শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অনেকে গেইম খেলে, অনেকে খেলায় : শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, আমার নিজের ভোটের সময়ই আমি কোথাও ভোট চাই নাই। কারণ ভোট চাওয়া মানে অপমান করা। আপনার নিজেরই বুঝ আছে আপনি কাকে ভোট দেবেন। আমি ২১ জনসভাও করেছি একদিনে নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো, উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে সচেতন করা। পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোতেও ভোট চাওয়া মানে অপমান করা।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাষাঢ়া নিউ সমবায় মার্কেটের ষষ্ঠতলায় বার নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

 

মোহসীন-মাহবুবের এই প্যানেলটি যদি বিএনপির প্যানেলও হতো তবে নিজে ভোটার হলে তাদেরই ভোট দিতেন বলে মন্তব্য করেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আইনজীবীদের অঙ্গন প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই তাদের ভোট দেয়া উচিত। সিনিয়রদের নির্দেশনায় বর্তমান প্যানেলের সবাই নানা জায়াগায় গিয়েছেন, কথা বলেছেন। এতো কাজ করার পরও যদি তারা ভোট না পায় তবে আগামীতে কোন প্যানেল কাজ করবেনা। তাঁরা পাশ না করলে দুই কোর্ট একসাথে থাকবেনা। কাজ করলে কাজের মূল্যায়ন পাওয়া যায় একারণেই আপনি তাদের ভোট দেবেন। 

 

বার নির্বাচনে এবার নিজে বেশি উৎসাহী হবার কারণ ব্যাখ্যা করে শামীম ওসমান বলেন, আমার এক বন্ধু হঠাৎ করে একদিন একটা বুদ্ধি দিল। বুদ্ধিটি হলো পুরাতন কোর্টের এই ভবনটির কি হবে। তখন আমি গত পরশু আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বললাম এই বারভবনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়ে দেন এবং এটিকে একটি আধুনিক হার্ট ইন্সটিটিউট করেন। আর ইন্টারচেঞ্জ করে সিজেএম কোর্ট বার এলাকায় করে দেন। তিনি আমাকে ডিও দিতে বলেছেন। এটি হলে মানুষের জন্য বিশাল উপকার হবে। 

 

শামীম ওসমান বিএনপি প্যানেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি অবাক হয়ে যাই আমার বন্ধু হুমায়ূন-জাকির। ওরা আমাকে বললো বর্তমান পর্ষদকে (জুয়েল-মোহসীন) কনটিনিউ করা উচিত। তারা আবার দাঁড়িয়ে যায়। আসলে আমার মাঝে মাঝে ঘিন্না (ঘৃণা) লাগে। কে জানি পেছন থেকে বলে দুই লাখ, দুই লাখ, কিসের দুই লাখ আমি জানিনা। এগুলো আমি বলতে চাইনা। বিএনপি মানিনা, মানবোনা বলে যেই চিৎকার করে ২০০১ সালের আগের কথা মনে করিয়ে দিলে কারো নারায়ণগঞ্জে থাকার কথা না আর এখন গণতন্ত্রের চর্চা দেখাননা। কপাল ভালো আমরা ধৈর্য্যশীল আছি, আপনাদের মতো ভুল করিনা। নারায়ণগঞ্জে কিছু লোক আছে যারা এজেন্সি নিয়া নিছে যারা ১১ জন বক্তৃতা দেয় আর ৯ জন শোনে। দুইজন বক্তৃতা দিয়ে চলে যায়। এরা হয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ায় নয়তো শহীদ মিনারে দাঁড়ায়।

 

শামীম ওসমান গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, এদের আবার দুইএকটা পত্রিকা আছে মুখপাত্র। আমি দেখিনা। দেওয়ালে লাগায়। পত্রিকা আবার দেওয়ালে লাগায় নাকি? এই পত্রিকা আবার বারের ইলেকশন নিয়া কত গল্প কত কিছু? আমি দেখি নাই শুনছি। আরে বাবা, মনে হইলো কি একটা অশুদ্ধ হইয়া গেছে। দিপু বইসা যাওয়াতে দিপুরে কি তিরস্কার! আমি চ্যালেঞ্জ কইরা বলতাছি যে সাংবাদিক ওই পত্রিকা চালায় সে জার্নালিষ্ট বানানটাও লেখতে পারবেনা। আমার ছেলে ও মেয়ে একটা প্রশ্ন করেছে ডাক্তার হতে গেলে ডাক্তারি পড়তে হয়, লইয়ার হতে গেলে ল পড়তে হয় যারা জার্নালিস্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের জার্নালিজম পড়তে হয়না? নারায়ণগঞ্জে ৯০ভাগ সাংবাদিক খুব ভালো, সৎ। অনেকে আছেন যাদের ঘরে খাবারও নাই। এটি সত্য তারপরেও তারা দুই নম্বরি করেনা। সবাই মিলে খারাপ জিনিসগুলো বন্ধ করতে পারেন। এটা আমাদের নারায়ণগঞ্জ।

 

শামীম ওসমান বলেন, ধান্দা করতে আসি নাই। অনেকে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাজেন। অনেক দরদ দিয়া হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেন। অনেকের আগে কিছুই ছিলোনা, এখন এতো কোটি টাকার মালিক কোথা থেকে হলেন প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবেননা। সজলদের বাসায় ড্রাইভারিও করছে অনেকে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ চেঞ্জ করতে হবে। 

 

বার নির্বাচনে গতানুগতিক নির্বাচন হলে খুব একটা ভালো নেতৃত্ব আসবে না এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্যানেল গঠনের জন্য মনোনয়ন বোর্ড হয়েছিলো। মোহসীনের নাম ছাড়া আমি কারো নামই দেখি নাই। এরমধ্যে কিছুটা মনমালিন্য হয়েছে ওটা আসলে গ্যাপ মেরামত। অনেকে গেইম খেলে, অনেকে খেলায়। কিছু লোক আছে খেলায়া মজা পায়। খেলছে। যখন কথা হয়েছে, খেলা শেষ হয়ে গেছে। প্যানেলে হয়তো দুই-চার-দশজন চেঞ্জ হতো। মনোনয়ন বোর্ডের কাছে মনোনয়ন না চাইলে তারা মনোনয়ন দেবে কি করে? বর্তমানে যেই প্যানেল দেয়া হয়েছে সেটি আগামী দিনে কাজ করবে কি করবেনা ওটার নির্ধারণী প্যানেল বলে মন্তব্য করেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আইনজীবীরা কতটুকু জ্ঞানী তা নারায়ণগঞ্জের মানুষ দেখতে চায়। 

 

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কাজ করলে মূল্যায়ন পাওয়া যায় এটা প্রমাণ পেলেই মানুষ কাজ করবে। ২৯ তারিখে ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ দেবে, কেন ভোট দিবে সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যাতে আইনের শাসন পায়।  

 

শামীম ওসমান মজা করে বলেন, আমিও আইনজীবী তবে খোকন সাহা-দিপুর চক্রান্তের কারণে আমি সনদ নিতে পারি নাই। আসলেই সত্যি! আমি তাদের জন্য সনদ নিতে পারি নাই। তখন তো সহজ ছিলো। কারণ তারা ভেবেছিলো আমি সনদ নিলে তাদেরটাতে ভাগ বসাবো।  

 

একই অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, মোহসীন-মাহবুব প্যানেল পাশ করলে একমাসের মধ্যে বারের লাইব্রেরীর বই কেনার জন্য আমি এক লাখ টাকা দিবো। ইতিমধ্যে ডিজিটাল বার লাইব্রেরী নির্মাণের জন্য সেলিম ওসমান তিনকোটি টাকা দিয়েছে। যদি আরো টাকার প্রয়োজন হয়। তাহলে আমি খোকন সাহা, বাদল, চন্দন নিজে গিয়ে সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে আসবো। এই প্যানেল যদি পাশ করে তাহলে আমি কথা দিলাম আমরা এই ডিজিটাল বার লাইব্রেরীর জন্য সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা আরো টাকা আনতে পারবো।

 

জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ বারকে ডিজিটাল বার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অগোচরে অনেকে কাজ করছেন। তার মধ্যে রয়েছে আমার নেতা খোকন সাহা, বাদল, চন্দনশীল নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, সাবেক সভাপতি সোহেল, নিপুসহ আরো অনেকে। আমি গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে যে  বারভবন হচ্ছে তা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বার ভবন। আমরা কখনও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী, জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য বারের ফান্ড থেকে টাকা নেইনি। কিন্তু সাখাওয়াত সাহেব সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য বার থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে সাখাওয়াত সাহেব বড় কথা বলেন।

 

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নারায়গঞ্জ জেলার সভাপতি চন্দন শীল বলেছেন, দুই-একটা মোশতাক থাকতে হয়। ২০২০ এ মোশতাকদের পিষে ফেলবো। ২৯ তারিখ আমরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।

 

সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা  এম এ রশীদ ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি এড. আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল, সাবেক নারী সাংসদ এড.হোসনে আরা বাবলী, সিনিয়র আইনজীবী এড. মাসুদুর রউফ, এড. শামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, এড. তারাজুদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, ইয়ান মার্চেন্টের সভাপতি লিটন দাস, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবু জাহের, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ শাহ্ নিজাম, রূপগঞ্জ উপজেলা  চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূঁইয়া, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম এ রশিদ,  সোনারগাঁ ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের  চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল ভুঁইয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, মোহসীন-মাহবুব প্যানেলের প্রার্থীরা। 

এই বিভাগের আরো খবর