শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নিহত জঙ্গি তামিম ও সরোয়ার গ্রুপের ৮ সদস্য আটক, বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধার

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : র‌্যাব ১১’র একটি আভিযানিক দল নিহত জঙ্গি তামিম ও সরোয়ার গ্রুপের ৮ জেএমবি সদস্যকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বিস্ফোরক ও জঙ্গিবাদী বই উদ্ধার হয়। আটকরা হলো, শরিয়তপুর জেলার জাজিরা থানার জামাল ওরফে রাসেল জিহাদী (৩৫), ঢাকা জেলার কদমতলী থানার খন্দকার আবু নাইম ওরফে নামি জিহাদী (৪৯),ডেমরা থানা এলাকার নরুল আবছার (২৭), মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার মহসিন (৫২), বাগেরহাট জেলার মোড়রগঞ্জ থানার জাবির হাওলাদার (২২), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার আকাতারুজ্জামান ওরফে মারুফ(৩২), মুরাদনগর থানার হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক(৩২) তিতাস থানার কাশেম মুন্সি (৩১)। আটকরা সবাই ‘নতুন দিগন্ত অনলাইন ই-কমার্স’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানীর অন্তরালে জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনারা করে আসছে। র‌্যাব ১১ এর সিইও লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান শুক্রবার দুপুর ১২ টায় র‌্যাব ১১’র প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করে গনমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান।

র‌্যাব ১১ সিইও লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান বলেন, র‌্যাব কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জানতে পারে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পারিজাত মার্কেটের অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন সারোয়ার ও তামিম গ্রুপের সদস্যরা গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছে।

র‌্যাব ১১’র একটি দল ওই মার্কেটিতে অভিযান চালিয়ে নিহত জঙ্গি তামিম ও সরোয়ার গ্রুপের জামাল ওরফে রাসেল জিহাদী, খন্দকার আবু নাইম ওরফে নামি জিহাদী, নরুল আবছার, মহসিন, জাবির হাওলাদারকে আটক করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে পারিজাত মার্কেটে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বিস্ফোরক ও জিহাদী বই উদ্ধার করে। এছাড়াও তাদের স্বীকারোক্তিমতে কুমিল্লা জেলার  গোরিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আকাতারুজ্জামান ওরফে মারুফ, হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক, কাশেম মুন্সি (৩১) কে আটক করে। এদের মধ্যে রাসেল জিহাদী তামিম ও সরোয়ার নিহত হওয়ার পর বিগত দেড় বছর যাবৎ এ গ্রুপটির মূল সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এরা এমএলএম ব্যবসার অন্তরালে আধুনিক প্রযুক্তি থ্রিমা, ইমো, ওয়াসট এ্যাপস ব্যবহার করে জেএমবি সদস্য সংগ্রহ করতো। আটক রাসেল জিহাদীর সাথে জেএমবির অনেক উপরের মহলের যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রথমিক ভাবে জানতে পেরেছে র‌্যাব। এছাড়াও প্রাথমিক তথ্যমতে জানা গেছে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করার উদ্দেশ্যে তারা বিস্ফোরক গুলো মজুদ করেছিল। এই সংঘবদ্ধ দলটি সংগঠনের জন্য সদস্যপদ বৃদ্ধি এবং সংগঠনের বিভিন্ন প্রয়োজন যেমন, সক্রিয় সদস্যদের জন্য ভাড়ী ভাড়াসহ অন্যান্য প্রয়োজনের তাগিদে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথিপত্র তৈরী করতো ও ফেসবুকে ভাইরাল আকারে বিভিন্ন উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার করতো। আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে আটক ওই জেএমবি সদস্যদের ব্যাক্তিগত তথ্যাদি সম্বন্ধে র‌্যাব ১১ সিইও লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান বলেন- মোঃ জামাল উদ্দিন@ রাসেল জিহাদী পেশায় ব্যবসায়ী। সে এসএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে বক্সীবাজার নিডাসা থেকে ক¤িপউটার হার্ডওয়ারের উপর ২ বছর ব্যাপী ডিপ্লোমা স¤পন্ন করেছে। সে মূল দলটির প্রধান সমন¡য়কারীর দায়িত্ব পালন করে ও এমএলএম কো¤পানীটি পরিচালনা করে থাকে। সে ছাত্রাবস্থা হতে শিবিরের সঙ্গে জড়িত। ২০১৫ সালের শেষের দিকে কথিত বড় ভাই/হুজুরের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভূক্ত হয়। পরে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে বিস্ফোরক তৈরীর উপর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছে। তার মাধ্যমে জনৈক সোহেল, আবু নাঈম, নুরুল আবছার ও জাবির হাওলাদার জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। সে তাদের দলের জনৈক সোহেলকে হাতে কলমে বিস্ফোরক তৈরী ও ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে জানায়। খন্দকার আবু নাঈম @ খন্দকার আবু সাঈদ@খন্দকার আবু সাইয়ুম @নাঈম জিহাদী, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। সে একজন গ্রাজুয়েট এবং জমি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা বা দালালীর সঙ্গে জড়িত। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে সে মোঃ জামাল উদ্দিন এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদের আর্দশে উদ্বুদ্ধ হয়। মোঃ জাবির হাওলাদার@ জাবির পটুয়াখালী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আলিয়া মাদ্রাসায় এক বছর পড়াশুনা করে পরবর্তীতে ক¤িপউটার দোকানে ক¤িপউটার পরিচালনা ও গ্রাফিক্স এর কাজের শিক্ষা নিয়েছে। পিতা-মাতার বিচ্ছেদের কারনে মানসিক হতাশা থেকে সে নিজে থেকেই জঙ্গিবাদ ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে জনৈক সোহেলের সাথে তার পরিচয়ের সূত্রে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে এ দলের অন্তর্ভূক্ত হয়। আকাতারুজ্জামান ওরফে মারুফ জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য সে ২০০৪ সালে রাঙ্গা প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। অতঃপর ২০০৫ সালে দশপাড়া হযরত দবির উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়েছে কিন্ত পাস করে নাই। এছাড়া বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে কাজ করে মোবাইল পরিচালনায় দক্ষতার পাশাপাশি কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেছে।  গৌরীপুর বাজার, কুমিল্লায় তাইফা টেলিকম নামে তার মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান আছে। তার দোকানটি সংগঠনের বিবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়। ওমর ফারুক@ ফারুক, বায়তুল সালাম মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা থেকে ২০০৬ সালে হেফজ পর্যন্ত এবং দেবীদ্বার রামপুর মাদ্রাসা থেকে ২০০৬/২০০৭ সালে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছে। সে বর্তমানে গৌরিপুর এলাকায় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। সে সোহেলের মাধ্যমে ২০১৬ সালে জিহাদে উদ্বুুদ্ধ হয়। সে সব ধরনের সদস্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। মোঃ আবুল কাশেম মুন্সী@কাশেম ২০০২ সালে গৌরিপুর সুবল আকতার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৪ সালে মুন্সী ফজলুর রহমান সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর হাসানপুর কলেজ দাউদকান্দিতে বিএসসিতে ভর্তি হয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে পড়া শোনা করে এবং ৩য় বর্ষে ফেল করে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সে উগ্রবাদিতায় আকৃষ্ট হয় এবং ২০১৬ সালের শুরুর দিকে মারুফ ও সোহেলের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে যোগদান করে। সে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে সিলেটে অস্ত্র প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। মোঃ মোহসেন উদ্দিন, জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য। সে মির্জার চর সিনিয়ার মাদ্্রাসা শিবচর থেকে ১৯৮৩ সালে দাখিল এবং একই মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৫ সালে আলিম, মাদারীপুর আহাম্মদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা হতে ১৯৮৭ সালে ফাজেল এবং একই মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৯ সালে কামেল পাস করে। সে প্রগতি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ রায়েরবাগ এর নাইট গার্ড এবং সাইন বোর্ডে অবস্থিত নবনির্মিত পারিজাত মার্কেটে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঔষধের দোকানের মালিক। মোঃ জামাল @ রাসেল জিহাদীর মাধ্যমে সে জেএমবির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। রাসেল জিহাদীর পরিকল্পনায় তার দোকানটি “নতুন দিগন্ত” নামে অনলাইন ভিত্তিক এমএলএম কোম্পানীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সেখানে নানা ছদ্মবেশে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের আসা যাওয়া ছিল যাতে বিভিন্ন গোপন বৈঠক হত এবং পার্সেল বিনিময় হত। নুরুল আবছার @ পলাশ বর্তমানে জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য। সে ডগাইর দারুল সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৫ সালে দাখিল একই মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ সালে আলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক ষ্টাডিজে অনার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে মাষ্টার্স পাস করে। বর্তমানে সে বাংলাদেশ হোমিও মেডিক্যাল কলেজ ডিএইচএমএস এর ১ম বর্ষের ছাত্র। সে শিবির কর্মী ছিল এবং  ‘নতুন দিগন্ত’ এমএলএম এর সাথে সংযুক্ত আছে। ডেসটিনিতে কাজ করার সুবাদে এই ব্যবসায় তার জ্ঞান কো¤পানীর জন্য কাজে লাগে।মোঃ জামাল উদ্দিন @ রাসেল জিহাদীর মাধ্যমে সে জেএমবির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। সে মূলত উগ্রবাদী কোন কোন পোষ্ট ভাইরাল করতে হবে এবং কোন কোন গ্রাহকদের নিকট কি ধরনের পোষ্ট প্রেরণ করতে হবে তার ব্যাপারে পরামর্শ দিত।
এই বিভাগের আরো খবর