শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রনজিত কুমার স্মরণ সম্মিলনী শুক্রবার

প্রকাশিত: ১ জানুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোটার (যুগের চিন্তা ২৪) : শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি ও ধাবমান সাহিত্য আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, লেখক ও সংগঠক রনজিত কুমারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রনজিত স্মরণ সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে।


শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪ টায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে (পাতাল মেঝে) এ সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকাল ১১টায় রনজিত কুমারের প্রতিষ্ঠিত সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের স্কুল চাষাঢ়ার (চানমারি) শ্রুতি বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিত হবে শিশুসঙ্গ ও বৃক্ষ রোপণ।


অনুষ্ঠানে রনজিত কুমারের শুভাকাঙ্খীসহ সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি আবদুর রহমান, পরিচালক ধীমান সাহা জুয়েল এবং ধাবমান সাহিত্য আন্দোলনের সম্পাদক কাজল কানন।


রনজিত কুমার নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের মাতুলালয়ে ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামেন্দ্র দাস নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনীতে কর্মরত ছিলেন, মা সবিতা রাণী দাস। নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি থেকে এসএসসি, নটরডেম কলেজ ঢাকা থেকে এইচএসসি পাশ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। রাজনীতি ও সাহিত্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।   


তিনি ময়মনসিংহের সাহিত্য সংগঠন ‘বীক্ষণ’ এর আহ্বায়ক হন। পরে বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ময়মনসিংহের কাশিয়ার চরে ভুমিহীনদের খাসজমি উদ্ধারে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপালে থাকেন। সুস্থ্য হয়ে  পুনরায় ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ভূমিহীনদের খাস জমি উদ্ধারের আন্দোলন করে গ্রেফতার  হন। আর এরই মধ্যে চুকে যায় তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ। দু’বছর কারাগারে থেকে ১৯৮৯ সালে মুক্তি পান। পরে মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।


১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসেন এবং শুরু করেন শিশুদের সংগঠিত করার কাজ। ১৯৯২ সালে গড়ে তোলেন শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি এবং পরে ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন। এসব সংগঠনের মাধ্যমে নিয়মিত সাহিত্য, আবৃত্তি, সংগীত এবং অভিনয়ে কর্মী গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হন। 


কর্মজীবনে রনজিত কুমার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুগরের আউট রিচ প্রকল্পের সমন্বয়ক। তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে তুলে আনেন মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস। সাহিত্যে তিনি কবিতা ও গদ্যে একাধারে বিচরণ করেছেন। লিখেছেন প্রবন্ধ, ছড়া ও শিশু নাটক। তাঁর প্রকাশিত কবতিা গ্রন্থ ‘এক সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে’ (২০১২), ‘প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে চৌহদ্দির রিনিঝিনি’ (২০১৬), ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : নারায়ণগঞ্জ জেলা ’ (২০১৭), সম্পাদনা গ্রন্থ’ ‘সমভূ মানব কথা ’। 


১৯৯৭ সালে রনজিত কুমার বিশিষ্ট প্রকৃতি বিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মার ভ্রাতুষ্পুত্রী সঞ্চিতা শর্মাকে বিয়ে করেন। সঞ্চিতা শর্মা বর্তমানে মৌলভীবাজারের জেলার বড়লেখার সুজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। তাদের দুই সন্তান-প্রথম প্রান্ত (২০) ও অনন্ত উৎসাহ (১৮)।

 

উল্লেখ্য, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ২ জানুয়ারি সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। সেদিনই সন্ধ্যায় রনজিত কুমারের কর্মময় জীবনের পরিসম্পাপ্তি ঘটে। 

 

এর পরের দিন ৩ জানুয়ারি সকালে তার মরদেহ রাখা হয় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নগরের মাসদাইর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরো খবর