শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বন্দরে উপজেলা নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪  

 

# আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন ও স্থানীয় সাংসদের আশির্বাদ পেতে বেশি আগ্রহী
# স্থানীয় সাংসদের অশির্বাদ টোটকা হিসেবে কাজ করবে বলে প্রার্থীদের ধারণা
# এরই মধ্যে ফেস্টুন ব্যানারের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছে প্রকাশ করছেন

 

 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর সেই নির্বাচন শেষ হতে না হতেই বাজতে শুরু করেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দামামা। চলতি মাসেই এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আর মার্চের প্রথমার্ধে শুরু হয়ে এ নির্বাচন কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা ও রোজার বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

 

উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত কিছু না বলা হলেও সচিবালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তফসিল ও ভোট গ্রহণের তারিখের বিষয়ে কমিশনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এমন খবরে এরই মধ্যে দেশজুড়ে যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক তারা সবাই নড়ে চড়ে বসেছেন। নেতাকর্মীদের প্রস্তুতিসহ উপজেলার সর্বত্র চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক সকলেই তাদের নিজেদের অবস্থানে থেকে যার যার সাধ্য মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে লবিং করা শুরু করে দিয়েছেন।

 

এরই মধ্যে যাদের নাম চলে আসছেন তাদের মধ্যে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গাজী আব্দুস সালাম, বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক নির্বাচিত দুইবারের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার প্রধান এবং মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি নেতা মাকসুদসহ বেশ কয়েকজনের নাম।

 

এর সাথে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানের নামও শোনা যাচ্ছে।  

 

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ করবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাই সহজভাবে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বন্দর থেকে অনেকেই চেষ্টায় আছেন বলে জানা গেছে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতা-ই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশির্বাদ পেতে বেশি আগ্রহী বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

 

অন্যদিকে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে আছেন দোদুল্যমান অবস্থায়। সূত্র মতে নির্বাচনে দলীয় কোন প্রতীক বরাদ্দ না করে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার লক্ষ্যে যদি সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান সাংসদের অশির্বাদের হাত টোটকা হিসেবে কাজ করবে বলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধারণা।

 

যদিও সেই বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টি মনোনীত হওয়ায় এখানকার জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরই বেশি সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানকার বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতারও এই সাংসদসহ জাতীয় পার্টির সাথে বেশ সখ্যতা থাকায় এবং একই সাথে এখানকার কিছু বিএনপি নেতারও এই সাংসদের সাথে বেশ সখ্যতা থাকায় সেই আশির্বাদ তাদের উপরও বর্ষিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

সূত্র মতে, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ বর্তমান সাংসদ ও তার পরিবারের খুব বিশ্বস্ত লোক হিসেবেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একই পদে এর আগের নির্বাচনে চতুর্থ হলেও শেষ বয়সের একটি খায়েস হিসেবে তাকে এই পদটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রার্থী দাবি করেছেন। যা বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় এসেছে।

 

ঠিক একই কারণে অর্থাৎ এই আসনের সাংসদের সাথে সখ্যতার কারণে আওয়ামী লীগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে পরিচিত এবং নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৎকালীন নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) এই উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও এখানকার আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতারা চেষ্টা তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন ফেস্টুন ব্যানারের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে যাচ্ছেন তারা।

 

স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এইবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অর্থাৎ গত নির্বাচনের মতো এককভাবে কাউকে এই পদে বসিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ হিসেবে তারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও যে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব তা দেখানোর সুযোগ হাতছাড়া করবে না এখানকার সাংসদ।

 

তাই শাসক দল আওয়ামী লীগ যেমন এই নির্বাচনকে প্রণবন্ত করার জন্য কোন দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না করে উম্মুক্ত করার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে, তেমনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও সমঝোতার মাধ্যমে এবার যেন কেউ চেয়ারে বসতে না পারে সে বিষয়েও দল থেকে চাপ থাকবে বলে মনে করেন তারা। আর এসব বিষয় মাথায় রেখে এবং উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে ইচ্ছে থাকার পরও অনেকেই অংশ নিতে না পারায় এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নেতাদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর