শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সোনার কোটপিন উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়া সেই কাশুর মৃত্যুদন্ড

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০১৭   আপডেট: ১৭ মে ২০১৭

স্টাফ রির্পোটার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর গোপালদী বাজার মাঠ প্রাঙ্গনে আয়োজিত আওয়ামীলীগের বিশাল জনসভায় সাংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে সোনার কোটপিন উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েও শেষ রক্ষা পেলেন না আড়াইহাজারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার কাশু ও তার বাহিনী। বুধবার দুপুর ১২ টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক কামরুন নাহার বিভিন্ন স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে কাশুসহ ২৩ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এদিকে কাশুসহ ২৩ জনকে মৃতুদন্ড ঘোষনা করায় সাংসদ বাবু ও তার কর্মকান্ডকে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। পাশাপাশি এমপি বাবুর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আবুল বাশার কাশু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংসদ আঙ্গুরের ঘনিষ্ঠ সহোচর ছিলেন। তার ছএছায়ায় আড়াই হাজার থানায় এমন কোন অপকর্ম নেই যা তার ধারা হয়নি। সে ছিল তার বাহিনীর প্রধান। তার ইশারায় আড়াই হাজার থানায় খুন, ডাকাতি, রাহাজানি, জমি দখল নারী নির্যাতন সহ সকল ধরনের কাজ সংঘঠিত হত। তার অত্যাচারে আড়াই হাজারের মানুষ শান্তিতে দিন যাপন করতে পারতো না। সে সময় ক্ষমতার প্রভাবে তার নিজ এলাকার বাসিন্দা ইউটি সদস্য আলী আজগর মেম্বারের ছেলে ভাগিনা সহ চারজনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শাররিক নির্যাতনের পর আগুনে পুড়ে হত্যা করে আবুল বাশার কাশু, ডালিম, ইয়াকুব আলী, রফিক, হালিম, রুহেল, সাহাবুদ্দিন, লিয়াকত আলী মাষ্টার, সিরাজ উদ্দিন, ইদ্দিস আলী, মোঃ হোসেন, আবুল কালাম, গোলাম আযম, আব্দুল হাই, খোকন, আলামিন, রুহুল আমিন, তাইজুল ইসলাম ও হারুন। পরে নিজে ও তার বাহিনীকে বাঁচাতে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর গোপালদী বাজার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবুল বাশার সোনার তেরি নৌকার কোটপিন সাংসদ নজরুল ইসলামকে পরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ওইসময় মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় কোটপিনে ৩ভরি স্বর্ণ রয়েছে।   উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই বিএনপি নেতা কাশু দলবল নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে যোগ দেন। ওইসময় ৪ আওয়ামী লীগ কর্মীর খুনের সাথে জড়িত বিএনপি নেতার আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এমপি বাবুর সামনে কেউ মুখও খুলেননি। ওই সময় ‘সন্ত্রাসী’, হত্যা মামলার আসামি আবুল বাশার চার খুনের মামলা থেকে বাঁচতে সাংসদ বাবুকে ম্যানেজ করতেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। চার খুন মামলায় বিভিন্ন তথ্য প্রমানের ভিওিত্বে বুধবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কামরুন নাহারের আড়াইহাজারের ৪ হত্যা মামলায় ২৩ জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এর আগে ৪ মে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক শেষে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত জেলা ও দ্বিতীয় দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক কামরুন নাহার ১৭ মে রায়ের দিন ধার্য করেন। এ মামলায় রাষ্ট পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর জেসমিন আহম্মেদ এপিপি। আর আসামী পক্ষের হয়ে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট বারী ও খোরশেদ আলম। প্রসঙ্গত ২০০২ সালের ১২ মার্চ আড়াই হাজার থানা ছাএলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই বারেক, ফুফাতো ভাই বাদল আওয়ামীলীগ কর্মী ফারুক ও কবীরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে গোপালদী ইউনিয়নের বিএপির সভাপতি আবুল বাশার কাশু ও তার লোকজন। এ ঘটনায় মোট ২৩ জনকে আসামী করে নিহত বারেক এর পিতা ইউপি সদস্য আলী আজগর মেম্বার বাদী হয়ে আড়াই হাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালিন অবস্থায় বাদীর মৃত্যু হলে তার ছেলে শফিকুল ইসলাম এ মামলার বাদী হন। এ ঘটনায় মোট ২৩ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বুধবার আদালত মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করেন।
এই বিভাগের আরো খবর