রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

জাকির খানকে নিয়ে বিএনপি কর্মীদের উন্মাদনা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২  

 

# তাদের দাবি রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন তিনি

 

নারায়ণগঞ্জে  আলোচিত ও সমালোচিত এক নাম জাকির খান। সিনেমার কাহিনীর মতোই তাকে নিয়ে নানা মুখরোচক গল্পের চর্চা হয়েছে দীর্ঘদিন। তরুণ বয়সের জাকির খানের বর্তমান চেহারা ও অবস্থান নিয়েও ধোঁয়াশার কমতি ছিলনা। বছরের নানা সময়েই হুট করে জাকির খানের প্রসঙ্গ নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর মাঝে আসলে আগ্রহের কমতি ছিলনা। 

 


ছাত্রসমাজের হাত ধরে দেওভোগের বাসিন্দা জাকির খানের উত্থান হলেও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার পর জাকির খানের রাজনীতিতে প্রকৃত রূপ পায়। তবে জাকির খানকে বিএনপির একটি অংশ অপছন্দ করে। দীর্ঘ ২১ বছর পর জাকির খান র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে সামনে এসেছে। জাকির খান বাংলাদেশে এসেছেন, বসুন্ধরায় থাকতেন পরিবারসহ। এসব তথ্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জানা গেছে। 

 


শনিবার র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জাকির খান প্রসঙ্গ ছিল টক অব দ্যা টাউন। জাকির খানের যে বিএনপিতে এখনো বেশ কদর তা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জেলা বিএনপির বিবৃতির মাধ্যমে টের পাওয়া যায়। তবে জাকির খান যে দীর্ঘ ২১ বছর দৃশ্যপট থেকে অনুপুস্থিত ছিল এরও মধ্যে তার কর্মীবাহিনী ও সমর্থকের সংখ্যা কমেনি। 

 


বিশেষ করে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি এড.সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে জাকির খানের কর্মীদের একটি বড় অংশ রাজনীতির বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া সাবেক সাংসদ ও মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের দিকেও জাকির খানের কর্মীদের একটি অংশ ঝুঁকে ছিল।

 


সম্প্রতি গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শহরের দুই নং রেলগেট এলাকায় আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের যে তাণ্ডব শহরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এর দুইদিনের মাথায় ঢাকা থেকে আলোচিত ছাত্রদল নেতা জাকির খানকে গ্রেফতারের পর তার নেতাকর্মীরা নানা গল্পে শহর মাতাচ্ছেন। 

 


তারা বলছেন, এবছরে নারায়ণগঞ্জে সবচাইতে বড় জমজমাট রাজনৈতিক মহড়া তারাই দিতে পেরেছেন। এরপেছনে মূল শক্তি জাকির খান। দেশে না থাকলেও তিনি নানাভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করে আসছিলেন। নারায়ণগঞ্জের বড় বড় নেতাদের সাথে সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপিও জাকির খানের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত আছে। 

 


পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা সারাদেশে নারায়ণগঞ্জকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। এর পেছনে জাকির খানেরও অবদান রয়েছে বলে দাবি তাদের। তাদের ভাষ্য, জাকির খানের কর্মী সংখ্যা অনেক। জেলার সর্বত্র আওয়ামীলীগের শামীম ওসমানের মতোই জাকির খানের কর্মী সমর্থক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 

 


তাছাড়া জাকির খানের সাথে আগে শামীম ওসমানের নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চায়ের দোকানগুলোতে মুখরোচক গল্প ছড়ান জাকির খানের কর্মী সমর্থকরা। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সবচাইতে চর্চিত নাম জাকির খান। তার নেতাকর্মীদের আশা জাকির খান গ্রেফতার হলেও রাজনীতিতে জাকির খানের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়ে গেছে।

 


র‌্যাবের-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী, একচ্ছত্র, ক্ষমতার অধিকারী আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর গডফাদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যপক আলোচিত নাম জাকির খান। যার নামে ৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তিনি এসকল মামলায় জেল খাটেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। 

 


এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জ এর দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পিছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। 

 

 

এ সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে জাকির খান দোষী সাব্যস্থ হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা প্রদান করেন। এর পর থেকেই গ্রেফতার এড়াতে জাকির খান দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি দীর্ঘ দিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি ভারত হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করছিলেন।

 

 

সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যান জাকির খান, কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির।

 


১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ৪ বছর কারাগারে ছিলেন জাকির। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান। 

 


আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলে জাকিরের পরিবারের আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। ২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া করে আবার কারাবন্দি হন জাকির। 

 


২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই তৎকালীন বিএকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জাকির খান। মামলার পর থেকে বিদেশে পলাতক ছিলেন তিনি। এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর