বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

১৪ বছরেও হয়নি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার : এক যুগেরও বেশি সময় ধরে হয়নি কার্যকরী কমিটির কোন সভা। কমিটির ৬৭জন সদস্যের মধ্যে ৯জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। অল্প কিছু সদস্যের মধ্যে মাঝে মধ্যে গোটা কয়েকজনের দেখা হয়। আর অন্য সদস্যদের সাথে কারো কোন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। 

 

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন কমিটি হওয়ার কথা শোনা গেলেও জিকে শামীম, সম্রাট ও বুয়েটে ছাত্রলীগের কাণ্ডে পিছিয়ে যাচ্ছে থানা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটি।তৃণমূলের দাবি থাকা সত্বেও কমিটির সম্মেলন হওয়ার আলোটি ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এই আলোচিত কমিটিই হলো ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি।


আদৌ এই কমিটি হবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা। কেউ কেউ বলছেন, যদিও কাউন্সিল হয় তবে একটি পকেট কমিটি হবে। কমিটি না হওয়ার অনিশ্চয়তায় অনেকে খুশি হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির একটি পক্ষ। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে থানা কমিটির সম্মেলন বা কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে কোন উচ্চ বাচ্য নেই। এতে দলের মধ্যে চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়ে পড়ার আশংকা করছে অনেকে। 


সর্বশেষ ২০০৪ সালে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গঠন করা হয়েছিল ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি। দুই বছর অন্তর কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। থানা কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার করতে এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে কমিটি হওয়ার ব্যাপারে কারো কারো সাপে বর হয়েছে। কমিটির  মোট সদস্যের মধ্যে ইতিমধ্যে ৯জন মৃত্যু বরণ করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই কমিটির কোন সভাও হয়নি।

 
তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর একটি মাত্র সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত আগস্ট মাসে। সেই সভায় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ শুরু হয়।  কয়েকটি ওয়ার্ডে এ নিয়ে মতবিরোধও দেখা দেয় বলে দাবি করেছেন কয়েকটি সূত্র। কাউন্সিলে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে অনেকে নিজের পছন্দ মতো লোকজনকে সদস্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠে। 


অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও তার আর শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কি-না এমন আশংকা করছে তৃণমূল। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। সেই কাউন্সিল নিয়ে কয়েকদিন পরেই শুরু হবে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা এলাকায় কাউন্সিল বিষয়ে প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির মাঝেই হারিয়ে যাবে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। এমনটিই অনেক নেতৃবৃন্দ চাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন হেভি ওয়েট নেতৃবৃন্দ।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, সাংসদ শামীম ওসমানকে নেতৃবৃন্দ ভালবাসেন। তার ভালবাসার কারণেই কোন কর্মী কোন উচ্চবাচ্য করে না। তা-না হলে বিগত দিনে ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক বিদ্রোহ হতো।

 
বর্তমান সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল ও সাধারণ সম্পাদকের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারই ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এবারও যাতে কাউন্সিল না হয় সেজন্য একটি পক্ষ নানা কৌশল অবলম্বন করছে। যদি কাউন্সিল না হয়, যদি নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসে তাহলে ফতুল্লায় আওয়ামী লীগ গোপনে অপমৃত্যু হবে।


তিনি আরও বলেন, ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মী নিজ দল ক্ষমতায় থাকার পরও কোন রকম সুযোগ সুবিধা পায়নি। এমনকি মুল কর্মীরা কিছু দাবিও করেনি। তবে ফতুল্লায় হাইব্রিডরা দলের হেভিওয়েট নেতাদের সাথে মিশে যে আখের গুছিয়ে নিয়েছে তা সবার জানা। 


থানা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, ফতুল্লা থানা নেতৃবৃন্দ কখনোই সাংসদ শামীম ওসমানের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কথা বলেন না। তিনি ভুল সিদ্ধান্ত দিলেও সবাই মেনে নেয়। তিনি গুটি কয়েক নেতৃবৃন্দ ছাড়া কারো কথার তেমন কোন গুরত্বও দেয় না। কাউন্সিলে এবারও তার মনের মতো ব্যাক্তিই মূল পদগুলোতে থাকবেন।  ওয়ার্ড কমিটিগুলো হওয়ার পর হবে ইউনিয়ন কমিটি। এরপর থানা কমিটি হওয়ার কথা। কমিটি হবে, কিন্তু তা হবে পকেট কমিটি। 


এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিত সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ প্রতিটি ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর ইউনিয়ন কমিটি হবে। এরপরই মূলত কাউন্সিল বা সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের নেতা সাংসদ শামীমও কাউন্সিল হওয়ার পক্ষে। তার নির্দেশ অনুযায়ী থানা কমিটি গঠন করা হবে।


এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক বিএম শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, কাউন্সিল একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, এরপর থানা কমিটি। বল্লেইতো আর হুট করে কাউন্সিল বা সম্মেলন করা যায় না। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে এরপর মূল কমিটি গঠন করা হবে। সাইফউল্লাহ বাদল ভাই ও শওকত আলী ভাইয়ের মাধ্যমেই ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি হওয়ার পর সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশনায় আশা করি কাউন্সিল হবে।


ফতুল্লার  বিভিন্ন ওয়ার্ড  ও থানা কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হুট করে ওয়ার্ড আর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা যায় না। অনেক যাচাই বাছাই করে সদস্য করতে হবে। ওয়ার্ড আর ইউনিয়ন থেকে যে সদস্যদের তালিকা দেয়া হবে তা থানা সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল সাহেব ও আমি যাচাই বাছাই করে সদস্য করবো। ঐ কমিটিগুলো হওয়ার পরই যে কোন মূল্যে কাউন্সিল হবে। আমাদের সাংসদ শামীম ওসমানও থানা সভাপতিও এব্যাপারে একমত। পকেট কমিটি বলতে কোন কমিটি হবে না। 

এই বিভাগের আরো খবর