শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কাউন্সিলও শেষ, সমাদরও নাই

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইসহ কমিটির অন্য নেতাদের প্রতি যত যতœ ও আগ্রহ ছিলো তা কেবল থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরেই। কাউন্সিল পর্ব শেষ হতেই আর কদর, সমাদর কমে গেছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের।এমনটিই পরিলক্ষিত হয়েছে শনিবার ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। জেলা ও থানার অন্য নেতাদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ উঠেছে ওই সম্মেলনে। 


আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নমপার্কে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আড়াইহাজার পৌরসভার মেয়র সুন্দর আলী। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ তিনি স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে কেউ বসতে দেয়নি। সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ সাংসদ শামীম ওসমানের অনুগামী বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাও চেয়ার দখল করে থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সসম্মানে চেয়ার ছেড়ে দেননি। পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর মৃদু বাক্য বিনিময়ের পর তাদের বসতে দেয়া হয়। 


বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আড়াইহাজার পৌরসভার মেয়র সুন্দর আলী বলেন, কাউকে অসম্মান করে রাজনীতিতে ভালো কিছু পাওয়া যায়না।এটি হচ্ছে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। অনেকে নিজেদেরই অনেক বড় নেতা মনে করে। জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের কেউ বসতে দেয়নি। এই চর্চার পরিণতি দলের জন্য কখনো ভালো হতে পারেনা। 


সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছে। এসময় তার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পরও বসতে না পেরে তারা অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান। তাদের চলে যাওয়ার ব্যাপারটিতেও কারো ভ্রুক্ষেপ ছিলোনা। 


সূত্র জানিয়েছে, প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বক্তব্য রাখার সময় মহানগর কৃষক লীগের জিল্লুর রহমান লিটনসহ আরো কয়েকজন নাসিক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টার মামলা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে বাধা প্রয়োগ করেন এমন অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল হাই কিছুতেই মামলা বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলেননা।

 

কিন্তু এরপরেও নানাভাবে বেশ কয়েকজন উচ্চবাচ্য করে তাকে এবিষয়ে বক্তব্য রাখতে বলেন তারা। শেষ পর্যন্ত চাপাচাপিতে আব্দুল হাই তার বক্তব্যে মামলা প্রসঙ্গে একটি লাইন জুড়ে দেন।


এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘অনেকেই তো আমাকে অনেক কথা বলতে বলেন। তবে সভাপতি হিসেবে আমি সবকিছু বলতে পারিনা। মামলা প্রসঙ্গে অনেকে অনেক কথা বললেও আমি আমার অবস্থান থেকেই কথা বলেছি। আমি বলেছি, একটি মামলা হাইকোর্ট থেকে এখানে এসেছে, তো হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ প্রশাসন তারা এটা তদন্ত করবেন। এবং আমি আশা করি সঠিক তদন্তই করবেন আর বিচার করবেন আদালত।

 

কারা সেদিন আক্রমণ করেছিলো? কেন আক্রমণ করেছিলো? কী কারনে আক্রমণের অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিলো? আমি মনে করি এটার সঠিক তদন্ত হবে। সঠিক তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসবে।’ 

 


তবে মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান লিটন জানিয়েছেন, ‘সম্মেলনে দুপুরের সময় খাবারের সময় হয়ে গিয়েছিলো। এসময় আমি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু চাচকে জিজ্ঞাসা করেছি খাবার দিয়ে দিবো কিনা। ব্যস এটুকুই।

 

কিন্তু একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে আমি ধমক দিয়েছি বলে রটিয়ে দেয়। আসলে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই আমার পিতৃতুল্য। তাকে সকলেই সম্মান করে। তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার মতো দুঃসাহস আমার নাই।’ 


জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনকে ঘিরেই বিভিন্ন উপজেলায় সভাপতিসহ অন্যান্যদের সমাদর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের পর তাদের আসল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কারও মনঃপুত না হওয়ার পরে এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই নানা উপলক্ষ তৈরি করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে অসম্মান করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

 

যে বাড়তি খাতির যতœ দেখানো হয়েছিলো তার মূলে ছিলো সম্মেলনের তারিখ ও নেতা নির্ধারণ। ব্যস, সেটি নিশ্চিত করার পরই কদর কমিয়ে দেন তারা। 
 

এই বিভাগের আরো খবর