শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কায়সারকে ছাপিয়ে যেতে কালাম বীরুর লম্ফঝম্ফ

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চারিদিকে প্রার্থীদের মধ্যে নানামুখী কার্যক্রম বিরাজমান।  নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ( সোনারগাঁ) আওয়ামীলীগের মনোনয়ন টিকেট পেতে ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। 

এ আসনে আওয়ামীলীগের হেভী ওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার। তবে মনোনয়ন  দৌড়ে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর বীরু ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম নির্বাচনী প্রচারণায় লম্ফঝম্ফ করে মনোনয়ন পাওয়ার  চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

রাজনৈতিক পরিসংখ্যানও বলছে, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন টিকেট দৌড়ে এগিয়ে আব্দুল্লাহ আল কায়সার। কেননা, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও বেশিরভাগ সময়ে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে বিএনপি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাতকে পরাজিত করে রেজাউল করিম এমপি নির্বাচিত হন। 

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান আবু নুর মোহাম্মদ বাহাউল হক। তাকে পরাজিত করে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ মহাজোট প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সার রেজাউল করিমকে পরাজিত করে এমপি হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের কারণে এ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামীলীগ। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ কমিটি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনেই নৌকার প্রার্থী দাবি করেছেন। 

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে কয়েকটি সভা-সমাবেশে নাসিক মেয়র আব্দুল্লাহ আল কায়সারের পক্ষে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন। এ আসনে কায়সারের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তরুণ সমাজের একটি বিশাল অংশ রয়েছে কায়সারের সাথে। 

কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচিগুলোতে কায়সারের ছিলো রাজসিক অংশগ্রহণ। এবার আওয়ামীলীগের টিকিট কায়সারকেই দেয়া হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় জনগণ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলেই এ আসনে নৌকার বিজয়ের সম্ভবনা সবচাইতে বেশি বলে মনে করেন তাঁরা। 

তবে গেলো কয়েক মাস ধরেই চোখে পড়ার মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর বীরু ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, হঠাৎ করে নির্বাচনী মাঠ দখল করার চেষ্টা করা হলেও মনোনয়ন টিকেট দখলে যাবে কায়সারের। 

কেননা, বিগতসময়ে এখানে এমপি থাকার সুবাদে আওয়ামীলীগের বেশ শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরী করতে পেরেছিলেন কায়সার। আর তাই মনোনয়ন বাগাতে বীরু-কালামের লম্ফঝম্ফ তেমন একটা কাজে আসবে না। প্রচারণা চালালেও দুই প্রার্থীই আওয়ামীলীগের যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তাঁর পক্ষে কাজ করবে বলে জানিয়ে আসছিলেন। 

কায়সারের সমর্থকরা জানান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ১টি পৌরসভা (সোনারগাঁ), ১০টি ইউনিয়নেই কায়সারের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বৈদ্দের বাজার, মোগরাপাড়া, পিরোজপুর, কাঁচপুর, শম্ভুপুরা, সাদিপুর, জামপুর, নোয়গাও, বারদী, সনমান্দী ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যেকটিতেই রয়েছে কায়সারের নেতৃত্বে শক্তিশালী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান।  

এছাড়া সাংসদ থাকা কালীন ব্যাপক কাজ করায় এবং  সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হওয়ায়  মনোনয়ন পেলে ৩ লাখ ৩ হাজার ৮২৮ ভোটারের বেশিরভাগই কায়সারের পক্ষে যাবে। 

তবে বীরু ও কালামের সমর্থকরাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যেভাবে তাঁরা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে ব্যাপক সাড়া তাঁরা পাচ্ছেন। মনোনয়ন হিসেনটি চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কোন কিছুই বলা যাবে না। 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপিকে ভোটের ব্যবধানে হারাতে আওয়ামীলীগ নতুন কোন প্রার্থীর তুলনায় পুরোনো প্রার্থীকেই বেঁছে নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর সেটি হলে আব্দুল্লাহ আল কায়সারই পেতে পারেন এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন।
 

এই বিভাগের আরো খবর