শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বালু মহলের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত, গ্রেফতার ১

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার আমিরাবাদ এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কুপিয়ে ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে জাকির হোসেন(৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। 

এসময় উভয় পক্ষের আরো ৫জন আহত হয়। গত রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এঘটনায় সোমবার বিকেলে সোনারগাঁ থানায় নিহতের বড় ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

হত্যাকান্ডের পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আহত আবু হানিফকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আহত আবু হানিফ পুলিশ পাহাড়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

তবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ এজহার পরিবর্তন করে দ্বিতীয় দফায় মামলা গ্রহন করেছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। তবে এজহার থেকে কার নাম বাদ দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি নিহতের পরিবার। নিহত জাকির হোসেন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের টেকপাড়া আমিরাবাদ গ্রামের মৃত আরজ আলীর ছেলে।

জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেন ও নুরু মিয়ার ছেলে আমির  হোসেনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের বালু উত্তোলনের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নবী  হোসেন ও আমির হোসেনের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বদ্বের সৃষ্টি হয়। 

এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, দা, রাম দা,  টেঁটা,  বল্লম, লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয় পড়ে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে   কোপাঔংপি ও টেঁটা ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় টেকপাড়া আমিরাবাদ গ্রামের মৃত আরজ আলীর ছেলে জাকির হোসেন, নুরু মিয়ার ছেলে আল-আমিন, ইয়ানুসের ছেলে আবু হানিফ ও আইয়ুব আলী মেম্বারের ছেলে সিরাজসহ আরো ৫ জন আহত হয়। 

ঘটনার পর আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আমির হোসেন পক্ষের  মোঃ জাকির হোসেনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহতের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এঘটনায় সোমবার বিকেলে সোনারগাঁ থানায় নিহতের বড় ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। 

এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এজহার পরিবর্তন করে এক প্রভাবশালী ব্যাক্তির নাম বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দফায় মামলা গ্রহন করেছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। তবে এজহার থেকে কার নাম বাদ দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি নিহতের পরিবার। 

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকা গিয়ে আমাদের লোকজনকে হয়রানী করেছে। আমাদের পক্ষের পীরবক্সের ছেলে দ্বীন ইসলামকে গ্রেফতারের পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। 

নিহত জাকির হোসেনের বড় ভাই মনির হোসেন জানান, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেন ও আইয়ুব আলী মেম্বারের ছেলে সিরাজের নেতৃত্বে ২০-২২ জনের একটি দল তার ভাই জাকির হোসেনকে ঔংপিয়ে ও টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। 

অভিযুক্ত বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় আমি ও আমার ভাই নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাই এ হত্যাকান্ডের সাথে আমরা জড়িত না।   

সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রথম দফায় দেয়া অভিযোগই মামলা গ্রহন করা হয়েছে। এজহার পরিবর্তনের কথাটি সত্য নয়। সংঘর্ষের পর দ্বীন ইসলাম নামের একজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই বাছাইয়ের পর ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর