শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

একমাসে ৬ প্রাণ ঝরিয়ে লকডাউন পুরো নারায়ণগঞ্জ 

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : কেউ কি ভাবতে পেরেছিল বৈশ্বিক মহামারী করোনা তান্ডব চালানোর জন্য নারায়ণগঞ্জকে বেঁছে নেবে? সারাদেশে যখন করোনা নিয়ে আলোচনা মৃদুভাবে চলছে তখন হুট করেই ৮ মার্চ খবর রটে যায় সারাদেশে ৩ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে যার ভেতর দুইজননারায়ণগঞ্জের। এরপর দিনযত গড়িয়েছে অবস্থার অবনতিই ঘটেছে। ৮ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল একমাসের ব্যবধানে এক নারায়ণগঞ্জেই ঝরেছে ৬ প্রাণ, আক্রান্ত হয়ে আছেন ৩৮ জন। সামনে যে আর কত প্রাণ ঝরবে তা নিয়ে আতঙ্কিত পুরো নারায়ণগঞ্জ। আইইডিসিআর নারায়ণগঞ্জকে ক্লাস্টার এরিয়া (রেড জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল দুইদিন আগে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশ মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পুরো সিটিকে লকডাউন করার অনুরোধ করেন। সাংসদ শামীম ওসমান পুরো জেলাকে অনুরূপভাবে লকডাউনের আহবান জানান। নড়েচড়ে বসেছিল অবশ্য প্রশাসন। কিন্তু এরপরেও উন্নতি না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আইএসপিআরের এক চিঠিতে এই ঘোষণা আসে।   

 

৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের জয়নাল প্লাজার ভাড়াটিয়া বিদেশ ভেরত দুইজনের দেহে করোনার উপস্থিতি টের পায় আইইডিসিআর। তবে এরপরেও আরো ২২টি দিন কিছুটা স্বস্তিতে কেটে গেছে নারায়ণগঞ্জবাসীর। তখনো কেউ ভাবতে পারছিলনা সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে! 

 

করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩০ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে নাসিক ২৩নং ওয়ার্ডের রসূলবাগ এলাকার জিএ রোডের পুতুল বেগম (৫০) বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। দুইবার স্ট্রোক করা সেই নারী করোনার উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কুর্মিটোলায় যেতে বললে তিনি আর যাননি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন সেখানে যান সেখানেই তার মৃত্যু হয়। স্বাভাবিকভাবে তাকে কবর দেয়ার পর  ২ এপ্রিল লকডাউন করা হয় রসূলবাগের জিএ রোড। পরে ওই নারীর সংস্পর্শে আসা ও তার অবস্থান টার্গেট করে একেরপর এক লকডাউন আর হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর খবর আসে।    

 

গত ৪ এপ্রিল সকালের  রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আমবাগান এলাকার বাসিন্দা আবু সাইদ মাতবর (৫৫)। নিহতের ছেলেও জানান, তার বাব শ^াসকষ্ট ও কাশি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল হয়ে কুর্মিটোলায় যান। সেখানেই তিনি মারা যান। পরে আইইডিসিআরের পরীক্ষায় সাইদ মাতবরের করোনা থাকার কথা জানা যায়। 

 

একই দিন ৪ এপ্রিল রাতে মারা যান দেওভোগ আখড়া মোড় এলাকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ (৫৮)। তার মৃত্যুও হয়েছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। ২৭ মার্চ জ¦র, কাশি নিয়ে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে তিনিও গিয়েছিলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে। মারা যাওয়ার পর তার স্বজনদের আইইডিসিআর জানান, করেনায় প্রাণ গেছে চিত্তরঞ্জন ঘোষের। 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৩নং ওয়ার্ডের জামতলা ব্রাদার্স রোডের  গিয়াস উদ্দিন (৬০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৫ এপ্রিল। মৃত্যুর একদিন আগে অসুস্থ্য হয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে। 

 

৬ এপ্রিল শহরের ১৮নং ওয়ার্ডের শীতলক্ষ্যা এলাকার ফারুক মারা যান কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর নেয়া নমুনায় করোনা পজিটিভ আসে তার। 

 

৭ এপ্রিল করেনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় মাসুদা প্লাজার মালিক এমএ হাসান। কুর্মিটোলা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুত্যু যেমন মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। তেমনি শহরের নানা জায়গায় মানুষের মৃত্যুতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সবাই। করোনায় মৃত্যু না স্বাভাবিক মৃত্যু এই দ্বিদ্বায় মানুষ লাশ ফেলে রাখছে। কেউ সামনে যাচ্ছেনা। প্রতিটি মুহুর্ত্ব যেন সবার মৃত্যুপুরীতে কাটছে! একমাসের ব্যবধানে  করোনার থাবায় প্রাণ গেছে ৬ জনের, সামনেও যে করোনার কড়াল গ্রাসে আর কত প্রাণ যাবে তা নিয়ে আতঙ্কিত পুরো নারায়ণগঞ্জবাসী।
 

এই বিভাগের আরো খবর