দলীয় প্রভাব খাটাতে গিয়ে ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্ম দেয়। 


মুসলিম নগর কবরস্থান ও ঈদগাহ নিয়ে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আগে এলাকায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পূর্বের কমিটি বাদ দিয়ে জামাল উদ্দিন সবুজের নেতৃত্বে এলাকার যুবকদের নিয়ে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। 


এই কমিটির মাধ্যমে ঈদ উল ফিতরের নামাজ মুসলিম নগর বায়তুল আমান সরকারী শিশু পরিবারে অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের পর নতুন কমিটি সমস্ত খচর বাদে ৩ লাখ টাকা উদ্ধৃত দেখায়। তবে এরই মধ্যে নতুন কমিটি নিয়ে শুরু হয় দ্বন্ধ। এরপর সমগ্র গ্রামের মানুষ এক হয়ে নতুন কমিটি গঠন করে। আর এই নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মান্নান ও তার বলয়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


এলাকাবাসী বলেন, মুসলিমনগরে একটি কবরস্থান কমিটি রয়েছে। ঐ কমিটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব কামাল উদ্দিন মাদবর ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান ফজলুল হক সরকার। এই কমিটির মাধ্যমে কবরস্থানের উন্নয়ন করা হয়। 


এছাড়াও মুসলিমনগরে ঈদ জামাত এই কমিটির মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হতো।  এবছরই রাস্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সমবায়ী জামাল উদ্দিন সবুজ পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আগে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় আব্দুল বাতেনকে। 


এই নতুন কমিটিকে জামাল উদ্দিন সবুজের ভাই কামাল উদ্দিন মাদবরসহ স্থানীয়রা নতুন করে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়।আর এর পর থেকেই এলাকায় দুটি বলয় সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে কামাল উদ্দিন মাদবরকে প্রধান করে পাল্টা কমিটি করা হয়। আর এতেই শুরু হয় এলাকায় দ্বন্ধ। 


অপর একটি সূত্র জানায়,কামাল উদ্দিন মাদবরের কমিটি এবারও মুসলিম নগর সরকারী বায়তুল আমান সরকারী শিশু পরিবারের মাঠে ঈদ জামাতের আয়োজন করে। 


আর এই ঈদ জামাতকে ঠেকাতে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। ঈদ জামাত যাতে শিশু পরিবারের মাঠে না হয় এজন্য সে বিভিন্ন চেষ্টা তদ্বীরও করেছে। পরে পঞ্চায়েতের লোকজন সদর উপজেলার ইউএনও’র সাথে আলোচনা করে  ঈদ গাহের মাঠ ঠিক রাখে। 


সূত্রটি আরো দাবী করেন, শুক্রবার রাতে ঈদগাহের মাঠ নিয়ে যে দ্বন্ধ তা নিরসের উদ্যোগ নেয় এলাকাবাসী। মুসলিমনগর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদে বাদ এশা বসে সমজোতা বৈঠক। ঐ সভায় ছাত্রলীগ নেতা মান্নান এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এসময় উত্তেজিত জনগন মসজিদের ভিতরেই মান্নানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে মান্নান অবস্থা বেগতিক দেখে তার নিজের বাড়ির লোকজনদের এনে বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়। 


এব্যাপারে মুসলিমনগর এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান ফজলুল হক সরকার বলেন,মুসলিমনগরের ঐতিহ্য পঞ্চায়েত প্রথা। এই পঞ্চায়েত প্রথা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করছে মান্নান। সাংসদ শামীম ওসমান পঞ্চায়েত প্রথাকে সম্মান করেন। সেখানে মান্নানের মতো মানুষ কোন প্রভাবে পঞ্চায়েতের লোকজনদের অপমান অপদস্ত করার দুঃসাহস দেখায় তা বোধগম্য নয়। 


এ ব্যাপারে কামাল উদ্দিন মাদবর বলেন, মান্নান একজন বেয়াদব। একজন বেয়াদবের কাছে মুসলিমনগরবাসী জিম্মি থাকতে পারেনা। এই বেয়াদবের বিরুদ্ধে সাংসদ শামীম ওসমানের কাছে এলাকাবাসী অভিযোগ করবে। বেয়াদব কখনো ছাত্রলীগের নেতা হতে পারেনা। 


এছাড়াও মান্নানের চাঁদাবাজীর বিষয়ে এলাকাবাসী অবগত আছে। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী শিঘ্রই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।  আমরা জানি সাংসদ শামীম ওসমান কখনোই কোন বেয়াদবের পক্ষে কথা বলবে না। ঈদগাহ নিয়ে মান্নানের নোংড়া খেলার বিষয়টি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল অবগত আছে।  


এব্যাপারে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ মান্নানের মুঠোফোনেএকাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে  তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর