শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পল ও এলেন কনেটকে নাসিকের মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বিদেশী বন্ধু পল কনেট ও এলেন কনেটকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সম্মেলন কক্ষে নাসিকের পক্ষ থেকে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এ মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে তুলে দেন।

সম্মাননা প্রধান অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আজকে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে যাই । কারণ তারা যদি আত্মত্যাগ না করতো তাহলে আমরা এ স্বাধীন দেশ পেতামনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সময় আমাদের স্বাধীনতার আদায়ের লক্ষ্যে বহু দূরের দেশ আমেরিকা থেকে পল কনেট ও এলেন কনেট মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল ।

এসময় তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের হাতে আটক হয়ে দুই বছর জেল খেটেছিল । এলেন তখন প্রথম সন্তানের গর্ভবতী ছিলেন । তারা বাংলাদেশকে কতখানি ভালোবাসে এর প্রমাণ অনেক আগেই তাঁরা দিয়েছে।  আমরা আজ শুধু তাঁদের সম্মাননাই দিচ্ছি না, সেই সঙ্গে নিজেরাও সম্মানিত হচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের চরম দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিদেশি দুই বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান মেয়র।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ব্রিটেনের নাগরিক পল কনেট বলেন, পৃথিবীতে দুইটি ভাষা সবচেয়ে মধুর। একটি ইটালিয় অন্যটি বাংলা। বাংলা ভাষা শুনলেই মনে হয় যেন গান চলছে। আমি প্রতিরাতে রবীন্দ্রনাথের গান শুনে ঘুমাই। ‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী---রিম ঝিম রিম ঝিম রিম ঝিম’ এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঔষধ ও খাবার নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু সীমান্তে পাকিস্থানীরা আমাদের আটকে দিলে আমি আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে ভারতে রেখে ঘুরপথে ছদ্মবেশে বাংলাদেশে ঢুকি। আমার স্ত্রী এলেন কনেট আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সে বাংলাদেশে ঢুকবে না। কিন্তু সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইছামতি নদী দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার চেষ্টা করে। রাজাকাররা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে ধরিয়ে দেয় পাকিস্তানিদের কাছে। পাকিস্তানিরা তাকে দুই বছরের সাজা দিয়ে জেলে পাঠায়। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তিনি ছাড়া পেয়ে যান। 

তাঁর স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা এলেন কনেট বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলে খাদ্যের খুব সংকট ছিলো। জেলে অনেক শিশুরাও ছিলো। তবে জেলে থাকা মহিলাদের আন্তরিকতার কারণে গর্ভবতী হওয়ার পরেও আমার জেলে থাকতে অসুবিধা হয়নি। 

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে তাদের বড় সন্তানের নাম তারা রেখেছেন উইলিয়াম মুজিব কনেট। 

মুক্তিযোদ্ধা পল কনেট ও এলেন কনেট বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন।

মেয়রের সভাপতিত্বে সম্মাননা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমেরিকান নাগরিক পল কনেট ও তার স্ত্রী এলেন কনেট, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মহিদুল হক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ চৌধুরী মঞ্জু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান জুলহাস, নাসিক প্যানেল মেয়র বিভা হাসান, প্যানেল মেয়র-৩ মিনোয়ার বেগ, নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এড.এবি সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, নাসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম এহতেশামূল হক প্রমুখ। 
 

এই বিভাগের আরো খবর