শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা দেয়া হউক : এসআই সেলিম

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : উঁচুতলার বিলাশ বহুল জীবন-যাপনকারী বড়-বড় কর্তা বাবুদের প্রতিনিয়তই শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। অথচ শ্রমিকদের বহু পুরোনো দাবী ও কাংঙ্খিত চাওয়া প্রতিদিনের ৮ কর্মঘন্টা আজো কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকরা পাননা। আমার এক বন্ধু  যিনি তাঁর ২৫ বছরের ব্যবসায়ীক জীবনে তিনি সফল ব্যবসাযী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রচলিত আইনের বিধি  মেনেই  আজ  সে শতকোটি টাকার মালিক। যা সম্ভব হয়েছে তা তাঁর প্রতিষ্ঠানের  শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে কাজ করার কারণেই ।  ৮ ঘন্টার পরিবর্তে কখনো কখনো শ্রমিকরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে  ১৬ ঘন্টা কাজও করেছেন। আমার বন্ধু শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের পরে বাকি কাজের ওভারটাইম দিয়েছিলেন। হাজার টাকা বেতন  পেয়ে শ্রমিক ২৫ বছরে লক্ষপতি হয়েছেন তার কোন নজির নেই। বরং শ্রমিকরা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য কর্মযুদ্ধ করে মৃত্যু বরণ করেন।  তাঁদের প্রকৃত অধিকার তারা কখনোই পাননা বলে মনে করি আমি। শ্রমিকদের একটু অন্যায় হলেই মালিক পক্ষ কথায় কথায় শ্রমিকদের চাকুরীচ্যুত করেন। কখনো কখনো মামলা হামলারও শিকার হন শ্রমিকরা। অথচ শ্রমিকদের ঘামে ঝরা কর্মঘন্টার কারনে আজ অনেক মালিক সমাজের উচ্চ স্তরে অবস্থান করছেন। সমাজের মধ্যে আজ মালিক পক্ষের যে সুনাম তা শ্রমিকদের কারনেই । ক’জন মালিক সেই  শ্রমিক বন্ধুদের খোঁজ নেন ? অনেক সময় অভিযোগ দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাবুদের অনীহা, অনিচ্ছা, অবজ্ঞা ও পরিশেষে মিথ্যা মিমাংসার আশ্বাসের জালে বন্দী হয়ে থাকে শ্রমিকদের সুবিচার । কখনো কখনো আইনের অন্ধতার সুযোগে সাজানো মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা সাক্ষী দিয়া মালিক পক্ষের  লোকজন বাবুরা উল্টো শ্রমিকদের বন্ধি জীবন উপহার দেন। আমাদের বাঙ্গালী জাতির মধ্যে যারা বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে সম্মানের জায়গা দখল করে গর্ববোধ করছেন, তারা নিজ নিজ পূর্ব পুরুষদের ৫০-১০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস ঘাটলেই বুঝতে পারবেন যে,তাঁদের বংশীয় শিকড় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় শ্রমিক নয় কৃষক ছিলেন। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক অনেক শ্রমিক ভাইদের সন্তানেরা  আল্লাহ প্রদত্ত মেধা শক্তির প্রভাবে উঁচু উঁচু পদে মালিক বা বড় কর্তাবাবু হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই  লজ্জাবোধ করেন, সমাজের সকলের সামনে তাঁদের পিতা-মাতার পরিচয় দিতে। তাঁরা ভুলে গেছেন পিতৃতুল্য, মাতৃতুল্য শ্রমিকদের সঙ্গে ভাল আচরণ ও তাদের ভালবাসা দেওয়া। অনেক সময় আশ্চর্য হই, যখন  দেখি আলোর ভেতর অন্ধকারের হাতছানি দেখে। বাঙ্গালী জাতির রক্তের বিনিময়ে ব্রিটিশ আমল,পাকিস্তানীতের রাজত্বের অবসান ঘটিয়েছিল।  ১৯৭১ সালে আমাদের মাতুভুমি বাংলাদেশ  স্বাধীনতা অর্জণ করেছিলেন।  সেই সময় শ্রমিকরা   ভেবেছিলেন এই বুঝি তাদের মুক্তি হল, এই বুঝি তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দিন এলো। কিন্তু না কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের কাঁধে ভর করে, কিছু অর্থলোভী লোক শ্রমিক নেতা সেজেছেন। তাদের সাথে অসাধু ব্যবসায়ী, কিছু শিল্প মালিক করছেন আঁতাত। তাদের কারণেই বিভিন্ন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান, মটরযান, নৌযানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে তাদের ঠকাতে অনেকই আজ সিদ্ধহস্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের জন্য আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী  শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার দরুন তিনি বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার  ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। তারপরও শ্রমিক ভাইয়েরা  কোন-কোন ক্ষেত্রে ন্যায্য পাওনাদি ও সুবিচার সঠিক ভাবে পাননা। কুট- কৌশলী ও সাদা বর্নের অপরাধীদের ক্ষমতার সিন্ডিকেটের দাপট এখনো চলমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে শ্রমিক সমাজ  সহজ সরল, অর্ধ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত নানা প্রকারের এই শ্রমিক সমাজ বঞ্চিত হন নিজের অধিকার পেতে। যে  প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের একদিন কাজ না করিলে বড় বাবুদের হাজার, লক্ষ, কোটি টাকা লোকসান হয়। সেই শ্রমিকদের  ঠকিয়ে মধ্যসত্বভোগী অলস বাবুরা গড়েন বিলাশ বহুল পাঁচতারা হোটেল, গেষ্টহাউজ। আনন্দ করেন মদ্যপ বারে, বাগান বাড়ীতে অনৈতিক কর্মকান্ড সহ আনন্দ-ফূর্তি করিয়া টাকা-পয়সা অপচয়  করে থাকেন। যদি ঐ সমস্ত মালিকরা অপচয় বন্ধ করে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার পিছনে কিছুটা মাণবিক সাহায্যের হাত বাড়ান,তাহলে হয়তো শ্রমিক শ্রেনী অনেকটা উপকৃত হতেন।  আনন্দে মালিকদের পায়ে সালাম করে শ্রমিকরা মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রান ভরে দোয়া করতেন তাঁদের জন্য। ১লা মে ২০১৭ সালের হউক অঙ্গিকার ‘মালিক শ্রমিক  নেই কোন ভেদ’। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে শ্রমিকদের করুনা নয়,বরং  তাদের ন্যায্য পাওনা দেয়ার অনুরোধ মালিক পক্ষের কাছে। শ্রমিকদের ঘাম শুকানোর আগেই জেনো তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়। এটাই হোক  মে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। কবিতার ভাষায় - আমরা সবাই শ্রমিক,/আমাদের এই সোনার বাংলাতে/নইলে মোরা শ্রমিকদের সঙ্গে,মিশবো কিভাবে/মালিক শ্রমিক ভাই ভাই/স্বনির্ভর বাংলাদেশ উপহার চাই/সকল শ্রেণী ও পেশা মানুষদের অঙ্গীকার/গর্জে উঠুক এই শ্লোগান বার বার। বিঃ দ্রঃ- সব মালিকগণ যেমন অসাধু বা রক্তচোষা নয়। আবার সব শ্রমিকও তেমনি অসাধু ও ফাঁকিবাজ নয়। মালিক পক্ষের কাছে আবেদন, শ্রমিকদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখিয়া তাহাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ সহ বিপদে-আপদে যথাসাধ্য অনুযায়ী মাণবিক সাহায্য প্রদান করিবেন। শ্ রমিক ভাইদের প্রতিও অনুরোধ, মালিক পক্ষ যাতে লোকসানে পতীত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য  রেখে সেবা প্রদান করবেন। এই হউক আমাদের মালিক শ্রমিক উভয় পক্ষের ব্রত। জয় বাংলা। জয় হোক  মেহনতি মানুষের। জয় হোক শ্রমিক দিবস-২০১৭ ইং সর্বদলীয় শ্রমিক ভাইদের পক্ষে, মোঃ সেলিম মিয়া, এসআই, না’গঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ, সাং-মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ। সেলিম/কা/বা            
এই বিভাগের আরো খবর