বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

৮ মাসে হাফেজ হন অন্ধ আলাউদ্দিন

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার : কোন কিছু দেখার অক্ষমতাকে অন্ধত্ব বা দৃষ্টিহীন বলে। যিনি অন্ধত্ব বরণ করেছেন সমাজে তিনি অন্ধ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু একজন মানুষের এই অক্ষমতা কি তাদের দমিয়ে রাখতে পারে ? উত্তর- "না"। অন্ধ হয়েও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন। গ্রীক মহাকাব্য রচয়িতা হোমার, লুই ব্রেল, স্টিভ ওন্ডার, রে চার্লস, হেলেন কিলার তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই বিখ্যাত মানুষগুলো অন্ধের অক্ষমতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন। 

 

এসব বলার কারণ, আজ এক জন্মান্ধ (জন্মগত অন্ধ) ব্যক্তির প্রতিভার নিয়ে আজকের লেখা। হাফেজ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। অবাক হচ্ছেন ? জন্মান্ধ! আবার নামের আগে হাফেজ কেন ? ওই যে উপরে বলেছি অন্ধের অক্ষমতা কাউকে দামিয়ে রাখতে পারে না। আলাউদ্দিন জন্মান্ধ হওয়ার পরেও মাত্র আট মাসে কোরআনে হাফেজ হন। ২০০৯ এর প্রথম দিকে তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ঠিক ওই বছরের শেষ দিকে তিনি হাফেজ হয়ে যান। 

 

১৯৯২ সালে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার পলাশ বাড়িয়া ইউনিয়নের ঝামা বাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মো.আলী আফজাল ফকির ও মোছা.আলেয়া বেগমের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন আলাউদ্দিন। যে ছেলে জন্ম নিয়ে ঘর আলোকিত করলো সেই ছেলেটিই জন্মের পরে আলোকিত পৃথিবী দেখতে পারছে না। মা-বাবা অস্থির হয়ে উঠেন। মা আলেয়া বেগম কান্নায় মুর্ছা যায় বারবার। বাবা আলী আফজাল ফকির পাগলের মতো দিকবিদিক ছুটতে থাকেন। 

 

প্রথম পর্যায়ে কবিরাজ, হুজুর দিয়ে ঝাঁরফুক। তারপর ডাক্তারের শরনণাপন্ন। জন্মের পর থেকেই অন্ধ হওয়াতে সকল পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যায়। আলাউদ্দিনের আর পৃথিবীর আলো দেখা হয় না।তবুও তিনি কল্পনায় এই পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখার চেষ্টা করেন। নিখুঁত চিত্রশিল্পীর মতো মনের সব রং দিয়ে নিজের একটি পৃথিবী বানিয়েছেন। সেই পৃথিবীতেও বাস্তব পৃথিবীর সমান মানুষ, গাছপালা, নদী সমুদ্রসহ  সব আছে। তিনিও খুব সকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দে জানালা দিয়ে তাকিয়ে পাখি দেখেন। বসন্তের কোকিলের সেই মধুর ডাক শুনে গাছের দিকে তাকিয়ে প্রতিটি মানুষের মতো তিনিও কোকিলের খোঁজ করেন। 

 

গজল, আযান, কেরাত শুনতে তার ভীষণ ভাল লাগে। তাই শুনে শুনেই আযান, বিভিন্ন গজল, কেরাত তিনি শিখে ফেলেন। ২০০৭ সালে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে আযান প্রতিযোগিতায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রতিযোগিকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। এরপর যতবার আযান, গজল, কেরাত প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছেন ততবারই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ২০০৯ সালে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে হাফেজ হয়ে যান মাত্র আট মাসে। হাফেজ হওয়ার পর তিন বছর রমজান মাসে তারাবির নামাজও পড়িয়েছেন। 


২০১৭ সালের ১৭ই মে একটি প্রতিবন্ধী সংস্থায় শিক্ষকতা শুরু করেন। বছর খানেক কাজ করার পর তিনি চাকরিটি ছেড়ে দেন। চাকরি ছাড়ার প্রধান কারণ, প্রতিবন্ধী সংস্থার পরিচালক প্রতিনিয়ত মা বাবা তুলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। খাবার খাওয়ার সময় প্রতিদিন খোটা দিতেন। 
এ বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি কন্যা সন্তানের বাবা হন। মেয়ে হওয়াতে তিনি ভীষণ খুশি। মেয়ে বড় হয়ে যে বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে সেই বিষয়েই মেয়েকে পড়াবেন বলে জানান তিনি। আলাউদ্দিনের বর্তমান পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। থাকেন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়।

এই বিভাগের আরো খবর