শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

৩’শ শয্যা হাসপাতালে থামানো যাচ্ছে না মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯  

 স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নগরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। সকাল ৮ টা বাজলেই টিকেট কাউন্টারে শুরু হয় ভীড়ের। এরপর প্রত্যেক ডাক্তারের কক্ষের সামনে রোগীদের অপেক্ষা। অন্যদিকে বাড়তে থাকে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের ভীড়ও। 


হাসপাতালে ডাক্তার কক্ষের সামনে  রোগীদের সিরিয়ালের পাশেই জোটবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে তারা। তাদের একটাই লক্ষ্যে ‘রোগী আর তা প্রেসক্রিপশন’। ডাক্তারের কক্ষ হতে যে রোগীই বের হচ্ছে তারই প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলছে। 


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ হাসপাতালে রবিবার ও বুধবার সপ্তাহে ২দিন আসতে পারবে। তাদের আসার সময় দুপুর ১ টার পর থেকে ডাক্তার থাকা সময়কালীন সময় পর্যন্ত। তবে কথায় আছে না চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী।


নিয়মকে বৃদ্ধাআঙ্গুলী দেখিয়ে সপ্তাহে ৬ দিনই সকাল ৯টা থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে তাদের দেখা মেলে । রোগীদের ডাক্তারগণ রোগ নিরাময়ের জন্য রোগীর হাতের ঔষধের একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে দেন। ডাক্তারেরে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীরা ঔষধ ক্রয় করে থাকেন। তবে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে একই রোগের ঔষধ তৈরী করা হয়। 


ঔষধ কোম্পািনর ঔষধের গুনাগুন ডাক্তারদের কাছে যারা তুলে ধরেন তারাই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ। রোগীদের কাছে তাদের ঔষধটি পৌছে দেওয়ার জন্য তারা দায়িত্ব পালন  করেন।


ঔষধের গুনাগুন তুলে ধরার পরিবর্তে খানপুর হাসপাতালে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের চলছে এক ভিন্ন গল্প। তারা ডাক্তারদের সাথে শেষ সময়ে দেখা করলেও সময়ের পূর্বে এসে ডাক্তারের কক্ষের সামনের রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নেন। 


ডাক্তারগণ রোগীকে কি চিকিৎসা ও কি ঔষধ দিচ্ছে সেটা সংগ্রহ করছে তারা। রোগীদের রোগের সকল ব্যাক্তিগত তথ্য তাদের হাতের মুঠোয়। রোগীদের রোগ দেখে ডাক্তারকে তাদের কোম্পনির ঔষধ দিতে বলে। নিজেদের ঔষধ বিক্রির জন্য অসুস্থ্য রোগীদের বিরক্ত করে।

রোগী যখন রোগ নির্নয় পরীক্ষার জন্য অন্য কক্ষের উদ্দেশ্যে ছুটে, রোগীকে আটকিয়ে  প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখা হয়। আরো কয়েকমাস পূর্বে হাসপাতালে এই জন্য নোটিশ লাগানো হলেও তাদের কোন পাত্তা নেই। কোন অদৃশ্য শাক্তির জোরে তারা তাদের মতো কাজ চালিয়েই যাচ্ছে।    

  
মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে বহি.বিভাগের সামনে মটর সাইকেলের মেলা ও  সেই সাথে চলছে তাদের আড্ডাবাজি। বহি.বিভাগের ভিতরেও একই দৃশ্য। হাসপাতালে গাইনীবিভাগের ডা. জাহাঙ্গীর আলমের কক্ষের বাহিরে একদল রিপ্রেজেন্টিভ। রোগীদের সিরিয়ালে দাড়ানোর জায়গায় তারা দল বেধে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। 


প্রচন্ড গরমে রোগীদের অবস্থা যেখানে নাজেহাল সেখানে তারা ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হতেই তাকে একসাথে কয়েকজন রিপ্রেজেন্টিভ আটকে ধরে। আর প্রেসক্রিপশনের ছবি নিয়েই তাকে সামনে এগুতে দেয়। কোন রোগী না বললে তাকে পাল্টা বলছে,‘ছবিই তুলব নিয়া যাবো না’।


গাইনী রোগের ডাক্তার দেখিয়ে বের হয়েছেন বন্দরের বাসিন্দা মো. মিজান ও তার স্ত্রী রোমানা আক্তার। তার কাছে রিপ্রেজেন্টিভরা প্রেসক্রিপশন চাইতেই তিনি ছবি তুলতে সম্মতি দেন না। তার সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর কি সমস্যা সেটাপ তারা কেন দেখবে। রোগের বিষয়গুলো মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। এগুলোর ছবি তোলা মোটেও ঠিক না। হাসপাতালের মানুষ তাদের কে কিছু বলে না কেন?


হাসপাতালের নিজের চোখের সমস্যা দেখিয়েছেন মাসদাইরের বাসিন্দা দিপা রানী সরকার। তিনি বলেন, ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সবাই মিলে ধরছে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলব। চাইছে পরে দিয়া দিছি। কিন্তু এটা কোন ধরনের কাজ। আমার তাড়াহুড়ো আছে আর তারা এসে ছবি তুলতেছে।

 

আমি তো প্রথম ভাবছি হাসপাতালের লোক, এখন বুঝলাম তারা বাহিরের। হাসপাতালের এনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের কয়েকবার প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে না করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন কিছুই মানে না। কয়েকজনের ডাক্তারদের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে। ইচ্ছামতো ডাক্তারের রুমে যায় আসে । নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে।


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু জাহের এই বিষয়ে বলেন, হাসপাতালে নোটিশ দিয়ে তাদেরকে সংযত হতে বলা হয়েছে। এছাড়া আমিও ইতিমধ্যে কয়েকবারমেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের  রোগীদের প্রেস ক্রিপশনের ছবি তুলতে দেখছি, তাদেরকে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছি এর পরে এমন দেখলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিবো।
 

এই বিভাগের আরো খবর