রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এসপির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ : হকারমুক্ত ফুটপাত 

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ঈদের পর থেকেই ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করার ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তবে ঈদের পর থেকেই ফুটপাতগুলো দখল করে বসতে মরিয়া হকাররাও। তবে এব্যাপারে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা এখনো নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। 


গত ২৫ মে বিকেলে পশ্চিম দেওভোগ ভূইয়ারবাগ এলাকার বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার ঘোষণা দেন ওই দিন থেকেই বিআরটিসি কাউন্টারগুলো খানপুর থেকে লিংক রোডে পর্যন্ত নির্বিঘেœ বসবে। 


পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে এসপি বলেন, ‘রাস্তার উপর ফুটপাতগুলো আমাদের পরিস্কার করতে হবে। জনগণ যাতে সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।  সকল শ্রেণি- পেশার মানুষ আমাদের এব্যাপারে সহযোগিতা করবেন আমরা সেটিই প্রত্যাশা করি।’ 


ওই অনুষ্ঠানের ১৮ দিন পার হলেও নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোর ফুটপাত থেকে হকারদের সরানো যায়নি। ফলে নগরবাসী আগের মতোই ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘেœ হাঁটতে পারছেনা। 


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সড়কের খাজা মার্কেট, শহীদ মিনার এলাকা, সমবায় মার্কেট, মার্ক টাওয়ার, লুৎফা টাওয়ার, সায়েম প্লাজা, নিউ সমবায় মার্কেট, সুধীজন পাঠাগারের সামনে, নূর মসজিদ সংলগ্ন এলাকা, সুগন্ধা প্লাস হোটেল, গ্রীনলেজ ব্যাংক মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন এলাকা থেকে ২নং রেলগেট পর্যন্ত দুইপাশের ফুটপাতই দখল করে রেখেছে হকাররা। 


মাটিতে মাদুড় বিছিয়ে হরেক পণ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাকডাক ছেড়ে ক্রেতাদের ডাকছেন তারা। ঈদের পর হওয়ায় সেভাবে ব্যবসা অবশ্য জমে উঠেনি তবে ফুটপাত ঠিকই দখল হয়ে রয়েছে হকারদের কাছে।   


উকিলপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাসমত আলী বলেন, ‘এই ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য মেয়র পর্যন্ত মাইর খাইছে। তবুও হকারদের সরানো যায় নাই। এসপি বলছে সরাবে তবে তা কথার কথা নাকি এর বাস্তবে দেখমু এডা লইয়া সন্দেহ আছে।’ 


চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলকার বাসিন্দা লুৎফর হোসেন বলেন, ‘হকার উঠাইবো কেমনে, হকারগো কাছ থাইকা পুলিশও টেকা উডায়। আর হকারগো পিছনে অনেক বড় বড় নেতা আছে এক এসপি হকার উঠাইবো কইলেই তো আর হেইডা অইয়া যায় না। বেবাকেই তো নারায়ণগঞ্জে আইয়া বড় বড় কতা কয় শেসমেস আমরা ওই আগের জায়গায়েই পইরা থাহি।’ 


চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংঙ্কের সামনে বসা এক হকার জানান, ‘বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে আমাদের সরানোর জন্য সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু অন্য রাস্তায় গেলে তো কাস্টমার হয়না। রোজার শেষের কয়েকদিন বাদে এরআগে আমরা শান্তিমত ব্যবসা করতে পারিনাই। অনেক কষ্টে আছি বউ পোলাপান লইয়া। আমগোরে উডাইয়া দিলে কইলেই তো আমরা উইঠঠা যাইতে পারিনা।’ 


আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন মল্লিক বলেন, গতবছর ১৬ জানুয়ারি হকাররা মেয়রের উপর হামলা চালাইছে। এরপরেও প্রশাসন ফুটপাত থাইকা হকার সরাইতে পারে নাই। নতুন এসপি আইয়া জেলায় অনেকগুলা ভালো কাম করছে। হেয় যখন কইছে হকার উঠাইবো তখন হেইডা অইতোও পারে। হের নামে পোস্টার টানাইয়া যদি ব্যবসায়ীরা চাঁদা ছাড়া ব্যবসা করতে পারে তয়লে হের নেতৃত্বে পুলিশ বঙ্গবন্ধু রোড থাইকা হকার উডাইতে পারবোনা কেন?


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে নারায়ণগঞ্জ নগরীর বাসিন্দাদের দাবি ছিলো বঙ্গবন্ধু সড়কটি যাতে অন্তত হকারমুক্ত করা হয়। এতে পুরো নগরীতে একদিকে যেমন যানজট নিরসন করা অনেকটা সহজ হবে। 


এরপাশাপাশি নগরবাসী নগরীতে উন্মুক্ত ফুটপাতে হাঁটাচলার সুযোগ পাবে। এসপি হারুন নগরবাসীকে ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাতে আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। তবে ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করা এসপি হারুনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে। 


কেননা বিগত দিনে চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা  তিনি নিজে সরেজমিন ও তার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে উচ্ছেদ করলেও বর্তমানে তা আগের অবস্থাতেই ফিরে গেছে। 


ফুটপাত উন্মুক্ত করে এসপি হারুন নগরবাসীর যে আস্থা ও বাহবা অর্জন করেছিলেন সেটি তার হকারমুক্ত ফুটপাত ঘোষণার বাস্তবায়ন না করতে পারলে অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে বলে মনে করেন নগরবাসী।  
 

এই বিভাগের আরো খবর