শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হৃদরোগীর দুই শিশু সন্তান জমানো টাকা দান করলো ত্রাণ তহবিলে 

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : বাবার পনের বছর ধরে হৃদরোগ। তার চিকিৎসা করাতে করাতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। আর্থিক সামর্থ না থাকায় ব্যায়বহুল চিকিৎসা বাদ দিয়ে দিয়েছে পরিবার। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত মানুষের অবস্থা টিভিতে দেখে মন কেঁদে উঠলো এই পরিবারেরই দুই শিশু-কিশোরের। 

 

ঈদের জামা কাপড় কেনার জন্য জমানো টাকা দান করে দিতে চাইলো জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে। মাকে বুঝালো ‘মা আমরা খারাপ আছি। কিন্তু রাস্তার খেটে খাওয়া মানুষের চেয়ে তো ভালো আছি।’ মা-ও তাদের আর বাঁধা দিলেন না। 

 

রোববার (৩ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সেলিম রেজার কাছে এই দুই শিশু-কিশোর তাদের জমানো আট হাজার টাকা হস্তান্তর করে।

 

এ দুই কিশোর হলো- নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ রুদ্র ও তার বোন আমলাপাড়া আদর্শ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা আহমেদ সীমা। 

 

রুদ্র আর সীমা জানায়, তাদের বাবা প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে তাদের পাঁচ-দশ টাকা দেয়। এছাড়া সীমা সরকারের উপবৃত্তির টাকা পায়। তারা দুই ভাই-বোনই এ টাকা একটি মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখে। 

 

তাদের মা রুবি পারভীন জানান, ছেলে-মেয়েরা তাদের ইচ্ছার কথা জানালে তিনি টাকা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে এসএমএস দেন। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনও তাদের ফিরতি এসএমএস দিয়ে উৎসাহিত করে। রোববার দুপুর দুইটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে বলে। নির্ধারিত সময়ে তারা গিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজার কাছে এ টাকা জমা দিয়ে আসেন।

 

তিনি আরও জানান, ছেলে মেয়েদের এ চিন্তা তাকে অভিভূত করেছে। গর্বে তার বুক ভরে গেছে যে, তার ছেলে মেয়েরা এ বয়সেই এভাবে চিন্তা করতে শিখেছে। 

 

রুবি পারভীন জানান, তার স্বামীর ১৫ বছর ধরে হৃদরোগ। চিকিৎসা করাতে করাতে তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তারপরেও ছেলে মেয়েরা ভালো কাজটি করতে চাইলে তিনি বাধা দেননি। তিনি সবার কাছে তার স্বামী ও সন্তানদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।  

 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা জানান, তাদের টাকা গ্রহণ করে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে যোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিশু বয়সেই দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবার যে মানষিতা এটি নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। আমরা সবাই যদি তাদের মতো ভাবি তাহলে এদেশের কোনো লোক না খেয়ে থাকবেনা। আমি এই দুই ভাইবোনকে অনেক অনেক দোয়া রাইলো। 


রুদ্র ও সীমার বাবার নাম ফারুক আহমেদ। তিনি মডার্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিং ম্যানেজার। নগরীর জামতলা শাহীন ডাক্তারের গলির সুফিয়া ভিলার বাসিন্দা তারা।

এই বিভাগের আরো খবর