শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অরক্ষিত ঐতিহাসিক সোনাকান্দা দুর্গ, প্রাচীর ঘেঁষে আবর্জনার স্তুপ

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২০  

শাহজাহান দোলন (যুগের চিন্তা ২৪) : বন্দর বাজার থেকে সোনাবিবি রোড দিয়ে মদনগঞ্জ যাওয়ার পথে মূল সড়কের পাশেই চোখে পড়ে ঐতিহাসিক সোনাকান্দা দুর্গ। মূলত বাংলার সুবেদার মীর জুমলার সময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে ঢাকার আশেপাশে ৩টি জল দুর্গ নির্মাণ করা হয়। শীতলক্ষ্যার পূর্বতীরে মোঘল আমলে তৈরি সোনাকান্দা দুর্গ তার মধ্যে একটি। 

 

মোঘলদের প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর প্রমাণ বহনকারী দৃষ্টিনন্দন এই দুর্গটির এখন বেহাল দশা। মূল সড়ক থেকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়বে দুর্গের পূর্বদিকের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিশাল ময়লা আবর্জনার স্তুপ। সঙ্গে রয়েছে ব্যাঙের ছাতার মতো বেশ কয়েকটি লাউয়ের ঝাঁকা ও ভাসমান টং দোকান। এছাড়া দুর্গের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের প্যাকেট, কাঠের বড় বড় গুড়ি, গবাদি পশুর বিষ্ঠা এবং অন্যান্য অবর্জায় সয়লাব। যা দুর্গের পরিবেশ এবং সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে। সরেজমিনে গিয়ে ঠিক এমনটাই দেখা যায়। 

 

এ বিষয়ে কথা হয় হাবিব নামে স্থানীয় এক যুবকের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে এই দুর্গটি নাসিকের ২১ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। দুর্গের আশেপাশের বাড়িগুলোতে প্রতিদিন যেই ময়লা জমে তা ঠিকমতো অপসারণ করা হয়না তাই লোকজন এখানেই ময়লা ফেলে এছাড়া দুর্গের পাশেই অবস্থিত একটি বিস্কুটের কারখানার সকল অবর্জনা এখানেই ফেলা হয়। ফলে দুর্গের সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

 

সোনাকান্দা কেল্লা জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এই দুর্গের ভেতরে এবং আশেপাশের পরিবেশ অবশ্যই আমাদের পরিষ্কার রাখা উচিৎ। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের অসচেতনতার কারণে আজকে এর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ময়লার জন্য দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এখানে এলাকার লোকজন এবং সিটি করপোরেশনের একটু সুদৃষ্টি দিলেই দুর্গটি আগের রূপ ফিরে পাবে।

 

আর দুর্গের ভেতর ময়লার বিষয়ে এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার বলেন, আসলে দুর্গের সামনে ময়লা ফেলার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পাশেই অবস্তিত একটি বিস্কুটের কারখানা। এদের ময়লাই দুর্গের সামনে বেশি ফেলা হয়। তাই দ্রুতই তাদের আইনেই আওতায় আনা হবে। এবং দুর্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সামনেই গাছ-পালা রোপণ করা হবে।

 

অন্যদিকে দেখা যায়, উত্তর দিক দিয়ে দুর্গের একমাত্র প্রবেশদ্বারের বড় একটি অংশ ভেঙে গেছে। চারপাশে স্থাপন করা কামান দাগানোর প্লাটফর্মগুলোর দেয়ালের আস্তরণ খসে পড়ছে। উত্তর দিকের লম্বা মঞ্চটির গায়ে ছোট-বড় গর্ত। স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিন আগেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দুর্গটি পরিদর্শন করলেও বর্তমানে তা অরক্ষিত।

 

রজব আলী নামে একজন বলেন, এলাকার ছেলেরা এই স্থাপনার মূল্য বোঝেনা। রাতের বেলায় মাদক সেবন করে দুর্গের গায়ে ধাতব বস্তু দিয়ে আঁকাআঁকি করে। তাই দ্রুতই এই দুর্গটি রক্ষা করা প্রয়োজন।

 

এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক হান্নান মিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জের দুর্গগুলো নিয়ে আমার একটি বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে সর্বপ্রথমই রয়েছে কাঠামোগত উন্নয়ন যেটা দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। আমাদের লোকবলের একটু সংকট রয়েছে তবুও আমি এই দুর্গগুলো অবশ্যই সংরক্ষণ এবং মেরামত করবো। 

এই বিভাগের আরো খবর