শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্দরের সামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০১৯  

বন্দর (যুগের চিন্তা ২৪) : বন্দরের ত্রিবেনী মিনারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত সামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্যগঠিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে স্থানীয়রা প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানকে সাথে নিয়ে  স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলো তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগতরাই স্কুলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে স্কুলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান বর্তমান পর্যন্ত দাতা সদস্যদের মনে কষ্ট দিয়েছে। 

 

স্থানীয়দের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি দান করে মূসাপূর ও বন্দর ইউনিয়নবাসীদের সাথে নিয়ে স্থানীয় মুহিউদ্দীন (বিএ) স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ শুরু করেন। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই ্এলাকার তখন এমপি ছিলেন নাসিম ওসমান। স্থানীয় সাংসদ স্কুলটির নাম জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নামের করার প্রস্তাব দিলেও মুহিউদ্দীন ওরফে মুহিন চেয়ারম্যান স্কুলটির নাম সামসুজ্জোহা করার প্রস্তাব দেন। পরে সেই প্রস্তাব অনুসারেই স্কুলটির নাম আওয়ামী লীগের বলিষ্ট নেতা ও নাসিম ওসমানের পিতা সামসুজ্জোহার নামানুসারে স্কুলটির নামকরণ করা হয়।

 

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মুহিন চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা হেঁটে হেঁটে স্কুলটির জন্য শিক্ষার্থী সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষকের অভাব থাকায় তখন মুহিন চেয়ারম্যান ৩৪ বছর পর্যন্ত স্কুলটির খাদেম হিসেবে দেখভাল করেছেন। একনামে স্কুলটিকে মুহিন চেয়ারম্যানের স্কুল নামেই পরিচিতি পায় অত্র এলাকায়। স্কুলটি ভালো অগ্রসরও হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৫ সালে বন্দর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ স্কুলের পুরস্কার জিতেছিলো। তবে হঠাৎ অজ্ঞাত কারণে স্কুলের পূর্বের দাতা সদস্য, সাংসদ নাসিম ওসমানের স্মৃতি সবকিছু নিশ্চিহ্ন হতে দেখে স্থানীয়দের মনে কষ্ট দিয়েছে। তবে এব্যাপারে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেননা। 

 

জানা গেছে, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে ছিলেন মুহিউদ্দীন (বিএ) চেয়ারম্যান। এপর্যন্ত দাতা সদস্য হিসেবে ছিলেন মুহিন চেয়ারম্যানের পিতা আবিল হোসেন, আব্দুর রহমান ওরফে লোক্কু, বোরহান, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান এবং বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমান।   

 

স্থানীয়দের ক্ষোভের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, বর্তমানে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুহিউদ্দীন (বিএ) চেয়ারম্যানকে সরিয়ে মূসাপূর ইউনিয়ন পরিষদের মাকসুদ চেয়ারম্যানকে  সভাপতি করা হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়েও তার সাথে মুহিন চেয়ারম্যানের যোজন-যোজন ফারাক। বর্তমান কমিটিতে স্থানীয়দের বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

 

কমিটিতে কোয়াব সদস্য/ শিক্ষানুরাগী সদস্য হিসেবে রয়েছেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদ, অভিভাবক কমিটিতে রয়েছেন জাহাঙ্গীর, মো.নাসির, মো.আলী, মো.ওয়াসিম, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে রযেছে জাহিদ, আব্বাস উদ্দিন, আফরোজা, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পারভীন, সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এরশাদুল্লাহ। এছাড়া কমিটিতে দাতা সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাংসদ সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমান। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও স্থানীয়রা স্কুলটির যে কোন কাজে উপেক্ষিত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

 

স্থানীয় অনেকে আক্ষেপে অভিযোগ করে বলেন, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের সাথে অনেক স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে স্কুলটির সাথে। স্কুলটির পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলায় সবাই কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর বর্তমান এমপি স্কুলটির দেখভালের দায়িত্ব নেন। তখন তিনি এই পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটি ভেঙে না ফেলায় তিনি রাগ করে বলেন, ওই ভবনটি না ভাঙলে তিনি স্কুলের কোন উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত থাকবেননা। অগত্যা ২ কোটি টাকার ভবনটি মাত্র আড়াইলাখ টাকা টেন্ডারে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা হয়।

 

বর্তমান এমপি সেলিম ওসমান চারতলা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু স্থানীয়রা মনে পুরনো সেই ভবনটির নানা স্মৃতি মনে করে কষ্ট পান। স্কুলটির সবকিছুতে উপেক্ষিত থাকায় তাদের মনের ক্ষতটা আরো প্রশস্ত করেছে। তবে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননা। 
 

এই বিভাগের আরো খবর