শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পলাশের মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভাবনা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তাদের মতে, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এ আসনকে ঘিরে সারা বাংলাদেশে যেরকম আগ্রহের সঞ্চার তৈরি হয়েছে তা ইতিপূর্বে কখনো কোথাও দেখা যায়নি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এও বলছেন, বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমানের আগের সেই জৌলুশে যে ভাটা পড়েছে এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে যে গ্রহণযোগ্যতা কমেছে তাও বেশ সুস্পষ্ট হয়ে মোটাদাগে ধরা পড়েছে। 

বিশ্লেষকদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমানের হাতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন টিকিট যে অতো সহজে ধরা দিবে না তা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যে আভাস পাওয়া গেছে।  একই সাথে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ যে আওয়ামীলীগের যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই প্রার্থীতার দাবিদার তাও সুস্পষ্ট হয়েছে।

রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একেএম শামীম ওসমানের নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের  দেওয়া তথ্যের বিষয়ে জোর আপত্তি তুলে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর হাসান চৌধুরী নওফেল বক্তব্য দিয়েছেন।

আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বলেন, এ ধরনের তালিকা শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানে না। 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি, তবে যাদের অবস্থা ভালো- এ রকম অনেককে বলা হয়েছে। আমাদের লিডার আভাস-ইঙ্গিত দিয়েছেন, কাউকে মনোনয়ন... একেবারে শিওর... এ রকম কোনো আশ্বাস দেয়া হয়নি। নির্বাচনে নতুন মুখ আসছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন যত বাদ যাবে সেখানে নতুন আসবে।

এছাড়া এর মাত্র একদিন আগে নারয়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) এক অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান অনধিকার চর্চা করেছেন। কেননা, এ মুহুর্ত্বে বাংলাদেশের কারো মনোনয়ন নিয়ে বলার ক্ষমতা রাখেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নয় শামীম ওসমানকে এ আসনে অগ্রীম নৌকার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

আব্দুল হাই বলেন, মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম একসাথে ঘোষণা করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের আগাম কোন কিছু বলা অবশ্যই ঠিক না। এগুলো বলার এখতিয়ারও আমরা রাখি না।  এতে করে দলে অনিশ্চয়তা তৈরী হয়ে বিভেদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নওফেল সাহেবের বক্তব্যের সাথে একমত।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল বলেন, মনোনয়ন বোর্ড আছে মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাঁরা নির্ধারণ করবেন। নওফেল ভাই, সাংগঠনিক লোক। সাংগঠনিক কতগুলো নিয়ম-কানুন আছে। সে নিয়মের মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো চূড়ান্ত ডিক্লারেশন আসবে। সে সময়টি এখনো আসেনি।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে যেটি বলা হয়েছে সেটিই তাঁর মতামত।
শামীম ওসমানকে প্রার্থী হিসেবে অগ্রীম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেত্রীবৃন্দের এরকম তীব্র প্রতিক্রিয়ায় কাউসার আহমেদ পলাশের মনোনয়ন প্রাপ্তির জোর সম্ভাবনা বলে ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, শামীম ওসমানের নাম প্রথমেই ঘোষণা আসাতে কেন্দ্রের এ তীব্র প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে কয়েকটি বিষয় কারণ হতে পারে। প্রথমত, এ বছরের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে নাসিকের জনপ্রিয় মেয়র ও  জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলার ঘটনাটি বেশ গুরুত্ব পাবে। 

এর একদিন আগে সমাবেশ করে হকারদের নিয়ে মাঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। পরবর্তীতে মেয়রসহ ৫০ জন আহতের ঘটনায় বেশ আওয়ামীলীগের নীতি-নির্ধারকরা বেশ ক্ষুদ্ধ হয়েছে শামীম ওসমানের প্রতি। দ্বিতীয়, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দের চিন্তাভাবনায় কাকে দিয়ে এআসনটি আওয়ামীলীগ কাভার করতে পারবে তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। 

বেশ অনেকদিন ধরেই নানা কারণে সমালোচিত হচ্ছেন শামীম ওসমান। তাই আওয়ামীলীগ হয়তো চাইবে এ আসনে সারাহ বেগম কবরী যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তেমনি কাউকে মনোনয়ন দিতে। কবরী দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। এ আসনে আওয়ামীলীগের জয়ী হওয়ার শতভাগ সম্ভবনাময় প্রাথী হিসেবে পলাশের নামটিই উঠে আসে। শ্রমিকবান্ধব এ নেতার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানকে জনগণের ভোটের পরীক্ষা দিতে হয়নি, তাছাড়া ওই নির্বাচনে বিএনপি’র কোন প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। শামীম ওসমানের দলের জন্য নেতিবাচক বিষয়গুলো, কাউসার আহমেদ পলাশের জনপ্রিয়তা এবং বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ ত্রিমুখী হিসেবে পলাশকেই বেঁছে নেওয়া হতে পারেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে যেমন বতর্মান সাংসদ শামীম ওসমান পাশে পাচ্ছেন না, তেমনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও যে তাঁর পাশে নেই গেলো কয়েকদিনে এর সুরাহা হয়ে গেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গ্রীণ সিগন্যালের আভাস পেয়েছেন বিধায়ই হয়তো কাউসার আহমেদ পলাশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। আসছে মাসে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। 

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। সেখানে শামীম ওসমান কতখানি প্রভাব ও সামর্থ্য দেখাতে পারবে তারজন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে কাউসার আহমেদ পলাশের সমর্থকদের মতে, নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকাকে বিজয়ী করতে পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে তাঁদের।
 

এই বিভাগের আরো খবর