শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

স্বস্তিতে নেই দুর্নীতিবাজরা

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : মহল্লা পর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের চোখে ঘুম নেই। নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ওরা নানান ফন্দি-ফিকির করছে। কেহ নিজের টাকা পরিবারের সকল সদস্যদের নামে ব্যাংকে আমানত রাখছে। বিল্ডিং তুলছেন এমন হাইব্রিড নেতারা আপাতত কাজ বন্ধ করে বাঁচার জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলছে। ভাবটা এমন যাতে সবাই বুঝতে পারে এনজিও থেকে লোন তুলে বাড়ি বানাচ্ছে। কেহ নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দু’একজন ওমরা করতে চলে গেছে। ওদের অনেকেই আবার বাড়ি ছেড়ে রাত কাটাচ্ছে মসজিদে।

 

নানা ধরনের আচরণগত পরিবর্তন  দেখে এলাকাবাসীর বুঝতে বাকি নেই- হঠাৎ  নেতাজীর টেনশনটা কেনো বেড়েছে। কয়েকজন আবার ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার জন্য ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। ওদের বাড়ির আশপাশে রাতভর কিশোর গ্যাং সদস্যরা পাহারায় থাকে। থানা পুলিশের সাথে দেবতার আশীর্বাদে অনেকের সখ্যতা থাকলেও ভয় ওদের দুদক’কে। ইদানীং ওদের মধ্যে কেহ তাবলীগ জামাতে যাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। ইদানীং সারাক্ষন মাথায় টুপি  চোখে পড়ে। মুখে দাড়ি।  ছোট বড় সবাইকে সালাম দিতে শুরু করেছে। যদিও সালাম দেয়াটা ওদের আচরণে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে। আগে ভারি গলায় জিজ্ঞেস করতেন, ভাই ভালো আছেন ! এখন আগেই দেন সালাম। নব্বইয়ের দশকেও নুন আনতে পানতা ফুরাতো এমন লোক আজ কয়েকটি বাড়ির মালিক। প্রতিমাসে সিঙ্গাপুরে যান রুটিন চেকআপে। সপ্তাহ না ঘুরতেই কক্সবাজার ট্যুর। মহল্লার সবাই জানে টাকার উৎস।  কেউ মুখ খোলেনা ভয়ে। কেননা যুবলীগের পদ ধারণ করে ওরা ক’জন গড়ে তুলেছেন বিশাল নেটওয়ার্ক। ওদের দৃশ্যত: আয়ের পথ নির্মাণ সামগ্রীর দোকান। অন্তরালে মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজিই ওদের প্রধান আয়ের উৎস। তবে পারিবারিকভাবে এরা খুব অখুশি। কারো কারো কেলেঙ্কারি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরে। এলাকায় নিজেদের প্রাধান্য জাহির করতে নিজেরাই গড়ে নিয়েছেন আলাদা পঞ্চায়েত কমিটি এবং যুব উন্নয়ন ও সামাজিক ক্লাবের নামে আড্ডাস্থল। পঞ্চায়েত কমিটিতে ওরাই নেতা। বাদ পড়েছেন মুরুব্বিরা। যদিও মুরুব্বিরা এসব মেনে নিয়েছেন।

 

অনুসন্ধান করে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সবকটি উপজেলাতে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে হাইব্রিড নেতাদের লুটেপুটে খাওয়া ও সম্পদ গড়ার চিত্র প্রায় একই ধরনের। পার্থক্য শুধু  ভৌগলিক অবস্থানগত। ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের হাইব্রিড নেতাদের দ্রুত উত্থানের চিত্র, বক্তাবলী, এনায়েতনগর সহ অন্যান্য ইউনিয়নে প্রায় অভিন্ন।  জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে গত ১০ বছরে হাইব্রিড নেতারা সমাজের মাথা সেজে অনিয়ম , দুর্নীতি করে সম্পদ গড়ে এলাকা দাপিয়ে  বেড়াচ্ছে। ওদের দুর্নীতি নিয়ে এলাকাবাসির মাথা ব্যাথা নেই। মাথা ব্যাথা আছে ভুক্তভোগীদের। যারা এই নেটওয়ার্কের খপ্পরে পড়ে নিজের ভিটে মাটি টুকু হারিয়েছেন বা হারাতে যাচ্ছেন। ওরা চার পাঁচ তলা বিল্ডিং নির্মাণ করলে প্রতিবেশীর দু’ হাত যায়গা  কৌশলে দখল করে নেয়। প্রতিবাদ করতে গেলে কপালে জোটে নির্মম অত্যাচার। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানে ওদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শহর ছেড়ে শহরতলীতে গেলেই আজকাল চোখে পড়ে হাইব্রিড নেতাদের নানা রংএর পোস্টার ও ব্যানার। ওরা যাদের লেজ ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তার ছবিও পোস্টারে থাকে। মহল্লায় কারো কোন অনুষ্ঠানে আজকাল হাইব্রিডদের দাওয়াত দেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক। ওদের নামের আগে নেতা শব্দটি জুড়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষ। বিএনপি আমলে ওরা অনেকেই ছিল জাঁদরেল বিএনপি নেতা। এবার আওয়ামীলীগের নেতা হয়েছেন টাকা পয়সা খরচ করে। এলাকায় কোন রাস্তা, কালবার্ট এর কাজ হলে  নেতার পরিবারের লোকজন বলে বেড়ায়,‘অমুকের বাপে না এই রাস্তাটা কিন্যা আনছে। ওই পুলটাতো পাগলার বাপেই কিন্না আনছে। আমাগো ইয়েইতো সব টেন্ডার আনে।

 

বিএনপি কইরা খালি মাইর খাইতো-অহন দুই চাইরটা হজম (হত্যার ইঙ্গিত) করার ক্ষমতা অইছে।  নেতায়তো সব কাম পাগলার বাপেরেই দেই।’ পরিবারের সদস্যদের এমন দম্ভোক্তিতে মহল্লার মানুষ বিস্ময়ে অবাক হয়। এখন আবার অবাক হচ্ছে  নেতার পালিয়ে বেড়ানোর ঘটনা ও ধরা পড়ার হায় হায় দেখে। 

এই বিভাগের আরো খবর