শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অযত্নে অবহেলায় জিউস পুকুর, তবুও ভীড় জমাচ্ছে ‘অতিথি পাখি’

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : কিচিরমিচির রবে পুকুরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছে একঝাঁক পাখি। পুকুরের ছোট ছোট গাছ আর কচুরীপানার ফাঁকে ফাঁকে উষ্ণতার পরশ খুঁজছে পাতিসরালীর দল। চারপাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে ফিঙে, বক, পাতিসরালী আর পানকৌড়িসহ নানান পাখির দল।


এ যেন পাখির অঘোষিত অভয়ারণ্য। দৃশ্যটি এখন দেওভোগ জিউস পুকুরপাড় এলাকার প্রতিদিনকার। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে এ অতিথিদের আগমনে মুখর হয়ে উঠে এ এলাকাটি। সেখানে পাখির মিষ্টি কলতান আর জলকেলানির শব্দে প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙে মানুষের। দিনভর নানান প্রজাতির পাখিদের ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর পুকুরের পানিতে হুটোপুঁটিতে প্রাণচঞ্চল করে রাখে পুরো এলাকা।


সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল। স্থানীয় উদ্যোগে এলাকাটিকে ঘোষণা করা হয়েছে “পাখি শিকার মুক্ত এলাকা” হিসেবে। আর এ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন এলাকাবাসী। পাখি শিকার রোধে তারা যথেষ্ট সচেতন। নাসিক ১৪ নং ওয়ার্ড এলাকায় পাখিদের সমারোহ রীতিমতো মনোমুগ্ধকর। প্রতিদিনই সেখানে পাখি দেখতে যান বিভিন্ন এলাকার মানুষ।


ভুঁইয়ারবাগ এলাকার বাসিন্দা ইতি আক্তার জানান, এত সুন্দর দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রতিদিন সকালেই এ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে। আর বিকেল হলে পুকুরটির চারপাশ ঘিরে পাখিদের মেলা বসে।  


সোমবার এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, পাখিদের কলরবে মুখরিত চারপাশ। ময়লা আর কচুরীপানায় ঠাসা জিউস পুকুরটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এ অতিথি পাখিদের আবাসস্থল। স্থানীয়রা বলছে, প্রতি বছরই শীতের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে এ জিউস পুকুরে। কিন্তু অযতেœ অবহেলায় আবর্জনা ভরপুর পুকুরটি এখন মৃতপ্রায়। তবুও যেন এ অতিথি পাখিদের আগমনে আবারো নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ পুকুর।
একসময় জিউস পুকুরটি ছিলো স্থানীয় এলাকাবাসীদের কাছে আর্শীবাদ স্বরূপ। কিন্তু অযতেœ অবহেলা এ পুকুরটির পার ঘিরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ আর দূর্গন্ধ পুকুরটি এখন স্থানীয়দের কাছে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।


জানা যায়, ১১৭৩ বাংলা সনে দেওভোগ জিউড় আখড়া মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার করার সময় পূঁজোর কাজের জন্য বিকরণ ঠাকুর মন্দিরের পাশে একটি বিরাট দিঘি খনন করেন। মন্দিরটির নাম অনুসারে এ দিঘিরটির নাম দেওয়া হয় জিউস পুকুর। এ পুকুরটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রতিমা বির্সজনসহ নানা পুঁজোনীয় কাজে ব্যবহার করতো।

 

পৌষ সংক্রান্তির সময় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গোটা দেওভোগবাসীর সর্বধর্মের প্রায় হাজার হাজার মানুষ এ পুকুর ঘাটে স্নানের মধ্যে দিয়ে পৌষ তথা শীতকালকে বরণ করে নিত। শুধু তাই নয়, তখন এ পুকুরের জল এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে, এ জলপান করে স্থানীরা জীবন ধারনও করতো।


শত শত বছর পুরানো ঐতিহাসিক জিউস পুকুরটি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট ও দালানকোঠা। বাকি একাংশের অর্ধাংশ ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে আর সর্বশেষ যতটুকু রয়েছে তাও কচুরীপানা দিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।


স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, মূলত রক্ষাবেক্ষণের অভাবেই এ পুকুরটির এমন খারাপ অবস্থা হয়েছে। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের নির্বাচিত  জনপ্রতিনিধিরা এ পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও বাস্তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ।


নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দীন শফি জানান, এ অতিথিদের পাখিদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য মসজিদে মাইকিং করে এ পাখিদের ক্ষতি না করার জন্য সাবধান করে দেয়া হয়েছে। 

এই বিভাগের আরো খবর