শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিয়ে না করেও সংসার, অতঃপর খুন : ২০ মাস পর রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্ট ার (যুগের চিন্তা ২৪) : ম্পূর্ণ ক্লুবিহীন একটি নারী হত্যাকান্ড। মামলায় আসামী করা হয়েছিলো একজন নিরীহ ব্যক্তিকে, নামে যিনি এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন। এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তবু তিনি আসামী।

 

তাহলে খুনীকে? এই নিয়ে জটিলতা ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। তদন্তে নেমে বিপাকে পড়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পুলিশ।

 

সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে এই তদন্ত সংস্থাটি। কিন্তু বিশ মাস তদন্ত করেভহত্যাকান্ডের কোন ক্লু বের করতে পারেনি। তবু হাল ছাড়েনি সিআইডি। শেষে মোবাইল ফোনের একটি কল লিস্টের সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যায়।

 

অবশেষে হত্যাকান্ডের দীর্ঘ বিশ মাস পর রহস্য উদঘাটনসহ গ্রেফতার করা হয় খুনীকে। যিনি গ্রেফতারের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

 

এটি ভারতের সিআইডি’ সিরিয়াল অথবা ‘ক্রাইম পেট্রোল’ সিরিয়ালের ঘটনা বলে মনে হলেও ঘটনাটি সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার একটি হত্যাকান্ড।

 

এই এলাকার আব্দুর রহিমের ভাড়াটের বাসা থেকে গত ২০ মাস পূর্বে নাজমা আক্তার ঋতু নামে এক নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে এর তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি'র উপর।

 

সম্পূর্ণ ক্লুবিহীন এই হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েন সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা। দীর্ঘ বিশ মাস তদন্তের পর এই হত্যায় জড়িত একমাত্র ঘাতক লূৎফর রহমানকে গ্রেফতার করে সফলতার মুখ দেখলেন। তিনি।

 

গ্রেফতার লূৎফর বুধবার (১২ ফেব্রুয়াারি) হত্যার দায় স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওছার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

 

এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি লূৎফর রহমানকে রাজধানীর বংশাল থানার মালিটোলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে তদন্ত সংস্থা নারায়ণগঞ্জের সিআইডি পুলিশ। লুৎফর রহমান নিহত নাজমা আক্তার ঋতুর প্রেমিক ছিলেন। তবে বিয়ে না করেও স্বামী স্ত্রী পরিচ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তবে এই এলাকায় তিনি নিজেকে নাদিম হিসেবে পরিচয় দেন।

 

নিহত নাজমা আক্তার ঋতু ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের দক্ষিন পৈরতলার আবুল হাশেম মিয়ার মেয়ে। এবং ঘাতক লূৎফর রহমান একই জেলার বিজয়নগর থানার বীরপাশা এলাকার মৃত জিতু মিয়ার ছেলে। নবাবপুরে একটি সেলাই মেশিন কিনতে গিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। সেই সম্পির্কের ভিত্তিতেই তারা এক সাথে বসবাস শুরু করেন।

 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার আব্দুর রহিমের ভাড়া বাসার একটি রুম থেকে নাজমা আক্তার ঋতুর (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। এর দুদিন আগে খুন হন তিনি।

 

 লাশ উদ্ধারের চারদিন পর ২৬ জুন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নাজমার প্রাক্তন স্বামী নজরুলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই। আগস্টে মামলাটি সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলেও আসামি নজরুলকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।

 

নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, নাজমার সাথে তার পরিবারের তেমন যোগাযোগ ছিল না। সে টেইলার্সের কাজ করতো। টেইলারি মেশিনের একটি যন্ত্র কিনতে গিয়েই রাজধানীর নবাবপুরে পরিচয় হয় লূৎফরের সাথে। তখন থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।

 

লূৎফরের নাম পরিবর্তন করে নাদিম পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয় তারা। সেখানে তারা বসবাস করতো। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি শুরু হয়। এক রাতে টিভি বন্ধ করা নিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে সিমেন্টের তৈরি লাঠি আকারের বস্তু দিয়ে নাজমার মাথায় আঘাত করে লূৎফর।

 

এতে ঘটনাশলেই মারা যায় নাজমা। পরে লাশ ঘরে রেখেই দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আত্মগোপন করে লুৎফর।। দুদিন পর পঁচা লাশের দূর্গন্ধ বের হলে আশেপাশের লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘরের তালা ভেংগে ঋতুর লাশ উদ্ধার করে।

 

সিয়াইডি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, লাশ উদ্ধারের চারদিন পর ২০১৮ সালের ২৬ জুন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিহত নাজমার প্রাক্তন স্বামী নজরুলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই।

 

আগস্টে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হলে আসামি নজরুলকে পুলিশ কোথাও খুঁযে পায় নি। তবে দীর্ঘ সময় নানাভাবে তদন্ত করেও কোনো ক্লু পাচ্ছিলো না সিআইডির তদন্ত কত্রমকর্তা।

 

পরে একটি পাসপোর্টের সূত্র ধরে তদন্ত চালায় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে নাজমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে তার সাবেক প্রেমিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। তবে তার সাথেও হত্যাকান্ডের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় কললিস্ট নিয়ে আরো পর্যবেক্ষণ শুরু হয় ।

 

এক পর্যায়ে সেই কললিস্টের সূত্র ধরেই খুনী লূৎফরের কাছে পৌঁছায় সিআইডি। পরে অবস্থান সম্পর্কে নিসশ্চিত হয়ে রাজধানীর বংশাল থেকে সিয়াইডি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গত মঙ্গলবার দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ওই জবানবন্দিতে লুৎফর তার প্রেমিকা ঋতুকে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিজেকে খুনী হিসেবে স্বীকার করে।

এই বিভাগের আরো খবর