শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ওয়াজিদের আব্বু, আমার ছেলে আর তোমার কাছে ক্যাপ চাইবো না

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘ওয়াজিদের আব্বু আমার ছেলে আর তোমার কাছে ক্যাপ চাইবো না। তুমি দোকানের থাইকা বাড়িতে আসলে খালি তোমার কাছে ক্যাপের কথা কইতো । আমার বাবায় এখন আর তোমার কাছে ক্যাপ চাইবো নাগো ওয়াজিদের আব্বু।


সন্তানের মৃত্যুর খবরে আহাজারী যেন থামছেই না কাকলী বেগমের। তার কান্নায় চোখ ভরে উঠছে উপস্থিত লোকজনের। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ১নং বাবুরাইল মুন্সিবাড়ি এলাকায় ভবন ধসের ৪৭ ঘন্টা পর নিখোঁজ স্কুল ছাত্র ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদ (১২)এর  মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

 

দুপুর ২টার দিকে ওয়াজিদের মরদেহ শনাক্ত করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা । পরে  দেড় ঘন্টা প্রচেষ্টায় বিকেল সাড়ে তিনটায় ধসে যাওয়া ভবনটির নিচতলার একটি ভিমের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় ।


ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদ (১২)  নারায়ণগঞ্জ ১ নং বাবুরাইল এইচএম ম্যানশনের বাসিন্দা আব্দুল রুবেল ও কাকলী বেগমের সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ওয়াজিদই ছিলো বড়। তার চঞ্চলতা আর নানা আবদারে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখত পুরো পরিবারকে।


কখনও ঝুমা ফুপু’র কাছে মুরগীর মাংসের তরকারি খেতে চাওয়া, কখনও নতুন ব্যাগ, নতুন জুতার আবদার। সব আবদারই মিটিয়ে ছিলো বাবা-মা। সর্বশেষ বাবা আব্দুর রুবেলের কাছে একটি ক্যাপ চেয়েছিলো ওয়াজিদ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ওয়াজিদ আজ শুধুই স্মৃতি।


গত দু’দিনের অপেক্ষা মঙ্গলবার দুপুরে সন্তানের মৃত্যুর কথা শুনে পাগল প্রায় মা কাকলী বেগম ও বাবা আব্দুল রুবেল। বার বার সঙ্গা হারাচ্ছে কাকলী বেগম। ক্ষণে ক্ষণে ছেলেকে খুঁজে বেরাচ্ছে। তার আহাজারিতে চোখ ভরে উঠছে সকলের। মঙ্গলবার দুপুরে এইচএম ম্যানশনে যাওয়ার পর দেখা যায় এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ওয়াজিদের মৃত্যুর খবরে ভারী হয়ে উঠেছে ১ নং বাবুরাইলের এইচএম ম্যানশন। বাদ মাগরিব কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


গত ৩ নভেম্বর ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২শিশু, আহত আরো ৫। এদিকে এ ঘটনায় সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে নিহত স্কুলছাত্র  শোয়াবের মামা রিপন হোসেন বাদী হয়ে বাড়ির মালিকসহ ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ।

 

সুরতাহাল শেষে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহত শোয়েবের মামা রিপন হোসেন চার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ ও অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।


এদিকে ভবন ধসে পড়ার ঘটনায়  গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেহানা আক্তার জানান, তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভবনটি রাজউক বা কোনও সংস্থার কাছে থেকে অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল কিনা, ভবনের নকশা প্রনয়ণ করা হয়েছিল কিনা এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে নির্ধারিত সময়েল মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হবে।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ভবনটির মালিকানাধীন রয়েছে জয়বুন্নেছা বেগম ও তার চার সন্তান- আজহার হোসেন, শিউলি বেগম, বাবু, ও সুমন।তাদের মধ্যে দুই মালিক আজহার হোসেন ও বাবু মালোশিয়া প্রবাসী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


আরো জানা যায়, এই ভবনের মালিক বাবুরাইল এলাকার মৃত মো. রফিকের স্ত্রী জয়বুন্নেছা। তারা চার ছেলেমেয়েসহ এ ভবনে  ৩টি পরিবার থাকেন। নিচতলায় শুধু ভাড়াটিয়া ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, শনিবার আসরের আজানের পর ভবনটি হেলে পড়ে। এ সময় বাড়ির মালিকদের কেউই ছিলেন না।

 

ধসে যাওয়া ভবনটির পাশের ভবনের বাসিন্দা তাসলিমা জানান, "ধ্বসে পড়া বিল্ডিংটি এমনিতেই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিলো। নিচে তেমন কোনো বেসমেন্ট ছাড়াই ভবনটির চতুর্থ তলার নির্মাণ কাজ চলছিল। এই কারণেই ভবনটি ধসে পড়েছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর