রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বন্ধ ঘোষণা তাও দেদারসে চালু

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৪  

 

# সিভিল সার্জনের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করেই চলমান অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

 

 

নির্বাচনের পর নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী লাইসেন্সহীন সকল হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরদিন থেকেই লাইসেন্সহীন না থাকা, সনদ নবায়ন না করা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন ল্যাব পরিচালনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনাসহ বিভিন্ন অভিযোগগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বেশ কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লিষ্টে করে সেগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের লাইসেন্সে বিহীন অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন।

 

ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের লাইসেন্সবিহীন ১৬টি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। কিন্তু সরকারি এই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে চালু রেখেছেন অবৈধ লিস্টে নাম উঠে আসা নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল (পশ্চিম দেওভোগ নাগবাড়ি), তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এনসিসি, এসবিএফ কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার (পশ্চিম দেওভোগ) তা ছাড়া শহরের মূল ফটকের চাষাড়া প্রেসিডেন্ট রোডের স্টার লাইফ হাসপাতাল।

 

এই হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স না থাকার কারণে গত (১৬ জানুয়ারী) সিভিল সার্জন অফিস থেকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এগুলো বন্ধ রাখতে কিন্তু সিভিল সার্জনের সেই নির্দেশকে পা ঠেলে দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম অবহৃত রেখেছেন। কিন্তু তারা দাবি করছেন সিভিল সার্জন অফিস থেকে তাদের কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

 

এছাড়া ও তারা আরো দাবি করছেন, লাইসেন্স করতে হলে ফায়ার সার্ভিস পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নানা কাহিনী যার কারণে তারা লাইসেন্স করতে সময় পার করছে। আবার অনেকে আছে পুরো বিল্ডিং চালু করে লাইসেন্স জমা দিবে কারণ সামনে তাদের আরো বেড বাড়াতে হতে পারে তখন আবার বাড়তি খরচ সেই দিকে লক্ষ্য করে বর্তমান কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে চালিয়ে পরবর্তীতে করবে হাসপাতালের লাইসেন্স। তাছাড়া ও অনেকে রয়েছে কিছু প্রভাবশালী লোকদের শেল্ডার বা ক্ষমতা দেখিয়ে বছরকে বছর লাইসেন্স ছাড়াই ক্লিনিক ব্যবসা অবহৃত রাখছেন।

 

এদিকে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ শহরে লাইসেন্সবিহীন ও অনুমোদনহীন শতাধিক ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন খোদ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এমন শহরের আরো কয়েকটি নামকরা ক্লিনিকে রয়েছে যাদের অধিকাংশ ক্লিনিকের কোনো লাইসেন্স নেই। আবার অনেক ক্লিনিকের লাইসেন্স রিনিউ করা হয়নি। এমন শহরের আনাচে-কানাচে নোংরা পরিবেশে হুটহাট গড়ে উঠছে ক্লিনিক।

 

সেখানে চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসা হচ্ছে। রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া এই অবৈধ লিষ্টে থাকা এই হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বিনা লাইসেন্সে এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে না জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন চালিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার লাইসেন্স না নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ ব্যবসা। এ ধরনের হাসপাতালে যতজন চিকিৎসক ও যতজন জন নার্স থাকা বাধ্যতামূলক তার কিছুই নেই এই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।

 

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার নামকরা ডায়াবেটিস হাসপাতাল যার নেই কোন লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের বন্ধের নিষেধাজ্ঞা পর ও কিন্তু দিব্বি চলমান ডায়াবেটিস হাসপাতালটি। যেমন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন আচরণ সকলের। দীর্ঘদিনের এই সেবা প্রতিষ্ঠানটিতে ফতুল্লা থানার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেবা নিয়ে থাকে কিন্তু সকলেই যান এটার বৈধ একটি হাসপাতাল কিন্তু এটা যে অবৈধর খাতায় নাম চলে গেছে এমনটা তো জানা নেই এলাকা ও আশেপাশের কাউরই।

 

তাছাড়া হাসপাতালে নেই ভালো চিকিৎসা ও তা ছাড়া নার্স সংকট ও রয়েছে হাসপাতালটিতে। যদি লাইসেন্স না থাকা অবস্থায় কোন ভূল চিকিৎসায় হতাহতের ঘটনা ঘটে তাহলে এই দায়ভার নিবে কে? সিভিল সার্জনের বন্ধ করার নির্দেশে ও ডায়াবেটিস হাসপাতালটি খেলা কেন এটা জানতে চাইলে, নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের সিনিয়র অফিস সেক্রেটারী মো. মোবারক হোসেন জানান, আমাদের লাইসেন্স রয়েছে কিন্তু লাইসেন্স ডেট চলে যাওয়ার পর আমাদের আর জানা ছিল না যার কারণে এটা এখনো নবায়ন করা হয়নি। আমরা নবায়ন করার সকল কার্যক্রম প্রচলিত রেখেছি। শীঘ্রই আমাদের হাতে কাগজ চলে আসবে।

 

আজকে আমাদের সভাপতি ও সেক্রেটারী সাহেব সিভিল সার্জনের সাথে যোগযোগ করতে গিয়েছে। তাছাড়া উনি আরো বলেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে এখনো আমাদের কাছে কোন বন্ধ রাখার নোটিশ পাঠায়নি। পাঠালে আমরা একটি ব্যবস্থা নিতাম, যেহেতু এখনো পাঠানো হয়নি যার কারণে আমরা আমাদের কার্যক্রম অবহৃত রেখেছি কারণ একটা কাগজ রিনিউ করতে একটু সময় লাগে আমি কিছুদিন যাবৎ পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছি আশা করছি অতি শীঘ্রই এটা আমাদের হাতে কাগজ চলে আসবে।

 

পরবর্তীতে দেওভোগের এনসিসি, এসবিএফ কিডনি ডায়ালাইসিস হাসপাতাল ও চলমান অবস্থায় রয়েছে নেই কোন তোয়াক্কা। লাইসেন্স না থাকার কারণে বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির ম্যানেজার বায়েজিদ হোসেন বলেন, আমাদের কোন বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়নি। যার কারণে আমরা আমাদের কার্যক্রম অবহৃত রেখেছি। আমরা এখনো আমাদের লাইসেন্সের বিষয়ে কিছু জমা দেয়নি। কিন্তু শীঘ্রই দিবো আমাদের বেড আগে ছিল ১০ টা এখন হয়েছে ১৫টা আমরা আমাদের ৩য় তলার কাজ শেষ করেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতাম।

 

যেহেতু বর্তমানে অভিযান চলছে আর এটা ও সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত আমি আজকে মেয়র মহোদয়ের সাথে এই বিষয়ে যোগযোগ করবো। অপরদিকে চাষাড়ার প্রেসিডেন্ট রোডের স্টার লাইফ হাসপাতালটি চলমান নার্স যারা রয়েছে তারা নিজ নিজ দায়িত্বে কাজ করছে বন্ধের কোন আবাস যেমন নেই তাদের ভিতরে। কিন্তু অফিসের দায়িত্বে থাকা কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় কাউর সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।

 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মশিউর রহমান যুগের চিন্তা কে বলেন,  নির্দেশ দেওয়া হাসপাতালগুলো যদি আমাদের নির্দেশ না মানে। তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের সেগুলো জরিমানা করে সিলগালা করে দিতে হবে। বিশেষ করে ডাইবেটিস সেন্টার গুলো কথা শুনতেই চায় না। তারা সকলেই মনে করে তারা জনগণের সেবা করছে, যদি হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এটা দায়ভার নেবে। আবার অনেকে আছে অনেকের দোহাই দেয়, এগুলো দিয়ে কোন লাভ হবে না, নিয়ম মেনেই সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবারো একটা অভিযান দেব। সেখানে গিয়ে যেগুলো আমরা খোলা পাবো সেগুলো জরিমানা ও সিলগালা করে দেব।

 

এদিকে গত (১৬ জানুয়ারী) সিভিল সার্জন মশিউর রহমান নারায়ণগঞ্জের ১৬টি লাইসেন্সেবিহীন হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ করেন আর এগুলোকে বন্ধের নির্দেশ দেন।

 

সেগুলো হলো: ১/ নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া খানপুরের ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ২/ নারায়ণগঞ্জ ডায়বেটিক হাসপাতাল (ইউনিট-২), নবাব সলিমুল্লাহ রোড ৩/নারায়ণগঞ্জ ডায়বেটিক হাসপাতাল, পশ্চিম দেওভোগ নাগবাড়ি ৪/ স্টাফ লাইফ হাসপাতাল চাষাড়া ৫/ আয়েশা জেনারেল হসপিটাল এন্ড ল্যাব খানপুর ৬/ রোগমুক্তি মেডিকেল সেন্টার ৭/ মনোরমা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড অর্থোপেডিক সেন্টার, ৮/ এনসিসি, এসবিএফ কিডনি ডায়ালাইসিসি সেন্টার ৯/ ভূলতা এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১০/ মর্ডান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোনারগাঁ ১১/ আল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার এন্ড হেলথ সার্ভিসেস, সোনারগাঁ ১২/ মক্কা ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বরপা ১৩/ সোনারগাঁ ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১৪/ সিপিএইচডি নারায়ণগঞ্জ হেলথ কেয়ার লি:, রূপগঞ্জ ১৫/ আড়াইহাজার ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১৬/ পানাম নগর চক্ষু হাসপাতাল, সোনারগাঁ। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর