বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘১২ হাজার পরিবারের লিস্ট করছি, ত্রাণ আসছে ১৫০০ পরিবারের’

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘ আমাগো কাছ থাইকা ভোটার কার্ডের ফটোকপি নিছে কিন্তু আমাগো এহন পর্যন্ত কোনো খাওন দেয় নাই।  চাইতে গেছি কয় নাই শেষ হইয়া গেছে। আমরা এহন কই যামু। আমাগো সরকারের কাছে প্রার্থনা আমরা বাঁচার মতন বাঁচতে চাই। নেতাকর্মীরা সব খাইয়া লায়। খাওন না দিলে আমরা এ লকডাউন মানি না। ’

 

বুধবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাশীপুর ছোট আমবাগান এলাকায় ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী।
বিক্ষোভরত এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন যাবৎ এ এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। করোনায় পুরো শহর লকডাউন করায় কর্মহীন দিনমজুর মানুষেরা গত তিনদিন যাবৎ ঘরবন্দী জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে স্থানীয় মেম্বার ও জনপ্রতিনিধিদের নাম করে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়া হয়েছে ত্রাণ দেয়া হবে বলে। বুধবার সকালে সেটি ফিরিয়ে দেয়া হলেও ত্রাণ দেয়া হয়নি। তাই এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

 

কাশিপুর এলাকার বাসেদ মোল্লা জানান, কাজ না থাকায় কোনো আয়ও নাই  ঘরে খাবারও নেই। সরকার তো বলছে আমাগো ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছায় দিব। মেম্বার চেয়ারম্যানরা ভোটার লিস্টও নিয়া গেছে কিন্তু আমাগো কাছে তো খাবার পৌঁছায় দেয় নাই। এমনকি একটা খবর নেয় নাই যে আমরা বাঁইচা আছি নাকি মইরা গেছি। আবার আমাগো বাসার আটকাইয়া রাখছে।

 

কাশিপুর ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা রিকশা চালক  নুরু মিয়া জানান, এ মানুষগুলো এখন কোথায় যাব? আমাদের কি কেউ নাই?  আমরা দিন আনি দিন খাই । ঘর থাইকা বাইর হওয়া বন্ধ কইরা দিছে। বাইর হইলেই পিডায়। আমাগো খাওন কে দিব?

 

অন্যদিকে  সত্তরার্ধ্ব এক বৃদ্ধা জানান, আমার স্বামী নাই সন্তান নাই আমাওে কে দিব। ওরা তো যা পায় ওরাই লইয়া জায়গা আমাগো তো দিত না। সরকাররে কোনো আমাগো জইন্য খাওন পাঠাইতো।

 

কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এই ইউনিয়নের   প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৭৫ হাজার ভোটার রয়েছে।  এই এলাকার দুই তৃতীয়াংশ মানুষই শ্রমিক ও দিনমজুর শ্রেণীর লোক। করোনা পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের এই এলাকার ১২ হাজার দরিদ্র পরিবারের তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু ত্রাণ এসেছে মাত্র এক হাজার দশ পরিবারের। বাকিদের জন্য আদৌ কোনো ব্যবস্থা আছে কি না এ ব্যাপারেও কিছু বলতে পারছে না স্থানীয় চেয়ারম্যান।
তবে  জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৭ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে ৭৫ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা ও নগদ ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ। এরপর কয়েক দফায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে এ পর্যন্ত ২৭ লাখ টাকা ও ৬০০ মেট্রিক টন চাল উপবরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে ৩ হাজার ৩৭৭ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা এবং চেকের মাধ্যমে ২১ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে জেলা প্রশাসন।

 

এমনকি জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দীন বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল গরীব-দুঃস্থ পরিবারগুলোকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে ত্রাণ বরাদ্দ কম এসেছে জানিয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. বাহাউদ্দিন জানান, ১২ হাজার পরিবারের লিস্ট করছি, ত্রাণ আসছে ১৫০০ পরিবারের।  আগামী শুক্র শনিবারের মধ্যে আরো ৫০০ মতো পামু। ওগুলা তখন আমরা দিয়া দিব। আমরা এমন করেই পাচ্ছি তাই এরকম করেই দিচ্ছি। এখন সরকার যদি এভাবে দেয়  আপনি বলেন এখন আমরা কি করবো?

 

কেউ বাদ পড়বে না জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল জানান, আমরা যে তালিকা তৈরী কওে দিয়েছি সে অনুযায়ী খাবার খুব কম আসছে। বিষয়টি আমরা জানিয়েছি। তারা শীঘ্রই পাঠাবে বলে আমাদের জানিয়েছে।  একটা কথা শুধু বলতে পারি কেউ বাদ পড়বে না।
 

এই বিভাগের আরো খবর