শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গণ পরিবহণে নৈরাজ্য : সমাধান (৩)

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭

গাড়ী রক্ষনাবেক্ষনে মালিকদের উদাসীনতা : একটি বাস ক্রয় করার পর মালিক মনে করে যে, বাসটি একটি Money Earning Machine হিসাবে ব্যবহ্নত হবে এবং সে চিন্তাধারা থেকেই গধরহঃধরহধহপব করার জন্য অর্থ খরচ করতে চায় না যতক্ষন না পর্যন্ত গাড়ীটি বিকল হয়ে যায়। বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান হিসাবে উন্নতমানের Bus Service যে সকল রাষ্ট্রে রয়েছে যেমন- সিঙ্গাপুর, বৃটেন, কলোম্বিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় Bus Service Corporation এবং Depot গুলি স্বরজমিনে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেখানে দেখেছি যে, তাদের Bus Service থেকে উপার্জনের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে Bus নিয়মিত Maintance এর জন্য রেখে দেয়া হয়, যা শুধু Maintance কাজে খরচ হয়ে থাকে। বিআরটিসি’র গাড়ী Maintance করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপক দূর্নীতি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন মালিকরা ব্যাংক লোন পরিশোধসহ অধিক মূনাফার জন্য Maintance এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে উৎসাহ বোধ করে না। চলন্ত অবস্থায় গাড়ী নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলার এটাও একটি কারণ। রোড ম্যানেজমেন্টে কর্তৃপক্ষের অদূরদশিতা : বাংলাদেশে এক ডির্পাটমেন্টের সাথে অন্য ডির্পাটমেন্টের কাজের কোন সমন্বয় নাই। যেমন সিটি কর্পোরেশন রাস্তা মেরামত করায় পরের দিনই ওয়াসা বা টিন্ডটি তাদের প্রয়োজনে রাস্তা কাটাশুরু করে। ইতোপূর্বে গবেষণামূলক তথ্যাদিতে দেখা যায় যে, বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে মহাসড়কে দূর্ঘটনার ঝুকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করা হলে সুপারিশ মোতাবেক তা এখনো প্রস্তাব মোতাবেক সংশোধন করা হয় নাই। ঢাকা মানগরীতে Over Bridge গুলি সম্পূর্ণ রুপে চালু হলে যানযটের বিষয়টি মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা বুঝা যাবে। Over Bridge, Fly over সহ বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে জনসংখ্যা ও প্রাইভেট কারের অধিক্যোর কারণে “যানজট” সাধারণ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান হবে না। কোলম্বিয়ার রাজধানী বোগটা শহরে ২০০৫ ইং সনে গণ পরিবহণ মেনেজমেন্টের উপর ট্রেনিং নেয়ার সময় লক্ষ করেছি যে, সপ্তাহের যে কোন একদিন সে রাজধানীতে গাড়ী চলাচল বন্ধ রেখে সাইকেল চালানোর জন্য খুলে দেয়া হয়। ফলে সপ্তাহে অতন্ত: একটিদিন ব্যস্ততম এলাকায় মানুষ যানজট মুক্ত থাকে এবং মানুষের দিন যাপনে একটি অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে যা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সম্মত। পরিকল্পনা করার জন্যও অনেক অর্থের ব্যয় হয়, এক সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে পরবর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করে না, বরং বাকা চোখে দেখে। ঢাকা শহরের যান জট নিরসনের জন্য অনেক পরিকল্পনা গৃহিত হয়েছে, যার পিছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে তা আলোর মূখ দেখে নাই। এক সরকারের প্রতি অন্য সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরন পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নে অন্তরায়। মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া বাঞ্চনীয় রাষ্ট্রীয় স্বার্থে। রাস্তায় চলাচলে যাত্রীদের অসচেনতা : আমাদের দেশের যাত্রীদের অসচেতনার কারণেও দূর্ঘটনা হয়ে থাকে। যাত্রীরা রাস্তা ব্যবহার ও পারাপারে সাংকেতিক নিয়ম মেনে চলে না। ঝুকিপূর্ণ জেনেও যাত্রীরা গাড়ীতে চলার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরে। ফলে যাত্রীদের অসাবধানতা, দায়িত্বহীনতার কারণেও দূর্ঘটনায় পড়তে হয়। দূর্ঘটনায় কবলিত যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা অপ্রতুল : দূর্ঘটনায় পতিত মানুষ তাৎক্ষনিক চিকিৎসার অভাবে রক্তক্ষননে বা অন্যকোন কারণে মৃত্যু বরণ করে। ঐরকম High Way Police Petrol Team থাকলে আমাদের দেশে TROMA CENTRE ev HIGH WAY AMBULANCE TEAM সরকার চালু করে নাই। নিজস্ব অর্থায়নে বিআরটিসি ২০০৫ সালে মাইক্রোবাস মোডিফাই করে বিআরটিসি ১৬টি এম্বুলেন্স দিয়ে একটি HIGH WAY AMBULANCE SERVICE চালু করে ছিল বটে, কিন্তু তাহাও এখন অস্তিত্ব বিলোপ হয়েছে। সরকারী উদ্দ্যেগে বেসরকারী পরিবহন মালিকদের HIGH WAY AMBULANCE SERVICE চালু করার ব্যবস্থা নিতে হবে। উপসংহার : সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের দেশে মহামারী আকার ধারন করেছে। এ নিরসনে বাস্তবমূখী পরিকল্পনার চেয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যই বেশী দেয়া হচ্ছে। সড়ক দূর্ঘটনাকে “জাতীয় সমস্যা” হিসাবে চিহ্নিত করে এর সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যান্ত জরুরী। পাশাপাশি পূর্ববর্তী সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে তা পরিহার করা বাঞ্চনীয় নহে। লেখক গণ পরিবহন পরিচালনায় কলোম্বিয়াতে উচ্চতর প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এবং সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআরটিসি) মোবাঃ ০১৭১১-৫৬১৪৫৬ E-mail: [email protected]
এই বিভাগের আরো খবর