শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভিকির জামিন দায় কার : পুলিশ না পিপির

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী মিনহাজ উদ্দিন ভিকির বিরুদ্ধে এক অটোরিক্সা ভাঙচুর ও চালককে মারধর করায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়।

 

তবে গ্রেপ্তারের পরদিনই জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবতাবুজ্জামান দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় ভিকির জামিন মঞ্জুর করেন। তবে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়ার পরও এতো দ্রুত ভিকির জামিন নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়। 


এব্যাপারে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন বলেছেন, দ্রুত বিচার আইনে মামলা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী যে কোন একজন ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশ ভিকিকে মামলার পরে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

অথচ দ্রুত বিচার আইনের মামলায় আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারীদের যে কোন একজনকে অন্তত ঘটনাস্থল থেকে ধৃত করতে হবে। যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে তার সাথে মামলায় কিছু ত্রুটি ছিলো। আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলোনা।

 

দ্রুত আইনে মামলা হলেও আসামি ভিকি কিংবা অন্য কাউকে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত করা হয়নি। ফাঁক থাকার দরুণ এই সুযোগটি আসামি পক্ষ। যার কারণে দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি হলেও আসামিকে ধরে রাখা যায়নি। 


তবে পুলিশ বলছে সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই করা হয়েছে। এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ভিকি ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে যে মামলাটি হয়েছে সেটি সঠিক প্রক্রিয়াতেই হয়েছে। এই মামলায় একদমই আইনের ব্যাত্যয় ঘটেনি। মামলার প্রক্রিয়াটি সঠিক রয়েছে এবং সবই ঠিক আছে। কোথাও লেখা নাই হাতে হাতে ধৃত হতে হবে।

 

হাতেনাতে ধৃত হওয়ার ব্যাপারে বিচারকালীন সময় কম আর যদি হাতেনাতে ধৃত না হয় তবে বিচারকালীন সময়টা বেশি এটি। কিন্তু হাতে হাতে ধৃত হতে হবে এমনটি নয়। মামলা ঋজু এবং সমস্ত কিছু সঠিক আছে। এর বাইরে যদি অন্য কেউ কিছু বলে থাকে তবে সেটি তিনি তার মত করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটি পরিস্কার।   


দ্রুত বিচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পরদিনই জামিনের বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দ্রুত বিচার আইনের মামলায় ধরে আনার সঙ্গে সঙ্গে আসামি জামিন পেয়েছেন এরকম আমার জানা নেই। এ মামলায় সাধারণত সঙ্গে সঙ্গে জামিন হয় না।’ 


গত শুক্রবার মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সার গতি রোধ করেন ভিকিসহ আরো ৪/৫ জন। তারা চালক কামাল হোসেনকে হকিস্টিক, রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে অটোরিক্সাটি ভাঙচুর করেন।

 

এই ঘটনায় চালক কামাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। শনিবার সন্ধ্যায় শহরের মাসদাইরের বাড়ি থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিনহাজকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন রোববার জামিন পান ভিকি।  


এর আগে গত ১৯জুন নিতাইগঞ্জে পাটের বস্তা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভিকির বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁর হেফাজত থেকে পাট উদ্ধার করতে পারলেও তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

 

তার আগে গত ২৯মার্চ শহরের জামতলায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এক প্রবাসীর জায়গা দখলের অভিযোগে ফতুল্লা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। বর্তমানে ওই দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলায় ভিকি জামিনে রয়েছে। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভিকি নিতাইগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে সাহস পায়না। প্রভাবশালী সাংসদের আত্মীয় হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ দাপিয়ে বেড়ান।
 

এই বিভাগের আরো খবর