শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মাছ, মাংস, দুধ, পিয়াজ অদৃশ্য

নিম্নবিত্ত পরিবারে হাহাকার ও হতাশা

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : খুচরা বাজারে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ৮০ থেকে ২শ’ টাকা। মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারে ভর্তা ও ভাজি থেকে ইতিমধ্যেই পিয়াজ অদৃশ্য হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে সব ধরণের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে  পাঁচ টাকা। সোয়াবিন তেল, তা সে রূপচাঁদা, বসুন্ধরা, তীর, ফ্রেস, শেফ প্রভৃতি যে ব্রান্ডেরই হোক, লিটারে বেড়েছে তিন টাকা।

এ শহরে একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, অন্যদিকে সরকার পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানে রুটিরুজির উৎস হারিয়েছে চার হাজার পরিবার। এর মধ্যে শহরের দুই নম্বরগেট থেকে গলাচিপা পর্যন্ত বিস্তৃত থান মার্কেট উচ্ছেদে ছয়শ’ ব্যবসায়ী ও দেড় হাজার শ্রমিক কর্মহারা হয়েছে।

এসব পরিবার কাল কি খাবে, মাস শেষে বাসাভাড়া দেবে কি করে, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া কি চালিয়ে যাবে, না বন্ধ করে দেবে, এসব নিয়ে ব্যাপক চিন্তা ভাবনা চলছে। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে একই সাথে বিরাজ করছে হাহাকার ও চরম হত্যাশা। তিনবেলা খাবার যোগার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।  চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন পরিবারের প্রধান ব্যক্তি। কারো আয় বাড়েনি অথচ প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।

নিম্নবিত্তদের জন্য ন্যায্যমূল্যের  কোন দোকানপাটও ইদানীং চোখে পড়েনা। মানুষের মধ্যে নিরব হাহাকার। সবাই নিরবে এই দুরাবস্থায় ভুক্তভোগী হয়ে দিন পার করছেন। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তান আছে এমন পরিবারগুলো কত কষ্টেশিষ্টে দিন কাটাচ্ছে-তা প্রতিবেশী ছাড়া কেউ জানেনা। অনেকের কোচিং পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন অপারগ অভিভাবক।

ঘরভাড়া, মুদি দোকান বাকি বাকি পড়ে থাকছে। দিনগুলো কেটে যাচ্ছে ঠিকই-কিন্তু তা যন্ত্রণাময় বলে মনে করেন বোদ্ধামহল। মধ্যবিত্তের অবস্থাও খারাপ। কেহ শান্তিতে নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও উপার্জনহীনতার খড়গ ঝুলছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কাধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ শহরে সাধারন পরিবারগুলো খাবারের পেছনে বাজেট বাড়াতে অপারগ। খাদ্য উপকরণের দাম বাড়লেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের রুজি বাড়েনি। উল্টো কমেছে। ফলে, খাবারের মান কমাতে হয়েছে। পিয়াজের মতো অনেক পরিবারেই পাত থেকে মাছ, মাংস ও দুধ হারিয়ে যেতে বসেছে।

শহরের দুই নম্বরগেট এলাকায় অবস্থিত থান মার্কেটে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতো। এদের মধ্যে ছিল প্রায় সাতশ’ মহিলা শ্রমিক। ছিন্নমূল পরিবার সদস্য এসব অসহায় মহিলারা প্রতিদিন ছয়শ’ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন করতো। শহরের বস্তি অথবা শহরতলিতে বাসা ভাড়া করে এরা বসবাস করতো। এতদিন ভালই ছিল। সম্প্রতি থান মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান চলায় এরা কর্মহীন।

কোন রুজি নেই, সঞ্চিত টাকা ভেঙ্গে এখন খাচ্ছে। ইতিমধ্যে জানুয়ারী থেকে বাসা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। এসব ছিন্নমূল পরিবারের স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উৎখাতকৃত থান ব্যবসায়ীরা আশু খাওয়াপড়ার সমস্যায় না পড়লেও এদের অবস্থা শ্রমিকদের চেয়েও করুণ।

দোকান ভেঙ্গে ফেলায় এরা একদিকে রুটিরুজি হারিয়েছে। অন্যদিকে, এদের প্রত্যেকেরই বাজারে বাকী পড়ে রয়েছে কয়েক লাখ টাকা। এ টাকা ফেরত পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। উপার্জনহীনতা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এসব পরিবারে হাহাকার সৃষ্টি করেছে।

এই বিভাগের আরো খবর