শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

৬ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিলো খোরশদ

স্টাফ রিপোর্টার  

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২০  

করোনার সংকটকালে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ডসহ মহানগরীর বিভিন্ন মহল্লায় দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ৬ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে টিম খোরশেদ-১৩ এর ত্রাণ বিতরণ টিম। সামর্থবান ব্যক্তি ও সংগঠনের সহযোগিতায় প্রতি ব্যাগে থাকছে চাল, ডাল, তেল, সেমাই, বুট, চিনি ও লবণ।

 

টিম খোরশেদ-১৩ এ প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার নাসিক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, সরকারি ত্রাণ, ওএমএস ও মানবিক সহায়তা ছাড়াও আমি সামর্থবান ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় সংকটকালে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে এই অয়োজন করেছি। আশা করছি জনগণ এতে উপকৃত হবে।


তিনি বলেন, টিম খোরশেদের ত্রাণ টিম সারাদিন ও রাতে সেহরি পর্যন্ত ঘরে ঘরে গিয়ে ঈদসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা সহায়তা করার ক্ষেত্রে দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই ওয়ার্ডে বসবাসরত অন্যান্য জেলার মানুষকেও আমরা সকল প্রকার সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছি, সাধারণত যা করা হয় না।

 

আমরা মনে করি আইডি কার্ড দেখে নয়, সহায়তা করা উচিত ব্যক্তির অবস্থার উপর নির্ভর করে। আমরা বিশ^াস করি কারো যদি সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে তাকে সাহায্য করতে হবে । মানবিক কারণে মানুষ হিসেবে, ভোটার হিসেবে নয়।


উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রথম করোনার প্রকোপ দেখা দেয়া গত ৯ মার্চ থেকে । এরপর থেকে নাসিক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ‘টিম খোরশেদ ১৩ ভিস কভিট ১৯ নামে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করে কাজ শুরু করেন। সংগঠনটি প্রত্যেক্ষ কার্যক্রমের দুই মাস ও করোনা সাসপেক্ট ও পজিটিভ মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করার ১ মাস পূর্ণ হয়েছে ৮ এপ্রিল। গত ২ মাসে টিম খোরশেদ নিন্ম লিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।


বাংলাদেশে প্রথম বারের মত মার্চ নারায়নগঞ্জে দুইজন করোনা পজিটিভ সনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যেক্ষভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ৯ মার্চ ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক  মহানগরীতে বিতরণ শুরু করে ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। টিম লিডার খোরশেদ  জুম্মার নামাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বক্তব্য রাখে।

 

স্যানিট্ইাজার ও লিকুইড সোপ তৈরি ও বিতরণ :
সচেতনামূলক কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু ঘটে। ফলে সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও করোনাভীতি ছড়িয়ে পরলে বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়ে যায়। সংকট সৃষ্টি হওয়ায় টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে।

 

২৮ মার্চ ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস তৈরি ও বিতরণ করে। এসময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মূলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে ৩ লাখ স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ করে।
 
করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন ও সৎকার : 
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে মৃতদেহের দাফন ও সৎকার নিয়ে অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আত্মীয় স্বজন,বন্দু, প্রতিবেশীরা,এমনকি পরিবারের লোকজনও যখন মৃতদেহ সৎকার ও দাফনে অনীহা জানাতে শুরু করে তখন ৩০ মার্চ  নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে তারা করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ গোসল, জানাযা, দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।

 

৭ এপ্রিল টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন জানান। ৮  এপ্রিল প্রথম করোনা সাসপেক্ট আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত ৪৮ জনকে দাফন ও সৎকার করেন। এর মধ্যে ১৬ জন কভিড পজিটিভ, ২১ জন সাসপেক্ট ও ৭ জন ছিল স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারী মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করে।

 

টেলি মেডিসিন সেবা
আজ ১৪ মে টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর যৌথ উদ্যোগে করোনার শুরুতে চালু হওয়া “টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন” সেবার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ৫ জন মানবিক চিকিৎসক কে নিয়ে শুরু হওয়া টিমের এখন সদস্য সংখ্যা এখন ১০ জন। গত ৩০ দিন মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে প্রায় ৬৫১৯ জন কে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।


মানবিক চিকিৎসকগণ হটলাইনের কল ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ২১৫ থেকে ২৫০ জন তাদের সেবা গ্রহণ করে থাকে। ১৩ মে পর্যন্ত ৩০ দিনে ৬ হাজার ৫১৯ জনকে সেবা দিয়েছে টিম খোরশেদের মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ। নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলার বাইরে থেকেও অনেক ফোন আসে ও সেবা দান করা হয়। টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ জানায় আপাতত জুন মাসের শেষ পর্যন্ত টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

তবে প্রয়োজন হলে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হবে। টেলিমেডিসিন সেবায় বিনা পারশ্রমিকে স্বেচ্ছা শ্রম দিচ্ছেন মানবিক চিকিৎসক ডা. ফারজানা ইয়াসমি স্নিগ্ধা, ডা.পঞ্চমী গোস্বমী, ডা.ফরহাদ জেনিথ, ডা.আরিফুল আলম, ডা.খাদিজা রহমান, ডা.তাসকিয়া আজিজ, ডা.মাহফুজ, ডা.গাজী মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ। এক মাসপূর্তি উপলক্ষে নতুন যোগ দিয়েছেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ও দেশের উদিয়মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মোহাম্মদ ইকবাল ও ডেন্টাল সার্জন ডা. তাবাসসুম ফেরদৌসী।


হটলাইন ম্যানেজমেন্ট ও সমন্বয়ের দায়িত্বে আশরাফুজ্জামান হিরা, ডক্টরস টিম লিডার ডা.ফরহাদ জেনিথ,সহ- সমন্বয়কারী আরাফাত  নয়ন খান বাবু।
টিম খোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারি ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভ এর এডমিন প্যানেলের সদস্য কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর মুখপাত্র আহমেদ জিদান বলেন, আমরা আমাদের মানবিক চিকিৎসকদের প্রতি নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও স্যালুট জানাই।

 

তাদের নিরলস চেষ্ঠায় কয়েক হাজার মানুষ,বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা ও বয়স্ক মানুষ ডায়েবেটিকসসহ অন্যান্য রোগে সেবা পেয়েছে। করোনা ভীতি দূর করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন টিমের ভূমিকা প্রশংসীয়।


বিনামূল্যে সবজী বিতরণ :
বিভিন্ন জেলা থেকে কম মূল্যে সবজি কিনে এনে মহানগরবাসীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ১০ই মে থেকে শুরু ১৯ মে পর্যন্ত ৮ হ৯াজার পরিবারের মধ্যে ১০৫ মন সবজি বিতরণ করা হয়েছে।

 

ভর্তুকি মূল্যে ঈদসামগ্রী বিক্রি :
মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক অবস্থান রক্ষা করে সহযোগিতা ও তাদের জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার জন্য টিম খোরশেদ-১৩ ও টাইম টু গিভ যৌথ উদ্যেগে পরীক্ষামূলকভাবে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি চালুৃ করেছে।  ১৫ অর্থাৎ ২১ রমজান থেকে শুরু করে ২৮ শে রমজান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী ভতুর্কি মূল্যে বিক্রয় করা হবে। ১ হাজার ৭০০ প্যাকেটে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন দুটি। ভতুর্কির অর্থ সংগঠনের সদস্যরা বহন করবে।


বাজার মূল্যের ৬৪১ টাকার পণ্য ৪৬০ টাকায় প্রদান করা হবে। প্রতিটি গ্রাহক ১৮১ টাকা ভর্তুকি পাবেন। প্যাকেজে ২ কেজি পোলাও চাল, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ২০০ গ্রাম ফ্রেস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার,  ১০ টি ডিম, ১ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ২ প্যাকেট কুলসুন টিকন সেমাই থাকবে।
আগ্রহী গ্রাহকরা হট লাইন ০১৭৮০-৩৪৪৮৪২ নম্বরে ফোন করে অর্ডার করলে পরবর্তী ২৪ বা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে।

 

গ্রাহক তার খাদ্যসমাগ্রীর প্যাকেট হাতে পেয়ে ডেলিভারিম্যানকে ৪৬০ টাকা প্রদান করবে। তবে প্রাথমিকভাবে এ সুযোগ শুধুমাত্র ১৩ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারীরা পাবেন। ঈদের পরেও যদি করোনা বা খাদ্য সংকট অব্যাহত থাকে তবে আশেপাশের অন্যান্য এলাকার জন্যও এই প্যাকেজ চালু করা হবে।  কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও টাইম টু গিভের মূখপাত্র আহমেদ জিদান ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় প্রকল্প সম্পর্কে জানান, আমরা করোনার শুরু থেকেই যৌথ উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ, টেলিমেডিসিন সেবা, করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন ও সৎকার এবং দুঃস্থ মানুষের মাঝে সবজি ও খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ করছি।

 

দুস্থ মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তকে তাদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে সহায়তা প্রদানের জন্য নগদ টাকায় বাজার থেকে উন্নতমানের মালামাল ক্রয় করে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিক্রয় প্রকল্প টি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেছি। ২৮ রমজান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেটে আমরা ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভতুর্কির অর্থ আমাদের সদস্যরা বহন করবে।

 

ভর্তুকি মূল্যে ডিম বিক্রি 
ঈদের পর থেকে দরিদ্র মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ভর্তুকি  দিয়ে ৩ টাকা পিস অর্থ্যাৎ ১২ টাকা হালি ডিম দেয়া হবে।


 
সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ 
সরকারি ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং সংগঠনের সহায়তায় ওয়ার্ডবাসীকে দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ত্রাণ বিতরণ টিম। ইতিমধ্যে ত্রাণ বিতরণ টিমের ভ্যান চালক সোনা মিয়া (৫৫) করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

টিম লিডারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ :
টিমখোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারি ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভ এর এডমিন প্যানেলের সদস্য মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জনের একটি টিম গত দুই মাস যাবত করোনা মোকাবেলায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।

 

মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ গত দুই মাসে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার জন্য টিমের সকল সদস্য, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম, শুভাকাংক্ষী ও নাসিক ও নাসিক মেয়র,আইডিয়া পার্টনার টাইম টু গিভ এর নিরাপত্তাসামগ্রী প্রদান করায় ইপিলিয়ন ফাউন্ডেশন, মডেল ডি ক্যাপিটাল, নারায়নগণঞ্জ এসোশিয়েশেন অউত্তর আমেরিকা ইনক, ফকির ফ্যাশন লি., ইউ ক্যান, রোটারি পরিবার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, এড. তৈমূর আলম খন্দকার এবং টিম খোরশেদের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে “বীরবাহাদুর উপাধি” ঘোষণা করায় সদরের সাংসদ সেলিম ওসমান এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সমালোচনাকারীদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, যত বাধা আসুক না কেন সদবলে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের করোনা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যহত থাকবে ইনশাল্লাহ।


 

এই বিভাগের আরো খবর