শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফতুল্লার মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধিরা

তুষার আহমেদ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২০  

জরুরী সেবা কেন্দ্র হিসেবে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম চলছে। তবে এই বিভাগেও হানা দিয়েছে করোনা। এতে গতি কমেছে পুলিশের কর্মতৎপরতার। যার প্রভাব পরেছে নারায়ণগঞ্জে। বিশেষ করে ফতুল্লার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। পুলিশের কার্যক্রম শিথিল হয়ে উঠায় এই অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপরাধিরা। প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরাও।  


সূত্র বলছে, ফতুল্লা মডেল থানায় একেরপর এক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে থানার কর্মতৎপরতা। এতে করে ‘থানা লকডাউন’ এমন ধারনা দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। অনেককে তা প্রকাশ্যে বলতেও শোনা গেছে। সমাজের এক শ্রেনির মানুষের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হওয়ায় পাড়া-মহল্লা গুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপরাধিরা। এতে করে আইনশঙ্খলার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটার সম্ভাবনা জোড়ালো হয়ে উঠছে।   


ইতিমধ্যেই ফতুল্লার দেওভোগ, নাগবাড়ি, ভূইয়ারবাগ, কাশিপুর, বাংলাবাজার, আদর্শনগর, রেলস্টেশন, পাগলা, বউ বাজার, নয়ামাটি, তল্লা, ইসদাইর, মাসদাইর, পুরাতন ক্যালিক্স স্কুল, খা-বাড়ি, খোঁজপাড়া, দক্ষিন সেহাচর, লালখা, উকিলবাড়ি, তক্কারমাঠ, শাহ-জাহান রোলিং মিলস, রেললাইন বটতলা, দাপা ইদ্রাকপুর, কুতুবপুর ও আশপাশের এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অপরাধিদের আনা-গোনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।  


অনুসন্ধান বলছে, শুরুতে লকডাউনের কড়াকড়ি থাকলেও অপরাধিরা ছিলো খোলশ মুক্ত। লকডাউনের কড়াকাড়িতেও ফতুল্লায় ঘটেছে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা। প্রতিপক্ষের অস্ত্রাঘাতে পাগলায় প্রাণ হারিয়েছেন রাজিব ওরফে ভিপি রাজিব। এই হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ৮ ও ১০ নম্বর আসামী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও মূল আসামীরা এখনও অধরা।


এর আগে কঠোর লকডাউনেও কাশিপুর বাংলা বাজার এলাকায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে খুন হয় শরীফ নামে এক যুবক। সে ওই এলাকায় ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের ব্যবসা করতেন। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেই প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন করে পালিয়ে যায় প্রতিপক্ষ।


গত ৪ মে রাতে ফতুল্লার দক্ষিন সেহাচর হাজী বাড়ির মোড়ে চার যুবককে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও ভুক্তভুগি পক্ষ বলছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে বটে, কিন্তু হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে অদৃশ্য কারণে চলে এসেছে। এছাড়াও করোনার কারণে এখন এসব অভিযোগের আসামী ধরা যাবে না বলেও তদন্তকারী পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রকাশ্যে ! এমন অভিযোগ বাদীপক্ষের।  


ফলে সন্ত্রাসী হামলার পরও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হামলাকারীরা। এরা হলো, লালখা এলাকার কামালের ছেলে রনি, একই এলাকার শান্ত, শানাল, কামাল, হৃদয়, সাব্বির, সুমন, ডিবজল ও তাদের সহযোগিরা।


এর আগে লকডাউনের কড়াকড়িতেও ফতুল্লার উত্তর চাষাড়া এলাকায় ইসমাঈল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় একদল সন্ত্রাসী।


থানা লকডাউন ! এমন ধারণায় অভিযুক্তরা যেমন হামলার পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে, তেমনি করোনা অযুহাতে ওই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি পুলিশকে ! এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ওই ভুল ধারণাটি আরো জোড়ালো হয়ে উঠছে।


সূত্র বলছে, পবিত্র মাহে রমজান চলে আসায় এবং একই সাথে মিল-ফ্যাক্টরী চালু হওয়ায় লকডাউন মুখে আছে, কাজে নেই। তার উপর পুলিশ বিভাগ করোনার কবলে পড়ায় লকডাউনের কঠোরতাও এখন দেখা যাচ্ছে না। ঝিমিয়ে পড়ছে পুলিশের কর্মতৎপরতা। পাড়া মহল্লায় পুলিশের টহল তেমন নেই।


জানা গেছে, বিগত দিনের তুলনায় করোনার এই দিন গুলোতে থানায় জি.ডি অভিযোগের পরিমান অন্তত ৮০ শতাংশই কমে গেছে। সমাজে প্রচলিত অপরাধ নিয়মিত ঘটলেও ‘থানা লকডাউন’ এমন ধারনায় অনেক ভুক্তভুগিই আসছেন না থানার আশ্রয়ে। কেউ এসে থাকলেও পাচ্ছেন না কাঙ্খিত সেবা। তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাও দেখাচ্ছেন করোনার অযুহাত।


এতে করে অপরাধিরা হয়ে উঠছেন আরো বেপরোয়া। পাড়া-মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় নিজ নিজ এলাকায় মাদকদের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পার করছেন নিজেদের সেরা সময় ! কোন ধরপাকর নেই। নিশ্চিন্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এদিক-সেদিক। আবার প্রভাব বিস্তার করতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও লিপ্ত হচ্ছেন কেউ কেউ।


থানা সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লা মডেল থানায় গত এক মাসে মাদকের কোন মামলা রুজু হয়নি। অথচ প্রতিমাসে ফতুল্লা মডেল থানায় অন্তত ৮০ থেকে ৯০ টি মাদকের মামলা রুজু হয়ে আসছিল।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের আগ মুহুর্তে অর্থের নেশায় অপরাধিদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে চুরি ছিনতাই এমনকি ডাকাতির ঘটনাও তুলনা মূলক বেশি ঘটে থাকে। কিন্তু ঈদের প্রাক্কালে পুলিশের তৎপরতা লোপ পাওয়ায় আগামীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটনার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের এক সদস্য বলেন- ‘আমরা আছি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। বাইরে করোনা আতঙ্ক নিয়ে যতটুকু পারছি, ডিউটি করছি। তবে আগের মত জোড়ালো কার্যক্রম এখন নেই। বিশেষ অভিযানও বন্ধ। মাদকসহ অন্যান্য ওয়ারেন্টের কোন আসামীও ধরছি না। মাদক উদ্ধারের অভিযান নেই। থানায় জমা পড়া অন্যান্য অভিযোগের তদন্তেও অনেকে যেতে চাচ্ছেন না। সবার মধ্যেই করোনার ভীতি রয়েছে।’


তবে, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। যুগের চিন্তাকে তিনি বলেছিলেন- ‘পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ভীতির কোন কারণ নেই। কারণ এই রোগ শুধু পুলিশের উপরই নয়, গোটা বিশ^ আক্রান্ত। আর নারায়ণগঞ্জ যেহেতু করোনার ঝুঁকিপূর্ন এলাকা, সেহেতু নারায়ণগঞ্জে বা ফতুল্লায় দায়িত্ব পালন করতে গেলে ঝুঁকি থাকবেই।

 

কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সেই ঝুঁকি মোকাবেলা করেই দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও করবে। এটা পুলিশের দায়িত্ব। কেননা পুলিশ দেশ প্রেমিক। স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই পুলিশ বাহিনীই যুদ্ধের ময়দানে অগ্রভাগে ছিলো। থানার কার্যক্রম ঠিক ঠাক আছে।

 

আমরা মানুষদের সেবা দিতে কখনই পিছ-পা হইনি। আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমিও আক্রান্ত হতে পারি, আক্রান্ত হলে আমার স্থলে অন্য কেউ এসে ঘাটতি পূরন করবে। এটাই স্বাভাবিক। আমরা সেবা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
 

এই বিভাগের আরো খবর