বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

৩০০ শয্যা হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২০  

নুরুল ইসলাম : থমকে আছে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। এ কাজে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। অপারেশন থিয়েটার স্থানান্তরের জন্য বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ। 

 

ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠন ঢাকার ঢালী কনস্ট্রকশনের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শাহজালাল জানান, ৮৬০ পাইল এর মধ্যে ৬৪৭টি পাইল দাবানো হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার অন্যত্র না নেয়া পর্যন্ত বাকি পাইল দাবানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। পি ডাব্লিউ ডি এই অপারেশন থিয়েটার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। তাই কাজ একটু ডিমেতালে চলছে।

 

তিনি আরও জানান, এই কাজের মেয়াদকাল ২৪ মাস। ইতিমধ্যেই আঠার মাস পার হয়েছে। এই কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢালী কনস্ট্রাকশন দ্রুত কাজ শেষ করতে না পারলে বাড়তি ব্যয় আমাদেরই বহন করতে হবে। 

 

এ কাজের যে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তা থেকে নতুন করে আর বরাদ্ধ দেবে না সরকার। তাই আগামী দিনগুলিতে এই কাজের জন্য যে অতিরিক্ত ব্যয় হবে তা এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই দিতে বহন করতে হবে। ২০১৮ জুন মাসে এ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ঢালী কনস্ট্রকশন এই কাজ পাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করে।

 

এদিকে, পাইল বসানোর জন্য যে বিশাল হাইড্রোলিক ক্রেন আনা হয়েছিল তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও পাইল বসানো বাকী কিন্তু কেন ক্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মো. শাহজালাল জানান, ক্রেনের অনেক ভাড়া। তাই ক্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পি ডাব্লিউ ডি এই অপারেশন থিয়েটার ভেঙ্গে দিলে আবার ক্রেন আনা হবে। এর পূর্বে নকশা পরিবর্তনের কারণে কাজ বন্ধ ছিল। এতেকরে পাইল বসাতেও দেরি হয়েছে। আন্ডার গ্রাউন্ড রোগীদের চলাচলের সিড়িসহ অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে  নকশায়। পূর্বের নকশায় আন্ডার গ্রাউন্ড ছিল না। রোগীর চলাচলের সিড়িসহ ডাক্তার কক্ষেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

 

৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ  শেষ হলে চিকিৎসা সেবায় আমুল পরিবর্তনের আশা জেগেছে নগরবাসীর মধ্যে।৫০০শয্যার কাজ শেষ হলে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা যে সেবা ও সুবিধা পেয়ে থাকেন সব ধরনেরই ব্যাবস্থা থাকবে এ হাসপাতালে। 

 

এইচডিইউ বিভাগসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রশিক্ষিত নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত থাকবে এই হাসপাতাল এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে।

 

এখানে ২০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। থাকবে আধুনিক আইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ, বার্ন ইউনিট, শিশু, মেডিসিন, সার্জারিসহ হাড়ভাঙ্গা জোড়া বিভাগ ও একটি আধুনিক ক্যান্টিন। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ নিয়োগ পাবে অধ্যাপক ও বিষেশজ্ঞ সার্জন।

 

এদিকে, যেভাবে হাসপাতালটিতে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সেভাবে সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। হাসপাতালটি ৩০০ শয্যায় উন্নতি হলেও বৃদ্ধি পায়নি চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ২০০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। জানাগেছে, চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকার কথা সাড়ে ৩০০, কিন্তু বর্তমানে তার চেয়েও অনেক কম জনবল নিয়ে চলতে হচ্ছে। এছাড়াও অকেজো হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি।

 

জাপান অনুদানে স্থাপিত, জাপান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি নিদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই হাসপাতালের। এরপর নারায়ণগঞ্জসহ আশেপাশের জেলার রোগী এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত ছিল এই হাসপাতাল। চিকিৎসার মানও ছিল ভাল। তাই অল্প সময় সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এই হাসপাতালের।  

 

দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এই হাসপাতালে। বর্তমানে বহিঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। শয্যা সংখ্যা কম থাকায় রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিতে অনেক সময় বিড়ম্বনার শিকার হয় রোগীরা। তাই এই অবস্থায় ৩০০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যার কাজ শেষ হলে এই জেলাসহ আশেপাশের জেলার মানুষ অধিকতর চিকিৎসা সেবা পাবে এমনটাই জানাগেছে রোগীদের কাছ থেকে।

 

সূত্রমতে, ৭ একর জমির উপর এই হাসপাতাল নির্মাণের পর ১৯৮৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ উদ্বোধন করেন। তখন হাসপাতালটির শয্যা ছিল ২০। এরপর ২০১৩ সালে এই হাসপাতালটি আরও ১০০ শয্যা বাড়ানো হয়। পরবর্তিতে ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম এই হাসপাতালে এসে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০০ শয্যা করার কাজ শুরু হয়।


তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি যেহেতু এই জেলায় কোন মেডিকেল কলেজ নেই তাই এই হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজ করা হলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ ডাক্তার তৈরি হতো। এছাড়া প্রতিদিন মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা বর্তমানের এই ধরনের রোগীর এখানে চিকিৎসা মিলেনা এমন অভিযোগের শেষ নেই। তাই এই হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ করার প্রাণের দাবি এই জেলাবাসীর। 

এই বিভাগের আরো খবর