শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের ব্যাপারে উদাসীনতা

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন, পাঁচখুন মামলাসহ আরো বেশ কয়েকটি আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা পরিচালনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন। তবে এসব মামলা পরিচালনায় বেশ সাফল্য পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে নিজের ও পরিবারের জন্য নানা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। 


সাতখুন মামলার রায় ঘোষণার পর ২০১৭ সালের ২৩ জুন তার মেয়ে নারায়ণগঞ্জ চ্যাঞ্জেস স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী মাইশা ওয়াজেদ প্রাপ্তিকে (১৯) হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এঘটনায় পিপির স্ত্রী সেলিনা ওয়াজেদ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের (নং-১০২) করেন। 


এর প্রায় একবছর পর ২০১৮ সালের ৯ জুন পিপির বাড়ির সামনে থেকে তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে এ ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা (মামলা নং-২৫) দায়ের করা হয়। একই মাস ২৮ জুন সকালে ওয়াজেদ আলী খোকনকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি রেজিষ্ট্রিকৃত চিঠি আসে। 


এটিকেও ধারাবাহিক হামলার সূত্র বলেই মনে করেন পিপি ও তাঁর পরিবার। এঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তবে তিনটি ঘটনার একটিরও রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 


জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় মাইশা ওয়াজেদ প্রাপ্তিকে বঙ্গবন্ধু সড়কের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের পশ্চিম পাশে হাজী মঞ্জিলে তৌহিদুল ইসলামের কোচিং সেন্টার হতে বের হওয়ার পর পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা টাই স্যুট পরিহিত ৫০ থেকে ৫৫ বছরে একজন ব্যক্তি নিজেকে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের বন্ধু পরিচয় দেয়।


পরে সাত খুনের ঘটনার বিষয়ে প্রাপ্তিকে তার বাবা ভাল কাজ করেছে এই কথা বলে মিষ্টি জাতীয় খাবার জোরপূর্বক খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পরে রাস্তায় থাকা প্রাইভেটকারে উঠে পালিয়ে যায় বিষ খাওয়াতে আসা ৪ জন। 


মাইশাকে প্রথমে শহরের খানপুরে ৩শ শয্যা হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে রাতে বাসায় আনা হয় মাইশাকে। 


এঘটনার একদিন পর ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রাপ্তির মা সেলিনা ওয়াজেদ মিনু বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামী করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।


দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে, ২০১৮ সালের ৯ জুন পপির বাড়ির সামনে থেকে তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের ভাষ্য, অভিযোগের তেমন কোন সত্যতা পায়নি তারা। মামলাটিতে তথ্যগত ভুল হিসেবে দেখিয়ে ক্লোজ করে রাখা হয়েছে। 
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে, ২০১৮ সালের ২৭ জুন পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের কাছে একটি চিঠি আসে। এতে প্রেরকের নাম লেখা আছে আবুল বাশার। ঠিকানা দেয়া হয়েছে উত্তর ইসদাইর। চিঠিতে লেখা ছিলো, পিপি সাহেব, আপনাদের আদালতে রাশেদুল ইসলাম রিফাত নামে একটি ছেলে হাজতে আটক আছে।


মাদকদ্রব্য আইনে তার মামলা নম্বর জিআর ৫০৫/১৮, থানা ফতুল্লা। ওই আসামিকে তাড়াতাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করো। নইলে  তোকেসহ তোর কোর্ট কাচারি উড়িয়ে দেবো। আমরা শুধু মাদক ব্যবসায়ী নই। আমাদের আছে অনেক  গোলাবারুদ অস্ত্রশস্ত্র।


যেমন-সালমুন পটাসিয়াম, গন্ধক, আয়রন, একে ৪৭ রাইফেল, এলএমজি, এমজি, আধুনিক পিস্তল ও রাইফেল। আসামি রিফাতকে না ছাড়লে তোর ও তোর পরিবারকে জানে শেষ করে ফেলবো। ইতি তোর জম রতন।’ 


এঘটনায় ২৮ জুন সকালে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন পিপি এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। 


তিনটি ঘটনার ব্যাপারে পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, প্রসিকিউশনে অনেক চাঞ্চল্যকর, লোমহর্ষক মামলাসহ অনেক স্পর্শকাতর মামলার জন্য লড়তে হয়। ফলে নানা সময়ে নানা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।

এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে গেলো এক বছরের বেশি সময়ে আমার ও আমার পরিবারের উপর নানাভাবে আক্রমন ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে। আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করায় আমি মনে করি এসব ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের আরো দক্ষতার প্রমাণ দেওয়া উচিৎ ছিলো। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা দুটি মামলা কোন চৌকশ ও সৎ কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করা জরুরি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটি করে দেখাতে পারেনি। আমার ক্ষেত্রেই যদি মামলার ফলোআপের ক্ষেত্রে এমনটি হয় তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, পিপি জেলার প্রধান আইনকর্তা। তাঁর পরিবারের সদস্য তার মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা, তাঁর স্ত্রী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে যাওয়া কিংবা পিপিকে হত্যার হুমকির ঘটনার যদি তদন্ত না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কিভাবে হবে?

ন্যায় বিচারের জন্য যিনি দাঁড়াবেন তারই যদি ন্যায় বিচার নিশ্চিত না হয়ে তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপর মানুষ কিভাবে আস্থা রাখবে? আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এ মেয়াদে শপথ নেয়ার পর সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতায় নেত্রীর সে চেষ্টা ব্যর্থ কখনোই হতে পারেনা।

এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো অনেক বেশি তৎপরতা প্রত্যাশা করি। 
 

এই বিভাগের আরো খবর