শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রূপগঞ্জে মহাসড়কে অবৈধ ইছারমাথার দৌরত্ব : ঝরছে প্রাণ

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২০  

রূপগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : রূপগঞ্জে ইছারমাথা (ট্রাক্টর) আতঙ্কের নাম। মহাসড়কে অবৈধ ইয়ারমাথার দৌরাত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। ইছারমাথার আতঙ্কে দিন কাটে পথচারীদের।

 

দূর্ঘটনায় পড়ে অকালে ঝড়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। ইউনিয়ন পরিষদের সকল রাস্তাঘাট ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিণত হয়ে ধূলোঝড়ের সাথে নিত্য বসবাস করছে রূপগঞ্জের বাসিন্দারা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিরাজ করছে উপজেলার দাউদপুর ও ভোলাব ইউনিয়ন এলাকায়। নিষিদ্ধ এ সকল যানের দৌড়াত্নে রাস্তায় বেরুলেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় বাধ্য হয়ে।


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় ইটভাটায় ইটা সরবরাহ ও বালি মাটি সরবরাহের কাজে ইছারমাথা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইছারমাথা নামক এসকল অবৈধ যানের দেখা মেলে রূপগঞ্জের দাউদপুর, খৈসাইর, বেলদী, পিতলগঞ্জ, মধূখালী, শিমুলিয়া, কাজিরবাগ, কালী, আমলাব, কোশাব, আতলাপুর, মায়ার বাড়ি, হাটাব, দেবইসহ আশপাশের গ্রামে। 


এই এলাকার মালবাহী একমাত্র যান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ইছারমাথা খ্যাত জমি চাষের জন্য তৈরী করা শক্তিশালী ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টর। ভয়ে ভারী এই যানটি ক্ষেত খামারের চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযুগি করে গড়ে তুললেও অধিক মুনাফার লোভে মালবাহী যান হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয় অসাদু ইটভাটার মালিক ও  ইটা বালুর পাইকাররা। 


তারা ভারতীয় ট্যাফে ট্রাক্টরকে হালকা যান চলাচলের রাস্তায় নামিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাগুলোকে খানাখন্দে পরিণত করে আসছে। এতে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয় লোকজন।


প্রশিক্ষনহীন চালক আর অদক্ষ হেলপারের চালনা করা এইসব যানের বেপরোয়া গতিতে রাস্তায় চলাচলরত বৈধ গাড়িকেও ভয়ে থেমে যেতে হয়। সম্প্রতি এ যানের দৌড়াত্নে একাধিক লোকের ঘটেছে প্রাণহাণী। এসব ভারী যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে  খানাখন্দে পরিণত হয় । আর ধূলা বালি উড়ে স্থানীয় লোকজনের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে।

 

অভিযোগ রয়েছে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের কতিপয় সদস্যকে ম্যানেজ করে স্থানীয় ইটভাটার মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই অবৈধ ইছারমাথা চালাচ্ছেন। নিয়মিত মাসোহারা প্রদান করেই চলে এ অবৈধ যানের অবাধে চলাচল।


এলাকাবাসী জানান, মন্দের ভাল হিসেবে ধূলা প্রতিরোধে ইছারমাথা মালিক সমিতির লোকজন দিনে দুবার রাস্তায় পানি দিত। এখন তা চোখে পড়ে না। তাছাড়া বেপরোয়া গতি ও বিকট শব্দের কারণে পথের ধারে ঘর বাড়ির লোকজনের চোখে ঘুম নেই। শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন চরম সমস্যায়। ফলে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি করছে অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন ধূলা বালির কারণে ফুসফুসের নানা রোগ ও বায়ু বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। 


রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দাউদপুরের বেশির ভাগ দরিদ্র রোগীরাই হাঁপানি, শ্বাস কষ্টসহ নানা বায়ু বাহিত রোগ নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। 


এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সাঈদ আল মামুন বলেন, ধূলো বালির কারণে পথে চলাচলরত লোকজনকে অবশ্যই ম্যাস ব্যবহার করতে হবে। নাক ও মুখে এমনকি চোখ কানের মাধ্যমেও ধুলো বালি প্রবেশ করে মারাত্নক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। শীতকালে শুস্ক আবহাওয়া এমনসব রোগীরাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়।  


এসব বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গির বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতির তত্বাবধানে এলাকার লোকজন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে তাতে আমার বাঁধা দেয়ার অধিকার নেই। তবে এসকল অবৈধ যান মহাসড়কে চলার কোন অনুমতি নাই। তাই সেসব এলাকায় চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

 

তবে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান দাবী করেন সবাইকে ম্যানেজ করে ইটা বহনের কাজে ইছার মাথা নামক যান ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় দরিদ্র লোকজন কর্মসংস্থান করে তাদের সংসার চালাচ্ছে। 


এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, এসব যান বন্ধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর