শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অব্যবস্থাপনায় ‘লাশকাটা ঘর’

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : প্রায় প্রতিদিনই খুন, আত্মহত্যা, অপমৃত্যুসহ নানা ঘটনায় জর্জড়িত থাকে নারায়ণগঞ্জ। এসব ঘটনার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে ময়নাতদন্ত করা হয়। এ জেলার ৭টি থানার ময়নাতদন্তের জন্য রয়েছে ১টি লাশকাটা ঘর (মর্গ)। 


লাশকাটা ঘর থাকলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা। আধুনিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় কোন রকমে চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। খুন, আত্মহত্যা, অপমৃত্যু, দূর্ঘটনা সহ সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পথ ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তে সঠিক তথ্যেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচন হয়। 


যার ফলরূপ পাওয়া যায় ন্যায়বিচার। লাশকাটা ঘরে (মর্গ) ময়নাতদন্তের কাজ সম্পাদন হয়। কিন্তু সেই লাশকাটা ঘরের অবস্থা যখন বেহাল। তখন ময়নাতদন্তে সঠিক তথ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ডাক্তারগণ কর্তৃক জানা যায়, লাশ পঁচে গেল অনেক সময় মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয় না।


নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) লাশকাটা ঘর নির্মিত। মর্গ থাকলেও মর্গের সকল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। মরচুয়ারি (মৃত দেহ সংরক্ষণের হিমাগার) নেই, নেই কফিন (কাঠের বাক্স)। মর্গে এ বছর প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতির আনয়নের কথা থাকলেও যন্ত্রপাতির আনয়ন হবে কিনা সেটা এখনো অনিশ্চিত।  


সরজমিনে দেখা যায়, মর্গের প্রথম জানালাটি ভাঙ্গা, ভিতরে গিয়ে দেখা যায় মর্গের দুটির কক্ষের অধিকাংশ জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। এসি চারটি। তবে এর দুটি নষ্ট। একদিকে জানালার কাঁচ ভাঙ্গা অন্যদিকে এসির কার্যকারিতা কম হওয়ায় মর্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে নেই। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় মর্গের মেঝে অপরিচ্ছন্ন।

মর্গে ময়না তদন্তের সময় সকাল ৮ থেকে বিকাল ৫টা। দিনের অন্য সময়ে লাশ আসলে পরদিন লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। মর্গের অধিক সময় লাশ পড়ে থেকে লাশে দ্রুত পঁচন ধরে। অতিরিক্ত লাশ হলে মর্গে লাশ এনে ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন স্থানে ফেলে রাখা হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলে লাশের ময়নাতদন্ত।


বিভিন্ন সূত্রমতে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রয়াত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাসিম ওসমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মর্গ হাউজটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৭ বছরেও মর্গের ব্যবস্থাপনায় কোন উন্নতি করা হয়নি। একই সংখ্যক এসি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে মর্গের কার্যক্রম চলছে।

মর্গের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী কর্তৃক জানা যায়, জেলায় একাধিক খুন সহ অন্যান্য ঘটনায় লাশ আসলে দুটো লাশ ব্যতীত সব লাশ নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। লাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পুরো মেঝে ভাসে। পরদিন লাশ কাটতে কাটতে লাশ পঁচে যায়, দূর্গন্ধ বের হয়।  


মর্গের তত্ত্বাবধায়ক দরবন বলেন, মর্গে লাশের সংখ্যা বেশি হলে লাশ নিচে রাখি। আর ঝড়ের বাতাসে জানালার কাঁচগুলা ভাইঙ্গা গেছে। আমরা হাসপাতালের স্যারকে জানাইছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সব ঠিক হগয়ে যাইবো।  


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মর্গ পরিচালিত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জানা যায় মর্গের সমস্যা সম্পর্কে গনপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে।  


সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, মর্গের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি আগামীকাল মর্গ দেখতে যাবো। যেকোন সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  


গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এই বিষয়ে বলেন, আর ২০১৮ সালে মর্গের আধুনিক ব্যবস্থাপনার জন্য মরচুয়ারি কুলারের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। গত বছর অনুমোদন পাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা অনুমোদন পায়নি। মর্গে গত বছর কিছু সমস্যা ছিল। 


আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আমরা ঠিক করে দিয়েছি। এরপর মর্গের কোন সমস্যা সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। মর্গের সমস্যা সম্পর্কে আমাদের জানানো হলে আমরা ঠিক করে দিব।
 

এই বিভাগের আরো খবর